ফাইজার ভ্যাকসিন সবাই কেন পাবে না?

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২০; সময়: ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ |
ফাইজার ভ্যাকসিন সবাই কেন পাবে না?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ফাইজারের উদ্ভাবিত টিকা তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফলে সফল হওয়ার খবর মহামারি অবসানের আশা সঞ্চার করে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু, টিকাটির বিশেষ উৎপাদন ফর্মুলার কারণে এটি সকল দেশের নাগরিক পাবেন না, এমন কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সমস্যাটি একটু সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করেন সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইম্যিউনোলজির সহকারী অধ্যাপক পাওলা ক্যানন।

”ধরুন আপনার বাড়ির ফ্রিজটির কথা। আপনার পছন্দের আইসক্রিমটিকে এটি গড়পড়তা মাইনাস ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপাঙ্কে সংরক্ষণ করে। এই তাপে আইসক্রিম ঠাণ্ডা থাকে বটে, কিন্তু চামুচ ভেঙ্গে ফেলার মতো কঠিন বরফ পিণ্ডে রূপ নেয় না। ফাইজারের কোভিড-১৯ টিকা আশাপ্রদ হলেও, তা সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, যা শুধুমাত্র বিশেষ ধরনের ফ্রিজারের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব,” তিনি বলেছেন।

ফাইজারের টিকার বিষয়ে তাই এখন আলোচনার কেন্দ্রে স্থান পাচ্ছে এটি সংরক্ষণ এবং পরিবহনে বিশেষ হিমচক্রের প্রয়োজনীয়তা। অনুমোদন পেলে কারা এটি পাবেন- তা নিয়েই আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কঠিন বাস্তবতা এদিকেই ইঙ্গিত করে যে- সবাই এই টিকা পাবেন না। বিশেষ করে, তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়ার সুযোগ খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিকও পাবেন না।

প্রথমদিকে, যেখানে বড় পরিসরের স্বাস্থ্য সেবা অবকাঠামো রয়েছে এমন বড় বড় মহানগরে ফাইজারের টিকাটি মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ, এসব জায়গায় তা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও সহযোগী উপকরণ আছে। কিন্তু, গ্রামীণ এবং দুর্গম অঞ্চলে এটি সহজে পরিবহন ও বিতরণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও এই কাতারে পড়ে। আমাদের এমন কোনো হিমচক্র ব্যবস্থা নেই যা ফাইজারের ভ্যাকসিন পাওয়ার সুবিধা তৈরি করবে।

তাই বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, অন্যান্য টিকার গবেষণা কাজের সফলতার উপরই উন্নয়নশীল দেশের নির্ভর করা উচিৎ। ওইসব টিকা সফল প্রমাণিত হলেই, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ স্থায়ীভাবে প্রতিরোধের নতুন মাত্রা যোগ হবে।

ফাইজার ভ্যাকসিনে mRNA নামক এক ধরনের জেনেরিক উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে। এই উপাদান স্থিতিশীল রাখতে দরকার হয় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। এমনটা না করা হলে mRNA গড়ন ভেঙ্গে যায়, ফলে প্রতিষেধকটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখা গেলে ফাইজারের টিকা ছয়মাস পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রেই প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চলের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ফার্মেসিতে এমন অতি-শীতল ফ্রিজের অস্তিত্ব নেই। না থাকার কারণও সহজ। এমন ফ্রিজের দাম ১০ হাজার মার্কিন ডলার বা তারও বেশি। পাশপাশি সচল রাখার জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তিও দরকার।

তাছাড়া, হিমচক্র একমাত্র সমস্যা নয়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা সহ্য করার জন্য টিকার কাঁচের ধারকটিও বিশেষ ধরনের কাঁচের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। এমন কাঁচের সঙ্কট দেখা দিতে পারে, বলে জানান জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডা. উইলিয়াম মস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক টিকা বণ্টন বিষয়ক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক।

মস বলেন, গতে জুনে নিউইয়র্ক ভিত্তিক- কর্নিগ হিম সহনশীল বিশেষ কাঁচ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে ২০৪ মিলিয়ন ডলারের সরকারি তহবিল পায়। এমন কাঁচ উৎপাদন করতে হয় বোরন মিশ্রণ ছাড়া, অত্যন্ত উচ্চ এবং সংবেদনশীল প্রযুক্তির সাহায্যে। তাই প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি সাহায্যও পেয়েছে।

কর্নিগ পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিশেষ কাঁচ উৎপাদক। তারাই যদি বিশেষ কাঁচ উৎপাদনে হিমশিম খায়, তাহলে পুরো বিশ্বের জন্য ভ্যাকসিন ধারক বা ভাইল তৈরিতে অন্য উৎপাদকেরাও যে সমস্যায় পড়বে, তা সহজেই অনুমেয়।

বিশ্বব্যাপী টিকা পরিবহনে আরেক বাধা জাহাজীকরণ। জাহাজে পরিবহনের পুরো সময় একে জমাট অবস্থায় রাখতে হবে। এসমস্যা নিরসনে ফাইজার এক ধরনের বিশেষ কন্টেইনার তৈরি করেছে। এর ভেতর যাত্রাপথে প্রতি ১০দিন পর ড্রাই আইস দিয়ে হিমশীতলতা নিশ্চিত করা যাবে, বাড়তি কোনো ফ্রিজিং ব্যবস্থা ছাড়াই।

তবে সমস্যা হচ্ছে, ড্রাই আইস দেওয়ার মাধ্যমে বাড়তি মাত্র ১৫ দিন সময় পাওয়া যাবে। যাত্রাপথে ২৫ দিনের বেশি দেরি হলে, টিকা নষ্ট হওয়ার সমূহ ঝুঁকি থাকে।

কন্টেইনার কোন পরিবেশে কতটুকু পরিমাণ খুলে তাতে ড্রাই আইস ভরা হবে, তার উপরও তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও কম সময় পাওয়া যাবে।

আবার, ড্রাই আইস উৎপাদনে ইথানল জ্বালানি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু, ইথানল ব্যবহারকারী অধিকাংশ দেশে মহামারির কারণে যান চলাচল হয়ে পড়েছে সীমিত। পড়তি চাহিদার দরুণ ইথানলের উৎপাদনও কমেছে।

ফাইজারের ভ্যাকসিন জমাট বাক্স খুলে সাধারণ ফ্রিজারে রাখা হলে মাত্র ৫ দিন ঠিক থাকবে। প্রতি বাক্সে থাকবে ২০০ থেকে ১,০০০ টিকার ধারক। অর্থাৎ, তা দ্রুতগতিতে দেওয়ার কাজ শেষ না করতে পারলে, জমাট অবস্থা ভেঙ্গে ভ্যাকসিনটি নষ্ট হয়ে যাবে। প্রোপাবলিকাতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন এবিষয়ে নিশ্চিত করে।

সূত্র: টাইম

  • 5
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে