করোনায় ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২০; সময়: ৩:০০ পূর্বাহ্ণ |
করোনায় ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনাভাইরাসের চরম ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে ভারত। মুম্বাইয়ে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর দেশটির শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনার সম্ভাব্য ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ভারতকে অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া হলে করোনায় মৃত্যুপরী ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত।

দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। ৩ দিনে দ্বিগুণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২৫১ জন থেকে ৩ দিনে বেড়ে ৩ হাজার ৮২ জনে দাঁড়িয়েছে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মার্কিন সংস্থা বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, জুনের শেষ সপ্তাহ অথবা সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশটিতে লকডাউন চলতে পারে। রোববার রাত ৯টা থেকে ৯ মিনিটের জন্য বাড়িঘরের আলো নিভিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাড়িতেও দূরত্ব বজায় রেখে দুই সপ্তাহ চলার পরামর্শ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে ৮৬ জন মারা গেছেন এবং তিন হাজার ৮২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। খবর সিএনএন, আনন্দবাজার, খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এনডিটিভির।

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তিতে বুধবার করোনায় আক্রান্ত ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যান। মুম্বাইয়ের ব্রিহানমুম্বাই পৌর কর্পোরেশনের (বিএমসি) এক কর্মকর্তা জানান, মৃত ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস ছিল না। স্থানীয় কিরণ দিগাভকর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল তাকে। সেখানে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ ফল আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি মারা যান।

পরে ওই ব্যক্তির পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ ব্যক্তি বস্তির যে ব্লকে থাকতেন সেখানে ৩০০ ঘর ও ৯০টি দোকান রয়েছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ব্যাপক ঘনবসতিপূর্ণ সেই ব্লক বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এশিয়ার বৃহত্তম মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তিতে ১০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এ বস্তির প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষের ঘনত্ব ২ লাখ ৮০ হাজার; যা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের চেয়ে তিনগুণ বেশি।

দেশটির চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের অসংখ্য বস্তির একটিতেও যদি করোনার স্থায়ী প্রাদুর্ভাব শুরু হয়; তাহলে পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। কারণ ভারতের অধিকাংশ বস্তিতে স্যানিটেশন এবং বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা নেই। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে সেখানে জীবন-যাপন করেন। এসব বস্তিতে সামাজিক দূরত্ব শারীরিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসক নরেশ ত্রিহান বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আলামত পেয়েছি। কিন্তু এটা কীভাবে ছড়াচ্ছে সেটা অজানা। আমরা যে ধরনের প্রস্তুতিই নেই না কেন, যখন এটি একেবারে চূড়ান্ত মাত্রায় সংক্রমণ ঘটাবে তখন কী ঘটবে সেটা ভেবেই আঁতকে উঠি। আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় শয্যা, ভেন্টিলেটর, পিপিইর এক চতুর্থাংশও নেই। এসব কিছুই দরকার।

নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালে সেন্টার ফর চেস্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অরবিন্দ কুমার বলেন, এ ভাইরাসের মানুষের সব ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে একটি হাসপাতালেই ডজনে ডজনে মানুষ মারা যাচ্ছেন, এটা আপনি কল্পনা করতে পারেন?

তিনি বলেন, ১৩০ কোটি মানুষের চলাচল ও প্রাত্যহিক জীবন-যাপনে কড়াকড়ি আরোপে ভারত সরকারের নেয়া নজিরবিহীন সিদ্ধান্তই দেশটিতে করোনার হটস্পট শনাক্ত করার সবচেয়ে ভালো সুযোগ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী এবং ভেন্টিলেটর উৎপাদনের মূল্যবান সময় দেয়া হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে