ফাইজার টিকার ‘ডিপ-ফ্রিজিং’ সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেছে মডের্না

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২০; সময়: ৮:১৭ অপরাহ্ণ |
ফাইজার টিকার ‘ডিপ-ফ্রিজিং’ সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেছে মডের্না

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণে হওয়া কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে নিজেদের তৈরি টিকার সফলতা গত সোমবার ঘোষণা করে মডের্না। পরীক্ষামূলক প্রার্থী টিকার ৩য় ট্রায়ালের ফলাফল প্রাথমিক বিশ্লেষণ করার পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং কোম্পানির বাইরের স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা এখন তথ্য-উপাত্ত পুনঃপরীক্ষা করবেন।

গত সপ্তাহে আরেকটি মার্কিন কোম্পানি ফাইজার প্রথমে তাদের ট্রায়ালের প্রাথমিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। সেখানেও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ৯০ শতাংশের বেশি সফলতার দাবি করা হয়। ওই ঘোষণার পর থেকেই প্রধান প্রধান পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব দেখা যায়। টিকা বাজারে এসে মহামারি দূর হবে, এমন আশাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজ করে উদ্দীপনা।

তবে ফাইজারের চাইতে মডের্নার টিকার একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা আছে। উভয় কোম্পানির টিকায় ম্যাসেঞ্জার আরএনএ ব্যবহার করা হলেও, ফাইজারের মতো মডের্নার টিকা ‘ডিপ-ফ্রিজিং’ বা অতি-হিমশীতল ব্যবস্থায় সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। বরং সাধারণ মানের ফ্রিজ হলেই চলবে। সোমবার ঘোষণা দেওয়ার কালে মডের্না এসব তথ্য জানায়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা সংস্থা- সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো র‍্যাচেল সিলভারম্যান বলেন, ”স্বল্প এবং মধ্য আয়ের দেশের জন্য ফাইজারের টিকা উপযোগী নয়। অতি-শীতল হিমচক্রের দরকার না থাকায় মডের্নাই তাদের জন্য প্রকৃত সমাধান হতে পারে।”

তাপাঙ্ক ফাইজার টিকার প্রধান সমস্যা:

ইতোপূর্বে, ফাইজারের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ এলাকায় তা কিভাবে সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হবে, সেই বিষয়ে দেশটির স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। মেরুর মতো হিমশীতল মাইনাস ৯৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপাঙ্ক দরকার হয় ফাইজারের টিকা সংরক্ষণে। যেসব এলাকায় এমন ফ্রিজিং নেই সেখানে ড্রাই আইসের মাধ্যমে প্রতিষেধকটি জমাট অবস্থায় মজুদ রাখতে হবে। এই চিন্তাতেই দিশেহারা হয়েছেন তারা। টিকাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সংরক্ষণে তারা সরকারের কাছে বিশেষ ফ্রিজ সরবরাহ করার অনুরোধ করেছেন, বলেও বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

একারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ফাইজারের টিকা সবখানে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানে ফাইজার অবশ্য স্থল এবং আকাশপথে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিষেধকের বাক্সে তাপমাত্রা পরিমাপকারী জিপিএস ব্যবস্থা যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে মার্কিন ফার্মা জায়ান্টটির।

ফাইজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিজনেস ইনসাইডারকে জানান, তারা টিকাটির দ্বিতীয় প্রজন্ম তৈরির গবেষণা চালাচ্ছেন; যা অতি-হিমশীতল অবস্থায় সংরক্ষণের দরকার হবে না।

মডের্নার প্রতিষেধক এগিয়ে কেন?

টিকাটি সাধারণ মানের ফ্রিজে এক মাস সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে বিতরণের ঝামেলা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। খরচের বিবেচনা বাদ রাখলে উন্নয়নশীল কোনো দেশেও এটির চালান পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

তাছাড়া, ৩৬ – ৪৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় প্রতিষেধক সক্রিয় থাকবে একমাস। মাইনাস ৪ ডিগ্রীতে রাখা হলে এটি ছয় মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। প্রায় সকল হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফ্রিজেই এমন তাপাঙ্ক নিশ্চিত করা সম্ভব। ফলে টিকা বিতরণের সবচেয়ে বড় বাধাটাই অতিক্রম করেছে মডের্না।

উন্নয়নশীল দেশের জন্যও সম্ভাবনাময়:

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়ারউইক বিজনেস স্কুলের ওষুধ গবেষণা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আয়ফার আলী ব্লুমবার্গকে বলেন, ”বিদ্যমান টিকা সরবরাহ চক্রে অধিকাংশ দেশ মডের্নার প্রতিষেধকটিকে যুক্ত করতে পারবে। এমনকি প্রত্যন্ত এবং অনুন্নত অঞ্চলেও তা সহজে সরবরাহ করা যাবে। এক্ষেত্রে শুধু ফ্রিজ ও বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেই যথেষ্ট। ফ্রিজ না থাকলে সেটি কেনাও বড় কোনো সমস্যা হবে না।”

সূত্র: ব্লুমবার্গ ও বিজনেস ইনসাইডার

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে