অর্থের বিনিময়ে পাওয়া পাসপোর্টে মহামারির মাঝেও বিশ্ব ঘুরছেন অতি-ধনীরা

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২০; সময়: ১১:৩৬ অপরাহ্ণ |
অর্থের বিনিময়ে পাওয়া পাসপোর্টে মহামারির মাঝেও বিশ্ব ঘুরছেন অতি-ধনীরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অধিকাংশ মানুষে জন্য করোনাভাইরাস মহামারির অবাধ চলাচলের সুযোগ সীমিত করেছে। অবশ্য, অতি-ধনী পরিবারগুলো এ বাধায় বিচলিত নয়, বরং নিজেদের অর্থবিত্তকে কাজে লাগিয়ে আন্তঃসীমান্ত চলাচলের সুযোগ পাচ্ছেন তারা । বন্ধ থাকার কথা থাকলেও, দেখা যাচ্ছে অর্থের প্রভাবের কাছে দুর্বল যোগাযোগ নিষেধাজ্ঞা।

বিনিয়োগ ভিত্তিক অভিবাসনের অভিজাত দুনিয়ায় এটাই বাস্তবতা। এখানে কোনো নির্দিষ্ট দেশের আবেদনকারীর নাগরিকত্ব বা জাতীয়তা বিবেচনা না করে; আমলে নেওয়া হয় শুধু তার সম্পদ এবং বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে তা স্থানান্তরের ইচ্ছেটাকে।

বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব কার্যক্রম বা সিটিজেন বাই ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামস (সিআইপি) বর্তমানে ক্রমবর্ধমান এক শিল্পেই পরিণত হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে পছন্দের দেশে স্থায়ী নিবাস গড়ার এ সুযোগকে- গোল্ডেন ভিসা নামেও অবহিত করা হয়।

সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস দ্বীপরাষ্ট্র বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব প্রদানের কার্যক্রমের প্রথমদিকের সফল উদ্যোক্তা।
এসব প্রক্রিয়ায় ভিন দেশে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে অতি-ধনী ব্যক্তিরা শুধু তাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনার তালিকায় (পোর্টফলিও) বৈচিত্র্য আনার সুযোগ পান তা নয়; বরং একটি বিশেষ দেশের নাগরিক হওয়ার নানা সুবিধাও পান। সঙ্গে মেলে কাঙ্ক্ষিত নতুন পাসপোর্ট। খবর সিএনএনের।

চলাচলে অবাধ স্বাধীনতা, কর রেয়াত, বিলাসবহুল জীবন-যাপনের নানা আয়োজন, সন্তানদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ এবং নাগরিক অধিকার প্রাপ্তির সুযোগের মতো বিষয়াদি- বিগত ৫ থেকে ১০ বছরে অধিকাংশ সিআইপি’র মাধ্যমে নাগরিকত্ব নেওয়াদের আকৃষ্ট করে। এসব ব্যক্তির সম্পদ ছিল নুন্যতম ২০ লাখ থেকে ৫ কোটি মার্কিন ডলারের উপর পর্যন্ত।

মহামারি যেমন আমাদের পৃথিবীর প্রচলিত নানা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে, ঠিক তেমনি তার প্রভাব পড়েছে অতি-ধনীদের চিন্তাধারাতেও। ২০২০ সালে এসে নাগরিকত্ব কেনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার মান ও মহামারি মোকাবিলায় গৃহীত সফল পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি আগামীতে এসব দেশ তাদের অর্থ-সম্পদ ও নাগরিকত্বের সার্বিক সুরক্ষা দেবে এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই- তারা সে দেশের পাসপোর্টধারী হচ্ছেন।

প্ল্যান বি:

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স নামের একটি বৈশ্বিক নাগরিকত্ব ও আবাস বিষয়ক পরামর্শক সংস্থার এশিয়া শাখার প্রধান ডমিনিক ভলেক বলেন, ”বিকল্প নাগরিকত্বের মাধ্যমে মানুষ একটি নিশ্চয়তা বা বীমা গ্রহণ করেন। জরুরি পরিস্থিতিতে এটা তাদের বিকল্প এক আশ্রয়ের সুযোগ দেয়। তাই এটাকে প্ল্যান বি বলাটাই সঠিক।”

”সম্পদ স্থানান্তর এবং পাসপোর্ট গ্রহণের আগে একটি দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান এবং মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়টিকেও তারা এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ, আগামীতে আরো মহামারি দেখা দেবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

ভলেক আরো বলেন, ধনীরা আগামী পাঁচ বা দশ বছরের চিন্তা করেন না। তারা শারীরিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে আগামী এক শতাব্দীর অগ্রিম পরিকল্পনা করেন।

অনেকটা অকল্পনীয় হলেও হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স সাম্প্রতিক সময়ের বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের পর অনুমান করছে যে, স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্যোগ নিয়ে শঙ্কা- বিশ্বের অতি-ধনীদের সিআইপি কার্যক্রমে অংশ নেওয়াকে এখনই প্রভাবিত করছে।

মহামারি বা বৈশ্বিক কোনো বিপর্যয় থেকে কোন দেশ অধিক নিরাপদ- তা জানতে কোম্পানিটির কাছে গত বছরের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেশি আবেদন জমা পড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন ছয়মাসে এ প্রবণতা বাড়তে দেখা যায়। এসময় বিদেশে স্থায়ী নিবাসের পরামর্শ নিতে আগ্রহীদের সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

মন্টিনিগ্রোর পাসপোর্টের আকর্ষণ বেশি:

অর্থের বিনিময়ে নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের কাছে মন্টিনিগ্রো এবং সাইপ্রাসের কদর সবচেয়ে বেশি। দেশদুটির পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য আবেদনের পরিমাণ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যথাক্রমে; ১৪২ এবং ৭৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।

ভূমধ্যসাগরের আরেক দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টায় সে তুলনায় নাগরিকত্ব আবেদনের সংখ্যা খুব একটা বাড়তে দেখা যায়নি। তবে মাল্টাতে আবাসন গ্রহণের ঝোঁক আগের মতো অব্যাহত আছে।

ভলেক জানান, ”অতি-উচ্চ সম্পদশালীরা সাইপ্রাস এবং মাল্টার মতো দেশে স্থায়ী আবাসের সুবিধা নিতে চান। এর মূল কারণ হচ্ছে; এসব দেশের পাসপোর্ট থাকলে আবেদনকারী বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো দেশে অবাধে প্রবেশের সুবিধা পান। আর পরবর্তীতে নিজের পছন্দনীয় দেশে সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো বাঁধা থাকে না।”

সাম্প্রতিক দশকে উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে উন্নত বিশ্বে ধনী নাগরিকদের আবাসন বিদ্যুৎগতিতে বেড়েছে।

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকরা ১৮৩টি দেশে ভিসামুক্ত বা আগমন মাত্র ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ পান। মাল্টা, চেক রিপাবলিক এবং কানাডার নাগরিকরাও এ সুবিধা ভোগ করেন।
ভলেক জানান, ”প্রভাবশালী দেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে সহজে ভ্রমণের সুযোগ এবং উন্নত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিতেই এ ধনীরা নিজ দেশ ছাড়ছেন।”

অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিনিয়োগের বিনিময়ে স্থায়ী আবাসন এবং নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগও আকর্ষণীয় এসব ধনীদের কাছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সফলতা দেশদুটির পাসপোর্টের সমাদর আরো বাড়িয়েছে।

”মহামারি নিয়ন্ত্রণে উজ্জ্বল সফলতার প্রেক্ষিতে ধনী আবাসন প্রত্যাশীদের কাছে নিউজিল্যান্ড সবার উপরে স্থান পাচ্ছে। ইতোপূর্বে ধনীদের চিরাচরিত আকর্ষণ কেন্দ্র যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো গন্তব্যের চেয়েও একারণে নিউজিল্যান্ড এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে” জানান এ পরামর্শক।

  • 134
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে