ভ্যাকসিন এলেও করোনা থেকে মুক্তি অনেক দূরে

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২০; সময়: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ |
ভ্যাকসিন এলেও করোনা থেকে মুক্তি অনেক দূরে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অদৃশ্য ক্ষতিকর জীবাণু সার্স কোভ-২। এর সংক্রমণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে বদলে গেছে- আমাদের পরিচিত পৃথিবী। অসংখ্য মৃত্যুর সংবাদে আতঙ্কিত জন-সাধারণ আর সরকারসমূহ। সংক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টায় করা লকডাউন আর শাটডাউনের সুবাদে মন্দা নেমেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। যা স্মরণকালের সবচেয়ে দীর্ঘ অর্থনৈতিক উত্তরণের সংগ্রাম হবে বলে জানিয়েছেন শীর্ষ অর্থনীতিবিদেরা। মন্দার তাড়নায় দরিদ্রতর হবে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী।

ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী মহল; পৃথিবীর সকল মানুষ তাই চাইছে করোনাকালের অবসান। ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক উত্তরণের প্রচেষ্টা দেশে দেশে শুরু হলেও, ভাইরাস সংক্রমণের হুমকি ঘাড়ে করে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে যে উন্নতি আসবে না, তাও অনুধাবন করছেন সবাই। এজন্যেই মানুষ কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের উপর আস্থা রাখছে। অনেক সময় যা রূপ নিয়েছে দৃঢ় বিশ্বাসেও।

আর এখানেই আপত্তি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের। তারা মনে করছেন, ভ্যাকসিনের জাদুকরি সমাধানের উপর মানুষের প্রত্যাশা এখন প্রয়োজনের চাইতেও বেশি। অথচ ভাইরাস পরাজয়ের লড়াইয়ে আরো দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া বাকি।

জনসাধারণের প্রত্যাশা বাড়িয়েছে, সবার আগে ভ্যাকসিন তৈরির বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন জৈব-প্রযুক্তি ভিত্তিক ওষুধ উৎপাদক কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছে- কোটি কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়ার কথা। শত শত কোটি ডলারের এ বাণিজ্যের মাধ্যমে মহামারিকে থামানো যাবে- বলে আশ্বাস দিচ্ছে তারা।

তবে এ আশ্বাস সহজে আমলে নেওয়ার পাত্র নন, অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (হু) মতে, নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারেনি পরীক্ষামূলক কোনো প্রার্থী ভ্যাকসিন। হু’ মহাসচিব ডক্টর তেদ্রোস আঢানম গেব্রেইসুস চলতি সপ্তাহে জানান, ” এই মুহূর্তে (করোনা মোকাবিলায়) কোনো জাদুকরি সমাধান নেই, আগামীতে পাওয়া যাবে এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ।”

জাতিসংঘের বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য প্রধানের এ বক্তব্য আসলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণকে রুঢ় বাস্তবতার আলোকে তুলে ধরেছ বিশ্ববাসীর সামনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষামূলক যে কোনো ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কিনা- তা প্রমাণ হতে অনেকটা সময় লাগবে। তাছাড়া, শুধু উৎপাদন হলেই তো আর সমস্যার সমাধান হয় না। সারা বিশ্বের সকল মানুষের দ্বারে- সেটা পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জটাও কম নয়। সম্পূর্ণরূপে ফলদায়ক একটি ভ্যাকসিন বিশ্বের সকল মানুষকে দেওয়া গেলেই কেবলমাত্র করোনার বিস্তার রোধ করা যাবে; হার্ড ইম্যিউনিটি বা গণ-রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে। অথচ প্রক্রিয়াটি অনেক ধীরগতির এবং কষ্টসাধ্য প্রয়াস।

অতীতের অনেক সংক্রামক ও প্রাণঘাতি ব্যাধির জীবাণু মোকাবিলায় তৈরি ভ্যাকসিনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং তা সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সমস্যাগুলোর সঙ্গে পরিচিত থাকার কারণেই; তারা সাধারণ মানুষের মতো বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না। বরং ব্যক্ত করছেন সতর্ক বাস্তবসম্মত প্রতিক্রিয়া।

তাছাড়া, সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পরও কোভিড-১৯ প্রার্থী ভ্যাকসিনসমূহ; সংক্রমণ প্রতিরোধ তথা মহামারির সমাপ্তি টানতে আদৌ সফল হবে কিনা তা নিয়ে এখনও অনেক কিছুই অজানা। ব্যাপকহারে ভ্যাকসিন দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরই- এসম্পর্কে বাড়তি তথ্য দিতে পারে নতুন গবেষণাগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফসির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড মরেন্স জানান, ”প্রতিটি ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া আসলে এক- একটি পরীক্ষামূলক অধ্যায়। প্রথমদিকের অনেক ভুল-ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি সফল ভ্যাকসিনের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়। অনেক সময় এমনকি শেষদিকে এসেও ব্যর্থতার মুখ দেখতে হয়েছে কিছু প্রতিষেধককে।”

”প্রথম সুযোগেই আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে বাজারে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আনার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী বটে। যদিও এটা সম্ভব- তবে এজন্য সৌভাগ্যের উপরই অনেক বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে” যোগ করেন মরেন্স।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ জন অ্যান্ড্রুজের মতে, ফলদায়ক ভ্যাকসিনের উৎপাদন প্রথমেই সফলতা অর্জন করবে না, এটাই বরং বাস্তবতা।

”ভ্যাকসিন সহজলভ্য হয়ে তা আমাদের সঙ্কটমুক্ত করবে; এমন আশায় দিন কাটানো আর এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখা সমান বিপদজনক। এই মুহূর্তে আমরা যা করছি- তার গুরুত্ব সম্পর্কে অতিরঞ্জিত প্রত্যাশা রাখা উচিৎ নয়। আবার এ মুহূর্তে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ভুলে গেলেও চলবে না।”

অ্যান্ড্রুজ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশে- করোনা প্রতিরোধে গণহারে পরীক্ষা, রোগী শনাক্তকরণ, আইসোলেশন, মাস্ক পরিধান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মতো দায়িত্বগুলি সকলকে মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি ভ্যাকসিন বাজারে আসার পরও- তা সকলকে মেনে চলতে হবে।

জন অ্যান্ড্রুজ প্যান আমেরিকান স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রাক্তন পরিচালক। তার পরামর্শ স্পষ্ট করেই ইঙ্গিত দেয়; কোভিড প্রতিরোধের দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রতি।

বাস্তবতা এটাই; ভালো লাগুক আর না লাগুক, শত কষ্ট হলেও- কোভিড ভ্যাকসিন পাওয়া এবং না পাওয়া- সকলকেই আরো বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে আরোগ্যের সন্ধানে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে