টাইম ১০০: মোদি আছেন তালিকায় আর আছেন শাহীনবাগের বিলকিস…

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০; সময়: ১:০৫ অপরাহ্ণ |
টাইম ১০০: মোদি আছেন তালিকায় আর আছেন শাহীনবাগের বিলকিস…

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :
নরেন্দ্র মোদি: টাইমের এডিটর এট লার্জ-কার্ল ভিক লিখেছেন নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তার মূল্যায়ন এখানে তুলে ধরা হলো;

শুধুমাত্র অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র অর্জন করা যায় না। বিশেষ করে, এমন ব্যবস্থায় যেখানে বিজয়ী পক্ষই সবকিছু নির্ধারণ করবে। গণতন্ত্র অর্জনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো; যারা বিজয়ীর পক্ষে ভোট দেননি, তাদের অধিকারটাও রক্ষা করা।

আজ সাত দশক ধরে জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। ১৩০ কোটির বেশি জনসংখ্যার মধ্যে; হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন এবং আরও অন্যান্য ধর্মমতের মানুষ আছেন। সংবিধান অনুসারে, ভারত সকলকেই গ্রহণ করেছে। জীবনের অধিকাংশ সময় ভারতে নির্বাসনে কাটানো তিব্বতীয় আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা একেই ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেন।

নরেন্দ্র মোদি এসব কিছুকে গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলেছেন। ভারতের প্রায় সকল প্রধানমন্ত্রীই ৮০% সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মধ্যে থেকেই হয়েছেন। কিন্তু, শুধুমাত্র মোদিই এমনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, যাতে স্পষ্ট হয় ভিন্ন ধর্মের মানুষের অধিকার, মতামত কোনোকিছুরই যেন মূল্য নেই।

২০১৪ সালে সাধারণ নাগরিকের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নের জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে তার হিন্দু-জাতীয়তাবাদী দল। তারপর থেকে শাসক দলটি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও শুধু অভিজাততন্ত্র বর্জন করেছেন তা নয়, সঙ্গে বহুত্ববাদী চেতনাও জলাঞ্জলি দিয়েছেন। বিষয়টি বেশি স্পষ্ট হয়েছে- ভারতের মুসলামানদের লক্ষ্য করে পরিচালিত কর্মকাণ্ডে।

মহামারির অগ্নিগর্ভ সঙ্কটও হয়ে উঠেছে বিরোধী মতামত দমনের হাতিয়ার। ফলশ্রুতিতে, গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে একদা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের বুকে।

২০২০ সালে টাইমের শীর্ষ প্রভাবশালী নেতার তালিকায় ১২ নম্বরে স্থান পেয়েছেন মোদি। শীর্ষে আছেন; চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো বাইডেন। তারপরই আছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তার রানিং মেট- কমলা হ্যারিস। তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী শাই ইং ওয়েন আছেন তৃতীয় স্থানে। চতুর্থস্থানে মার্কিন বিচারপতি জন রবার্টস। শি জিনপিং এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প আছেন যথাক্রমে; পঞ্চম এবং ষষ্ঠস্থানে।

যারা তাকে চেনেন, তার দ্বারা উজ্জীবিত, তার নেতৃত্বে মুগ্ধ শুধুমাত্র তাদের কাছেই গুরুত্ব থাকতে পারে বিলকিসের। নরেন্দ্র মোদি আর তিনি- দুজনে দুই ভিন্ন পথ আর মতাদর্শের যাত্রী। তিনি টাইমের প্রভাবশালী বর্ষসেরা আইকনদের একজন নির্বাচিত হয়েছেন। নারী অধিকার কর্মী ও বিখ্যাত সাংবাদিক রানা আইয়ুব তুলে ধরেছেন বৃদ্ধার খোলসে এই উদ্দীপ্ত ব্যক্তিত্বের পরিচয়। তার ভাষ্যে আসুন জেনে নেই বিলকিস সম্পর্কে;

আমি যখন প্রথম বিলকিসকে দেখি, তখন তিনি বসেছিলেন তরুণী নারীদের মধ্যে। সবাই তাকে ঘিরে রেখে বিল্পবী স্লোগানে মুখর করে রেখেছিল চারপাশ। ৮২ বছরের সৌম্য ভাঁজপড়া চেহারা, একহাতে তসবী, অন্যহাতে (ভারতের) জাতীয় পতাকা। বিলকিসই হয়ে উঠেছিলেন ভারতের বৈষম্যের শিকার সংখ্যালঘুদের আওয়াজ। নয়াদিল্লির শাহীনবাগে বিক্ষোভের স্থানে সকাল আটটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পড়ে থাকতেন তিনি।

‘‘আমি এখানে তক্তক্ষণ অবস্থান করব, যতক্ষণ আমার দেহের শিরায় শিরায় রক্তপ্রবাহ বন্ধ না হয়। যাতে এ দেশ এবং পৃথিবীর আগামী দিনের সন্তানেরা ন্যায় ও সমতার সুবাতাসে শ্বাস নিতে পারে’’- বিলকিস
তিনি সেদিন থেকেই এই আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠেন; যেদিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রথম ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ পাস করে। ২০১৯ এর ডিসেম্বরে পাস করা এই আইন ভারতের মুসলমানদের নিজ দেশেই পরবাসী বা নাগরিকত্বহীনে পরিণত করার পথ তৈরি করে। ওই তীব্র শীতের সময়ে, হিম ঠাণ্ডাকে অগ্রাহ্য করেই বিলকিস এবং আরও হাজারো নারী এর প্রতিবাদে অবস্থান নেন শাহীনবাগে।

বিলকিস এমন এক দেশে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠেন, যেখানে নারী ও সংখ্যালঘুদের নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দমন করা হয়। এমন সময়ে, যখন নরেন্দ্র মোদির সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনীতি তাদের নিশ্চিহ্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিলকিস আশা আর উদ্দীপনা যোগান উপস্থিত অধিকার কর্মী আর ছাত্র নেতাদের মাঝে, যাদের অনেকেই অপ্রিয় সত্য উচ্চারণের কারণে ক্রমশ কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠা এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তার সৌম্য উপস্থিতি দেশজুড়ে এই আন্দোলনের অনুকরণে অসংখ্য শান্তিপ্রিয় অবস্থান ও প্রতিবাদ কর্মসূচী উৎসাহিত করে।

বিদায়বেলায় বিলকিস আমায় বলেছিলেন; ”আমি এখানে তক্তক্ষণ অবস্থান করব, যতক্ষণ আমার দেহের শিরায় শিরায় রক্তপ্রবাহ বন্ধ না হয়। যাতে এ দেশ এবং পৃথিবীর আগামী দিনের সন্তানেরা ন্যায় ও সমতার সুবাতাসে শ্বাস নিতে পারে।”

বিলকিস স্বীকৃতির যোগ্য, কারণ তাতে পৃথিবী নিষ্ঠুর স্বেচ্ছাচারী অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তিকেই স্বীকার করে নেবে।

  • 14
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে