বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন জোটে নেতৃত্ব দিতে পারে চীন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০; সময়: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ |
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন জোটে নেতৃত্ব দিতে পারে চীন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারের বড় একটি সুযোগ পাচ্ছে চীন। একইসঙ্গে তা চ্যালেঞ্জও বটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) গঠিত ভ্যাকসিন জোটে দেশটি যোগ দেবে কিনা অচিরেই সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে চীনকে।

এই জোট হচ্ছে; দরিদ্র দেশগুলোর জন্য সমতার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত কোভিড টিকা সরবরাহের উদ্যোগ। আনুষ্ঠানিক নাম কোভাক্স, যাতে অংশগ্রহণ চীনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর বিপরীতে উন্নয়নশীল দেশসমূহে গ্রহণযোগ্যতার এক নতুন মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।

ইতোপূর্বে চীন এ জোটে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ছিল শেষ তারিখ। এব্যাপারে চীনের সিদ্ধান্ত আর দুদিন পর জানা যাবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এনিয়ে এখনও বেইজিং বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো বিবৃতি দেয়নি।

কোভাক্স জোটের লক্ষ্য, দরিদ্র দেশে টিকা সরবরাহের লক্ষ্যে ১৮শ’ কোটি ডলারের এক তহবিল গঠন। চীন যোগ দিলে সেই অর্থ চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে। এব্যাপারে বেইজিং ইতোপূর্বে বলেছিল ‘কোভাক্স’ পদক্ষেপ তারা সমর্থন করছে। কিন্তু, এ উদ্যোগে অর্থ বরাদ্দ দেবে কিনা- সে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানায়নি।

তবে আগামী সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) জোট অংশীদার দেশের নাম প্রকাশ করবে হু’। চীন অংশ নিলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

ইতোপূর্বে, ট্রাম্প প্রশাসন কোভাক্স জোটে যোগদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এক্ষেত্রে ওয়াশিংটন শুধুমাত্র মার্কিন জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দেয়। তাছাড়া, ট্রাম্প ইতোপূর্বেই হু’কে চীনের পক্ষ অবলম্বন করার জন্য দায়িও করেন।

এ অবস্থায় কোভাক্স জোটে যোগদান সাড়া বিশ্বজুড়ে চীনের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে এজন্য যে; দেশটি মহামারি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণই করেনি, বরং ভাইরাসের উদ্বাহু নাচে পুরো পৃথিবীর যে ক্ষতি হয়েছে- তা পূরণে এগিয়ে এসেছে। কোভাক্স জোটকে ট্রাম্প যেভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন-তাও মনে রাখবে উন্নয়নশীল দেশের জনগণ।

চীনের জন্য সম্ভাবনাটি কত বড়, তার ব্যাখ্যা দেন অর্থনীতিতে রাজনৈতিক ঝুঁকি নিরূপক সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক কেলসি ব্রোডেরিক।

”উহানে ছড়ানো সার্স কোভ-২ ভাইরাস কোন উৎস থেকে ছড়িয়েছে, সেটা নিয়ে বেইজিং স্বচ্ছতা অবলম্বন করেনি- এমন অভিযোগ করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। তাছাড়া, মহামারির প্রথমদিকে যথেষ্ট গোপনীয়তা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। চীন এসব অভিযোগ খণ্ডনে লড়ছে। কোভাক্স জোটে যোগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সেই দুর্নাম ঘোচাতে পারবে দেশটি। তখন চীনকে দোষী হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ থাকবে না। বরং বিশ্ববাসীর প্রয়োজনের সময় যারা স্বার্থপর আচরণ করেছিল- দোষী তারাই হবে জনতার আদালতে।”

চীনের ভ্যাকসিন জাল:
এশিয়ার অন্তত একশ’টি দেশ চীনের গবেষণাধীন নয়টি ভ্যাকসিন পেতে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দিয়েছেন, চীনের তৈরি টিকা হবে বৈশ্বিক সম্পত্তি, এবং জনকল্যাণে সকল দেশকে তা সরবরাহ করা হবে।

এ অবস্থায় চীন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি তারা কোভাক্স জোটে যোগ দিচ্ছে কিনা, তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুইং চলতি মাসেই বলেছেন, চীনের পদক্ষেপ এবং কোভাক্স জোটের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন।

কোভাক্স জোটে এখন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে, কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপারডনেস ইনোভেশন এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস দম্পতির গ্যাভি ভ্যাকসিন জোট। কিন্তু, চীন অংশ নেওয়া মাত্র দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে।

হু’ চাইছে, উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশের সরকারসমূহ যেন ঝুঁকিপূর্ণ বা অনিরাপদ টিকার অনুমোদন না দেয়। পাশাপাশি নিরাপদ বলে বিবেচিত টিকা জোট তহবিলের অর্থ থেকেই সংগ্রহ করে সরবরাহের ভার নেবে সংস্থাটি। এরফলে নিরাপদ টিকার বাড়তি দাম হওয়ায় যা অনেক দেশ বহন করতে পারতো না, তাদের জনগণ টিকা কর্মসূচীর আওতায় আসতে পারবে।

কোভাক্স জোট ইতোমধ্যেই নয়টি প্রার্থী ভ্যাকসিনকে তুলনামূলক নিরাপদ এবং কার্যকর হিসেবে তাদের তালিকায় রেখেছে। ২০২১ সালের মধ্যে কোভাক্স জোট দুইশ’ কোটি টিকা সংগ্রহ এবং তা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

কূটনৈতিক গুরুত্ব:
নিজ অর্থায়নে সংগ্রহের ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলো তাদের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের জন্য সরাসরি টিকার ডোজ সংগ্রহ করতে পারবে। তবে কোভাক্স জোট টিকার ডোজ সমানভাবে ধনী ও দরিদ্র সদস্য দেশকে দেবে। বাজারে কার্যকর টিকা আসা মাত্রই এ পদক্ষেপ চালু করতে চায় হু। তাছাড়া, যেসব দেশ এ জোটের সদস্য তারা উৎপাদক সংস্থার সঙ্গে আলাদা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমেও বাড়তি ডোজ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে পারবে।

চীন পাশে থাকলে কোভাক্স জোট অনেক শক্তিশালী হবে। কোভাক্স জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে ১৭২টি দেশ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশকেও যদি কোভাক্স টিকা কর্মসূচীর আওতায় আনতে পারে, তা হবে সংখ্যা বিবেচনায় বড় ধরনের সাফল্য।

চীনের আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি টিকা গবেষণাও চলছে জোর কদমে। চীনে গবেষণাধীন তিনটি প্রার্থী ভ্যাকসিনকে তালিকায় রেখেছে কোভাক্স। চীনে টিকাদানের সাফল্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে জোটটির আলোচনায় দর কষাকষির সুযোগও শক্তিশালী করতে পারে।

ব্রোডেরিক জানান, ”স্থানীয় ভ্যাকসিন শিল্পের ইতিবাচক বিকাশ ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে কোভাক্স জোট যেমন সহায়তা করবে, ঠিক তেমনি বেইজিং এর আন্তর্জাতিক রাজনীতির লক্ষ্য পূরণেও এটি পরিপূরক হয়ে উঠতে পারবে।”

 

  • 25
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে