নিথর দেহের ওপর সাংবাদিকের এ কেমন তাণ্ডব? (ভিডিওসহ)
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে। একটু আগেও যে দৌড়ে এসেছিলেন প্রতিবাদের টগবগে রক্ত শরীরে নিয়ে। সেই মানুষটা নিজের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ ঠেকাতে ডজন ডজন পুলিশের সামনে একটি লাঠি হাতে ছুটে এসেছিলেন। আর এতেই হয়ে যায় সর্বনাশ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুলিশ সদস্যদের উপর্যপুরি লাঠির আঘাতে মাটিতে পড়ে যান তিনি।
নিথর দেহ যখন পড়ে আছে মাটিতে, তখন সেই দেহের ওপর যেন রাজ্যের জমানো ক্ষোভ উগড়ে দিলেন এক ফটো সাংবাদিক। দূর থেকে দৌড়ে এসে শূন্যে লাফিয়ে উঠে মাটিতে নিথর দেহের বুকে আছড়ে পড়ছেন একের পর এক। তাতেও যেন তার ক্ষোভ মিটছে না। একটু পর আবার দূর থেকে দৌড়ে এসে সজোরে মারছেন ঘুষি। তাকে আটকাতে পারছেন না পুলিশ সদস্যরাও।
বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক এই দৃশ্য দেখা গেছে আসামের সিপাঝার এলাকায়। এই এলাকার কয়েক হাজার মুসলিম পরিবার যুগের পর যুগ ধরে সেখানে বসবাস করে এলেও রাজ্য সরকার তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে বিশাল শিব মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
ধলপুর হিলস ও সিপাঝাড় এলাকায় ৭৭ হাজার বিঘা জমি দখল করে বিশাল শিবমন্দির কমপ্লেক্স বানানোর লক্ষ্যে রাজ্য সরকার সেখানে গত কয়েক মাস ধরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে। এই উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে আসাম পুলিশ গ্রামবাসীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, লাঠিপেটা করেছে। এতে প্রাণ গেছে দু’জনের এবং আহত হয়েছেন কয়েক ডজন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ইন লিখেছে, বৃহস্পতিবার আসামের সিপাঝারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, মাটিতে নিথর পড়ে থাকা এক ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন একজন আলোকচিত্রী। ওই ব্যক্তির শরীর থেকে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত।
‘Terror Force’ of fascist, communal & bigoted Govt. shooting at its own citizens. Also, who is the person with camera? Someone from our ‘Great Media’ orgs?
The appeal of these villagers, against eviction, is pending in the High Court. Couldn’t the Govt wait till court order? pic.twitter.com/XI5N0FSjJd
— Ashraful Hussain (@AshrafulMLA) September 23, 2021
আলোকচিত্রী যখন নিথর দেহের ওপর ঝাপিয়ে পড়ছিলেন, তখন তার আশপাশে ছিলেন পুলিশ সদস্যরাও। আসামের ডারাং জেলা প্রশাসনে কর্মরত আলোকচিত্রী বিজয় বানিয়াকে সিপাঝারে উচ্ছেদ অভিযানের ছবি তোলার জন্য আনা হয়েছিল।
আর মাটিতে যিনি পড়ে ছিলেন তার নাম মইনুল হক (৩৩)। ভিডিওর প্রথম কয়েক সেকেন্ডে দেখা যায়, মইনুল হক উচ্ছেদ অভিযান চালাতে আসা পুলিশ সদস্যদের দিকে একটি লাঠি হাতে তেড়ে আসছেন। এ সময় সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা তার ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে গুলির শব্দও শোনা যায়।
হামলায় মইনুল হক মারা যান। তিনি সিপাঝারের ঢলপুর-৩ এ বসবাস করতেন। পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার আগে বুধবার রাতে মুসলিম অধ্যুষিত ঢলপুরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়।
স্ক্রল লিখেছে, আসাম এবং এর বাইরে যারা ওই ভিডিওটি দেখেছেন, তাদের বেশিরভাগই বানিয়ার হিংস্রতায় হতভম্ব হয়ে গেছেন। কোন ধরনের ক্ষোভ থাকলে এমন একজন মৃত মানুষ বা মৃত্যুর প্রহর গোনা একজন মানুষের ওপর অযৌক্তিক সহিংসতা চালাতে পারে? এটা কীভাবে হতে পারে?
ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যম বলছে, বানিয়া বিচ্ছিন্ন কোনও অপরাধ করেননি বা বিচ্ছিন্ন কোনও বিদ্বেষ উগড়ে দেননি। আসামের কয়েক দশকের নোংরা রাজনীতি এ ধরনের উগ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তাকে। আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার নামে তথাকথিত বিদেশিদের তাড়াতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ এ জন্য দায়ী। এতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থন আছে।