ট্রাম্পের মতোই প্রথা ভাঙলেন মেলানিয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২০; সময়: ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ |
ট্রাম্পের মতোই প্রথা ভাঙলেন মেলানিয়া

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পর মতো প্রথা ভাঙছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াও। নতুন নির্বাচিত ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে ফোন করেননি তিনি। নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট যেমন পরাজয় স্বীকার করে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ফোন করে অভিনন্দন জানান, তেমনি ফার্স্ট লেডিরা পরবর্তী ফার্স্ট লেডিকে ফোন করে অভিনন্দন জানান। খোঁজখবর নেন। মেলানিয়া তেমনটি না করে দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ীই কাজ-কর্ম করে যাচ্ছেন ও পরবর্তী ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। সিএনএন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডির অফিসকে বলা হয় ইস্ট উইং। ফার্স্ট লেডির চিফ অব স্টাফসহ সেখানে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। ইস্ট উইংয়ের সঙ্গে পরিচিত সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও পরাজয় স্বীকার করেনিনি, সেহেতু মেলানিয়া চাইলেও ইস্ট উইং হস্তান্তরের উদ্যোগ নিতে পারেন না।

লরা বুশের চিফ অব স্টাফ আনিতা ম্যাকব্রাইড বলেন, এটি মেলানিয়ার জন্য জটিল সময়। তার স্বামী পরাজয় স্বীকার না করলেও তিনি তো তার বিরুদ্ধে যেতে পারেন না।

প্রেসিডেন্ট পরাজয় মেনে নিলে ও সময় এলে মেলানিয়া জিলকে স্বাগত জানানোর ও হোয়াইট হাউস ফ্যামিলি এবং কোয়ার্টার সংক্রান্ত বিষয়গুলো অবহিত করবেন। কেবল মেলানিয়া-জিলের ক্ষেত্রে নয়, ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে আগেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সুখকর ট্রানজিশনের পাশাপাশি বৈরী পরিস্থিতিও এসেছে সদ্য সাবেক ও নতুন ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে।

মিশেল-মেলানিয়া : এবার ১০ নভেম্বরে যখন নিজের রুটিন কাজে ছিলেন মেলানিয়া, তার বেলায় কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার কাছ অভিনন্দন ও বার্তা পেয়েছিলেন। ইয়েলো ওভাল রুমে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর মেলানিয়াকে আপ্যায়ন করেছিলেন ও দু’জনে হাসিখুশি মতবিনিময় করেছিলেন।

লরা-মিশেল : ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামা জয়ী হলে ৫ নভেম্বর তৎকালীন ফার্স্ট লেডি লরা বুশ মিশেল ওবামাকে ফোন করে অভিনন্দন জানান ও খোঁজখবর নেন। এছাড়া হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। ১০ নভেম্বর হোয়াইট হাউসের প্রাইভেট বাসভবনে লরা-মিশেলকে আতিথেয়তা দেন।

হিলারি-লরা : ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে পুরো মেয়াদ কাজ করেছেন মার্শাল। তিনি বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত সিডিউলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

নির্বাচন থেকে নিয়ে অভিষেক অনুষ্ঠান পর্যন্ত ফার্স্ট লেডি যথেষ্ট ব্যস্ত সময় কাটান। তবে ক্লিনটনের পর কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জর্জ ডব্লিউ বুশ নাকি আল গোর- সুপ্রিমকোর্টে এটি নির্ধারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করতে হয়নি তাদের।

১৩ ডিসেম্বর আদালতের রায়ে বুশকে জয়ী ঘোষণা করার পর এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে দেরিতে হলেও তাদের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়নি এবং সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। ২০ জানুয়ারি, ২০০১ অভিষেকের দিন বিল ক্লিনটন ও হিলারি এবং জর্জ বুশ ও লরা বুশ একসঙ্গে হাসিমুখে পোজ দিয়েছেন।

ওই সময় হিলারি বুশের কোট সোজা করে দিয়ে বলেন, আসুন ঠিক করে দিই। বুশ হিলারির দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেছিলেন, চিন্তা করবেন না, আমি ঠিকই আছি।

বারবারা-হিলারি : বিল ক্লিনটন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ১৯৯২ সালের নভেম্বরে জর্জ বুশ সিনিয়রের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি বারবারা বুশ নতুন ফার্স্ট লেডি হিলারিকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ১৯ নভেম্বর, ১৯৯২। তারা পরস্পরে কোলাকুলি করেন।

রোজালিন-ন্যান্সি বাকবিতণ্ডা : ১৯৮০ সালের নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিমি কার্টার আর ফার্স্ট লেডি রোজালিন কার্টার। আধুনিক সময়ে দ্বিতীয় মেয়াদে হেরে যাওয়া উল্লেখযোগ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্টার। তাকে হারিয়ে জয়ী হন রোনাল্ড রিগান।

ওই সময় নতুন নির্বাচিত ফার্স্ট লেডি হন ন্যান্সি রিগান। নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকে কার্টার ও রিগানের সঙ্গে তিক্ত মতবিরোধ তৈরি হয়। অভিষেক অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত তীব্র বাক্যবান চলে দু’জনের মধ্যে।

ন্যান্সি ও রোজালিনও ছিলেন প্রচণ্ড স্বামীভক্ত এবং জেদি। ফলে তাদের নামও চলে আসে রেষারেষির তালিকায়। ওই সময় খবর প্রকাশ হয়, ন্যান্সি রিগান চাচ্ছেন অভিষেক অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ আগেই যেন কার্টার-রোজালিন হোয়াইট হাউস ছেড়ে যান। প্রেসিডেন্ট-ফার্স্ট লেডি ব্লেয়ার হাউসে বাস করতে পারেন। রিগার-ন্যান্সির নতুন ডেকোরেশনের জন্য এটা দরকার। কেট অ্যান্ডারসনের ‘ফার্স্ট উইমেন : দ্য গ্রেইস অ্যান্ড পাওয়ার অব আমেরিকা’স মডার্ন ফার্স্ট লেডিজ বইয়ে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।

রোজালিন অবশ্য জানিয়েছেন, ফোন করে পরে ন্যান্সি তাকে এ ধরনের খবরের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ন্যান্সি সরি বলেছিল কি না, আমার মনে নেই। তবে তিনি বলেছিলেন হোয়াইট হাউস ছেড়ে ব্লেয়ার হাউসে বাস করার বিবৃতি তিনি দেননি।

পরে অবশ্য ১ নভেম্বর, ১৯৮০ হোয়াইট হাউসের বাইরে কার্টার-রোজালিন ও রিগার-ন্যান্সি হাসিমুখে পোজ দেন। ক্ষমতাসীন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মধ্যে বাকবিতণ্ডার মতো ফার্স্ট লেডিদের নিয়েও অল্পবিস্তর বৈরী আচরণের খবর এসেছে প্রায় সময়।

এবার ট্রাম্প এখনও পরাজয় স্বীকার না করার কারণে মেলানিয়াও জিলকে স্বাগত জানাতে পারছেন না। তবে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর এসেছে, ট্রাম্পকে পরাজয় মেনে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন ফার্স্ট লেডি। এ থেকে স্পষ্ট- কেবল স্বামীর ঘোষণার জন্যই অপেক্ষা করতে হচ্ছে মেলানিয়াকে।

ফার্স্ট লেডিদের নিয়ে এসব গল্পকে অবশ্য নিজেদের দায় হিসেবে দেখছেন না মিশেল ওবামা। তিনি বলেন, ‘এগুলো লরা ও আমি এবং প্রেসিডেন্ট বুশ ও প্রেসিডেন্ট ওবামার বিষয় নয়। এগুলো করে থাকে আসলে আমাদের স্টাফরা।’

মানুষ হিসেবে কেমন জিল বাইডেন? : বরাবর পর্দার আড়ালে থেকেছেন। প্রচারের আলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখা তার পছন্দ। ‘সুখী গৃহকোণ’ তার পছন্দের। তিনি জিল বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেনের ঘরনি। স্বামীর রাজনৈতিক জীবন নিয়েও কোনো উচ্চাশা ছিল না জিলের।

বরং স্বামী রাজনীতির জগৎ থেকে সরে আসুন-এটাই ছিল তার মনের ইচ্ছা। এমনকি প্রচারপর্বেও তার হয়ে মাঠে নামাতে চাননি জিল। আসলে জিল যেন বড় বেশি ‘সাধারণ’ আর পাঁচজনের মতো। তার পরিচয় শিক্ষাজগতে। কাজের জগতে আরেকভাবে মানুষ তাকে চেনেন।

ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার কাজ করছেন দীর্ঘদিন। কর্মক্ষেত্রের বাইরে রাজনীতি, রাজনৈতিক উত্থান কোনো কিছুই তাকে তেমনভাবে ছুঁয়ে যায়নি কোনোদিন। মেলানিয়া ট্রাম্প, মিশেল ওবামা, হিলারি ক্লিনটনের মতো তার নিজের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা বা পরিচয় নেই।

তার জন্য জিলের আপসোসও নেই। আর ঠিক সে জন্য স্বামী রাজনৈতিক জীবনে সিঁড়ি বেয়ে যতই উপরে উঠুন না কেন, এখন পর্যন্ত জিল খুব সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। অর্থাৎ, নিজেকে নিয়ে প্রচার বা বাগাড়ম্বর তিনি একেবারে অভ্যস্ত নন।

সরকারিভাবে এখনও দু’মাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আনুষ্ঠানিকভাবে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন আগামী বছরের জানুয়ারিতে।

  • 39
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে