কাটাখালীতে অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগে বাসিন্দারা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২; সময়: ৮:৩০ অপরাহ্ণ |
কাটাখালীতে অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগে বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবর্জনার দুর্গন্ধে ঘরে টেকা দায় বাসিন্দাদের। বসতবাড়ির পাশে এ বর্জ্য ফেলছে কাটাকালী পৌর কর্তৃপক্ষ। গত রোববার পৌরসভার হাজরাপুকুর মহল্লায় আবর্জনার দুর্গন্ধে ঘরে টেকা দায় বাসিন্দাদের। বসতবাড়ির পাশে এ বর্জ্য ফেলছে কাটাকালী পৌর কর্তৃপক্ষ। গত রোববার পৌরসভার হাজরাপুকুর মহল্লায়ছবি।

মানুষের বাড়ি থেকে ময়লা–আবর্জনা নেওয়ার দায়িত্ব পালন করে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর উল্টো কাজ হচ্ছে রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভায়। পৌর কর্তৃপক্ষ মানুষের ঘরের দুয়ারে বর্জ্য ফেলার ভাগাড় করেছে। বাসিন্দাদের অনেকে এখন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও খাবার মুখে তুলতে পারছেন না। পরিবেশ সম্মতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর।

কাটাখালী পৌরসভার ভাগাড়টি করা হয়েছে পৌর এলাকার হাজরাপুকুর মহল্লার ভেতরে। ভাগাড়টির তিন পাশে বাড়ি আর এক পাশে চলাচলের রাস্তা। বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষেই এ ভাগাড় করা হয়েছে। কাক-কুকুর এ বর্জ্য মুখে নিয়ে মানুষের বাড়ির ভেতরে, ঘরের দুয়ার ও ছাদের ওপরে ফেলছে।

গত রোববার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাগাড়ের উত্তর পাশের সীমানা ঘেঁষে জহুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বাড়ি। তাঁর স্ত্রী রোজিফা বেগম বলেন, তাঁরা ১০ বছর আগে বাড়ি করেছেন। আর গত বছর জানুয়ারি মাসে এখানে ভাগাড় করা হয়েছে। সে সময় তাঁরা আপত্তি করেছিলেন। তখন মেয়র বলেছিলেন, জায়গাটি চারপাশ থেকে ঘিরে রেখে যন্ত্র দিয়ে বর্জ্যকে সারে পরিণত করা হবে। তখন কোনো দুর্গন্ধ থাকবে না।

রোজিফা বেগম বলেন, এখন একপশলা বৃষ্টি হলেই ভাগাড়ের বর্জ্য পানিতে ভেসে বাড়ির ফটকের সামনে চলে আসে। বাড়ির সামনের জমিটা নিচু হওয়ায় বর্ষার তিন-চার মাস জলাবদ্ধ থাকে। তখন সে পানিতে ভাগাড়ের বর্জ্য ভাসে।

বাড়িটির আরেক বাসিন্দা রাজু আহাম্মেদ বলেন, পৌরসভার গাড়ি এসে ভাগাড়ে মরা কুকুর-বিড়াল ফেলে যায়। তখন কোনো উপায় না দেখে নিজেদেরই মাটি খুঁড়ে তা পুঁতে ফেলতে হয়। আবার এখানকার বর্জ্য খেয়ে কাক–কুকুর মারাও যাচ্ছে। এ নিয়ে তাঁরা খুব অস্বস্তিতে আছেন।

রাজু আহাম্মেদ বলেন, মেয়র জেলে যাওয়ার আগে মাঝেমধ্যেই ফেসবুকে লাইভ অনুষ্ঠান করতেন। তখন ভাগাড়ের সমস্যার ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। জবাবে মেয়র বলেছিলেন, ওটা মাত্র কয়েকজন মানুষের সমস্যা।

ভাগাড়টির উত্তরে মলিনা বেগমের বাড়ি। তিনি বলেন, মরা কুকুরের বাচ্চা, জবাই করা গরুর বর্জ্য কাক এসব ঠোঁটে নিয়ে উড়তে গেলে প্রায়ই বাড়ির মধ্যে পড়ে যায়। একটু বাতাস উঠলে এমন দুর্গন্ধ ছড়ায় যে বাড়িতে দাঁড়ানো যায় না। ভাগাড়ের দক্ষিণ পাশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বাসা। তাঁর বাড়ির আঙিনায় দেখা গেল মুরগির বর্জ্য পড়ে আছে। কাক ভাগাড় থেকে নিয়ে গাছে বসে খাওয়ার সময় তা বাড়ির আঙিনায় পড়েছে।

এ মহল্লায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার আবদুল মান্নানের বাড়ি। তিনি এসে বললেন, কাক-কুকুর তাঁদের বাড়িকেও ভাগাড় বানিয়ে ফেলেছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়িতে থাকা তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই ভাগাড় করার সময়েই তাঁরা আপত্তি করেছেন। কিন্তু মেয়র কথা শোনেননি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে তাঁরা ভাগাড়টি পরিদর্শন করেছেন। গত ২৫ জানুয়ারি পৌর কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠিও দিয়েছেন। চিঠিতে পরিবেশসম্মতভাবে পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বলা হয়েছে।

কাটাখালী পৌরসভার বর্তমান মেয়র আব্বাস আলী এখন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ার সাদাত বলেন, ভাগাড়টি করার সময় এলাকাবাসী কিছু বলেননি। এখন অসুবিধা হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভাগাড়ের বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে।

আনোয়ার সাদাত বলেন, পৌরসভার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। তবে বিশ্বব্যাংকের একটা প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের মধ্যে ডাম্পিং স্টেশনও আছে। সেখানে পৌর এলাকার সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলে সার তৈরি করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে