রাজশাহীতে বেড়েছে আলুর উৎপাদন ব্যয়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২০; সময়: ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে বেড়েছে আলুর উৎপাদন ব্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী অঞ্চলে আলু আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। এরই মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ৯০ শতাংশ (৬ ডিসেম্বর পর্যান্ত) আলু লাগানো শেষ হয়েছে। এ বছর আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বীজ আলুতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। চড়া দামে কিনতে হচ্ছে বীজ। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে অধিকাংশ চাষী জমি লিজ নিয়ে আলুর আবাদ করেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি দামে জমি লিজ নিতে হচ্ছে তাদের। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় আলু আবাদে উৎপাদন খরচ বাড়বে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী কৃষি অঞ্চল নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৭৯ মেট্রিক টন। এ অঞ্চলে গত বছর আলুচাষ হয়েছিলো ৫৮ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে। যেখানে উৎপাদন হয়েছিলো ১৩ লক্ষ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন। এবছর প্রায় ১ হাজার হেক্টর কম জমিতে আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

কিন্তু উৎপাদন লক্ষমাত্রা গত বছরের উৎপাদনের চেয়ে ১৮ হাজার ৫২১ মেট্রিকটন কম ধরা হয়েছে। তবে এ বছর আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেশি থাকায় শেষ পর্যন্ত আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমনটাই বলছে কৃষি অফিস। এছাড়া রাজশাহী জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যেখানে হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ২৬ টন। এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে আলুবীজের চাহিদা ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন।

রাজশাহীতে আলুবীজের যে চাহিদা এর অধিকাংশই কৃষক পর্যায়ে চাষীরা নিজেরাই বীজ আলু উৎপাদন করেন, পরবর্তী বছর চাষাবাদের জন্য। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু সংস্থা আলুবীজ উৎপাদন করেন। এতে আলু বীজের তেমন কোন সংকট হবে না-এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রাজশাহী অফিসের তথ্যমতে, বিএডিসি সারা বাংলাদেশে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজ উৎপদান করে। এবছর রাজশাহীর জন্য সরকারিভাবে আলু বীজের বরাদ্দ ১৩৩০ মেট্রিক টন। এসব বীজ ডিলারদের মাধ্যমে চাষিদের কাছে পৌঁছে যায়। আলু বীজের তিনটি গ্রেড আছে। এরমধ্যে ‘সি’ গ্রেড ৪৬ টাকা কেজি, ‘বি’ গ্রেড ৪৭ টাকা কেজি ও ‘এ’ গ্রেড আলু ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

চাষীরা বলছেন, এবছর আলুর দাম ভালো থাকায় অনেক নতুন চাষী আলুর আবাদ করছেন। আর এ বছর অন্যান্য বছরগুলোর চেয়ে আলু আবাদে খরচ বাড়বে। কেননা এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি দামে জমি লিজ নিতে হচ্ছে। বীজের দামও বেশি। এ বছর বাজারে আলুর দাম ভালো থাকায় কৃষক পর্যায়ে অনেকেই বীজ আলু খাওয়ার জন্য বিক্রি করেছেন। এর প্রভাবেই হয়তো বীজ আলুর দাম বেড়েছে। এছাড়া একটি সিন্ডিকেট চক্রও এর সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন চাষীরা।

রাজশাহীর পবা উপজেলার আলু চাষী উজ্জ্বল হোসেন জানান, এ বছর তিনি প্রায় ৫ বিঘা মতো জমিতে আলু চাষ করবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু এবছর দাম থাকায় অনেকেই আলু চাষে ঝুঁকেছে। তাই তিনি আড়াই বিঘা মতো এবার আলু চাষ করছেন। এ বছর তার নিজেরই বীজ আলু ছিলো। দাম ভালো পাওয়ায় তিনি অর্ধেক বীজ বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি ৫৮ টাকা কেজি দরে এই বীজ আলু বিক্রি করেছেন।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলু চাষি শফিকুল ইসলাম ছানা জানান, চলতি মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে ২২ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। ডিলারের কাছ থেকে বিএডিসির সরবরাহকৃত আল বীজ ক্রয় করা হয়েছে ৩ মেট্রিক টন। এসিআই কোম্পানির কাছে থেকে নেয়া হয়েছে ৬ মেট্রিকটন। তিনি আগে অর্ডার করার পরও বীজগুলো সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয়েছে তাকে। নতুন চাষীরা অনেকেই বীজ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।

বাঘা উপজেলার বিএডিসি ডিলারের উপজেলা প্রতিনিধি অধ্যক্ষ সামরুল হোসেন জানান, তার উপজেলার ১২ জন ডিলারের মধ্যে সবাই আলু বীজ পায়নি। বীজ সংগ্রহের জন্য ১ মাস আগে ডিলাররা টাকা জমা দিয়েছে। তারপরও বীজ সংগ্রহ করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বীজ সংকটে আশঙ্কা করছেন চাষিরা বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রাজশাহী অফিসের উপপরিচালক (বীজ) আব্দুর রহমান জানান, এ বছর আলু বীজের চাহিদা বেশি। তবে বীজের সংকট আছে কি না? এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, রাজশাহী অঞ্চলে এখন পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি আলু লাগানো শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আলু লাগানো শেষ হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক বড় কোনো ধরনের দুর্যোগের মধ্যে না পড়লে এবছর আলু আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এর চেয়ে উৎপাদন বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বীজের চাহিদা এ বছর বেশি থাকলেও বীজের কোনো সংকট হবে না। কেননা এখন সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে অনেকেই বীজ উৎপাদন করছেন। আর খরচের বিষয়টা একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে