কোথায় কোথায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি ও কেন

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২০; সময়: ১:১৬ অপরাহ্ণ |
কোথায় কোথায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি ও কেন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনাভাইরাসের চিকিৎসা এবং এটি প্রতিরোধে টিকা উদ্ভাবনে সারা বিশ্বে ‍গবেষণা চলছে। পাশাপাশি এই মহামারি মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা আরো একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন আর সেটি হলো- এক ব্যক্তির মাধ্যমে এই ভাইরাস অনেক মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি ঠেকানো যায় কীভাবে।

ইংরেজিতে একে বলা হয় সুপারস্প্রেডিং এবং যার মাধ্যমে ছড়ায় তিনি সুপারস্প্রেডার। তাই সুপারস্প্রেডিং বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে এই ভাইরাসের সংক্রমণের হারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই হার থেকে বোঝা যায় একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসটি কীভাবে ও কতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যদি কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে এই সংক্রমণের হার তিন। এর অর্থ হচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি আরো তিনজনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায় এবং তাদের প্রত্যেকের মাধ্যমে আরো তিনজন করে আক্রান্ত হয়।

এভাবে সংক্রমণ চলতেই থাকে। তবে এটা একটা স্বাভাবিক গড় হিসাব। বাস্তবে ভাইরাসটি এর চেয়েও কম বা বেশি হারে ছড়াতে থাকে।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ড. অ্যাডাম কুচারস্কি বলেছেন, এমন অনেক মানুষ আছে যাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি একজনের মধ্যেও ছড়ায় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রচুর সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। মাত্র একজনের কাছ থেকে ভাইরাসটি ৫, ১০ এবং ২০ জনের মধ্যেও ছড়াতে পারে।

তিনি জানান, কোভিড-১৯ মহামারির শুরুর দিকে এরকমটা বেশি হয়েছে। তার মতে প্রায় ৮০ জন সংক্রমণের জন্য ১০ থেকে ১৫ লোক দায়ী।

সুপারস্প্রেডিং কেন ঘটে: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে নিসৃত ভাইরাসের মাধ্যমে আরেক ব্যক্তি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়। এক ব্যক্তি কতোখানি সংক্রামক সেটা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে আর সেটা একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে।

এগুলো হচ্ছে: কী পরিমাণ ভাইরাসে তিনি প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তিনি কতোদিন ধরে আক্রান্ত ও উপসর্গগুলো কতোটা গুরুতর।

‘একজন ব্যক্তি যখন সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটানোর মতো অবস্থায় থাকে তখন যদি তিনি সারাদিন প্রচুর মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পরে কোথাও রাতের খাবার খেতে যান তখন বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বা সুপারস্প্রেডিং ঘটতে পারে, বলেন ড. কুচারস্কি।

তিনি বলেন, এই লোকটি যদি বাইরে খেতে না গিয়ে ঘরেই থাকতেন তাহলে হয়তো এতো সংক্রমণ হতো না।

সুপারস্প্রেডিং কোথায় ঘটছে: মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ এর গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গেভিন নাইট বলছেন, আমরা যা ধারণা করেছিলাম দেখা গেছে সেসব জায়গাতেই সুপারস্প্রেডিং বেশি হচ্ছে।দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই তালিকায় এখন হাসপাতাল ও কেয়ার হোমের মতো বৃদ্ধাশ্রমগুলোও যুক্ত হয়েছে। এছাড়া আছে ক্রুজ শিপ। অন্যান্য সংক্রামক রোগও এধরনের জাহাজ থেকে ছড়িয়েছে বলে আমরা জানি।

তবে তিনি এরকম আরো কিছু জায়গা চিহ্নিত করেছেন যেখান থেকে বহু মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে রয়েছে মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয় এমন স্থাপনা, পানশালা, গানের দল এবং জিম। এগুলোর সবই ঘরের ভেতরে হয় এবং সেখানে শারীরিকভাবে একজন আরেকজনের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘনিষ্ট থাকে।

ড. নাইট বলেন, এছাড়া এসব জায়গায় সাধারণত প্রচুর আওয়াজ হয় এবং কেউ সেখানে কীভাবে নি:শ্বাস নিচ্ছে তার ওপরেও এই পরিবেশের একটা প্রভাব পড়ে। যেহেতু সেখানে প্রচুর শব্দ হয়, তাই জোরে জোরে নি:শ্বাসও ফেলতে হয়। এতে নাক মুখ দিয়ে দ্রুত গতিতে বেশি বাতাস বের হয়। এর ফলে এরকম জায়গা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়।

  • 77
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে