করোনাতঙ্কে রোগী নেই রামেক হাসপাতালে

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২০; সময়: ১০:৪৪ অপরাহ্ণ |
করোনাতঙ্কে রোগী নেই রামেক হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকের কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আউটডোর ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হঠাৎ কমেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় রোগী আসছে কম। প্রতিদিন যেখানে হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগ ও জরুরী বিভাগে গড়ে রোগী আসতেন ৬ থেকে ৭ হাজার সেখানে এই পরিস্থিতিতে রোগী আসছে ১০০০ থেকে ১২০০।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি তারা চিকিৎসা না দিয়ে কোন রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। এদিকে রোগী ও চিকিৎসাসেবা কর্মীদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নগরীর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।

রাজশাহী নগরীর ক্লিনিক পাড়া হিসেবে পরিচিত লক্ষীপুর এলাকা এখন পুরোটাই স্তব্ধ। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলো বন্ধ। তবে ওষুধের দোকানগুলো খোলা আছে। দোকানগুলোর সামনে ক্রেতাদের চাইতে বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিই বেশি ভিড় করছেন। তাদেরকে দিন-রাত লক্ষীপুর মোড়ের বিভিন্ন ওষুদের দোকানের সামনে জটলা পাকিয়ে দাড়িয়ে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে পরপর দুই দিন সকালে রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন যে আউটডোরে হাজারো রোগী ও তাদের স্বজনদের পদচারণায় ভরপুর থাকতো সেই আউটডোরে ভিড় নেই বললেই চলে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সর্দি,কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের আউটডোর ভবনের বাইরে প্যাণ্ডেল করে চিকিৎসকদের পৃথক ইউনিট দিয়ে সেবা ও ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ভবনটির ভেতরে আউটডোর কাউন্টার ও চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে রোগীর সংখ্যা সামান্য।

তবে আউটডোরে বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিরা দল বেধে দাড়িয়ে আছেন, নয়তো বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হাসপাতালের ইমাজেন্সি গেটের সামনে দাড়িয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন যানবাহন বিক্ষিপ্ত ভাবে দাড়িয়ে থাকলেও, মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম।

ইমাজেন্সি হয়ে ওয়ার্ডে প্রবেশের গেটে আগে যেখানে লাইন ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে হতো, সেই গেট পুরোটাই ফাঁকা। চার-পাঁচ জন আনসার ও গেটম্যান প্রবেশ গেটে দাড়িয়ে নিজেরা গল্প করছেন। ওয়ার্ডগুলোতে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় কম। মার্চের শুরুতেও ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর চাপে হাসপাতলের বারান্দায় রোগীদের শুয়ে থাকতে দেখা যেতো, এখন সেই বারান্দা ফাঁকা ও আগের তুলনায় পরিস্কার। যারা বিচরণ করছেন তাদের প্রায় প্রত্যেই মুখে মাস্ক পরা।

রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, গত ২৪ ঘন্টায় (মঙ্গলবার) রামেক হাসপাতালের আউটডোরে ৪০০ রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। এসময় বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৫০জন। অন্যান্য সময় আউটডোরে গড়ে ৪ হাজার রোগী সেবা নিতো। আর ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হতো গড়ে ২২শ।

রোগী কমার কারণ হিসেবে তিনি জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণে হাসপাতালে রোগী কম আসছে। তবে ইমাজেন্সি রোগীরা এ্যাম্বুলেন্সযোগে নয়তো কোননা কোন ভাবে ঠিকই আসছে। ডা. সাইফুল ফেরদৌস দাবি করেন, কোনো রোগীকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। ২৪ ঘন্টাই হাসপাতাল খোলা আছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সিন্টম নিয়ে আসা রোগীদেরও রামেক হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হবে না।

তবে সরকারি নির্দেশনার কারণে আউটডোর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতল কর্তৃপক্ষ হটলাইন নম্বর চালু করেছে। যেকেউ ঘরে বসে মোবাইলে কল করেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারবেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে