এলাকাভিত্তিক রোগ চিহ্নিত করে স্বাস্থ্যে বাজেট নির্ধারণের দাবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২০; সময়: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ |
এলাকাভিত্তিক রোগ চিহ্নিত করে স্বাস্থ্যে বাজেট নির্ধারণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাতের নাজুক অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর এই অবস্থাকে চিহ্নিত করে আগামীতে স্বাস্থ্যখাতকে আরও গুরুত্ব দিয়ে ঢেলে সাজানোর জন্য এলাকা ভিত্তিক রোগ চিহ্নিত করে আঞ্চলিক বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের আয়োজনে শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনে কক্ষে ‘বাংলাদেশ রোগ নির্দিষ্ট হিসেব ২০১৫ অবহিতকরণ’ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী এই মতামত ব্যক্ত করেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্যর সভাপতিত্বে অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ। এছাড়াও কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের উপপরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) ফাতেমা জোহরা, ডাটা ইন্টারন্যাশনাল পরিচালক এএফএম আজিজুর, বিভাগের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন, হাসপাতালের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা।

কর্মশালায় বক্তারা জানান, স্বাস্থ্যখাতে জনগণের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। এই ব্যয় কমিয়ে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। কোভিড ১৯-এর প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত আর্থিক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তা মেটাতে বিভিন্ন কৌশলে অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য খাতে এতদিন কতটা কম মনোযোগ দেয়া হয়েছে। তাই আগামীতে বড় ধরনের সংস্কার করে এলাকাভিক্তিক বাজেট প্রণনয় করতে হবে।

বক্তারা আরও জানান, স্বাস্থ্য সেবায় দেশের নাগরিকদের সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। জনগণের কাছ থেকে কম খরচ করা হয়। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে চিকিৎসা জনিত কারণে খরচ হচ্ছে জন প্রতি ৩৭ ডলার। এই ৩৭ ডলারের মধ্যে সরকার মাত্র ৯ ডলার খরচ করে। বাকি ৪ ডলার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন ইউনিট খরচ করে থাকে। আর জনগণের পকেট থেকে ২৪ ডলার খরচ করতে হয়। মোট যে খরচ হয় তার ৬৭ শতাংশ জনগণ খরচ করে থাকেন। এই ব্যয়ের মূল কারণ আমাদের সঠিক পদক্ষেপের অভাব।

কারণ হিসাবে উল্লেখ করে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, চিকিৎসকদের বেতন ভাতায় বেশি বরাদ্দ হলেও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে তেমন বাড়েনি। তাই আগামীতে সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। এজন্য আঞ্চলভিত্তিক বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।

করোনার এই দুর্যোগের সময়ে চিকিৎসকদের প্রশংসা করে কর্মশালায় বক্তারা বলেন, আমরা সকলেই দেখেছি জাতির দুঃসময়ে চিকিৎসকরাই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলো। কিন্তু মাঝে মাঝে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা সঠিক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করতে পারিনা। যা অর্জিত হওয়ার কথা তা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকি।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতের যে বাজেট থাকে তা গড়পত্তা ৫ শতাংশ। এবছর মোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের বাজেট ২৯ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। এই বাজেটও আমরা সঠিকভাবে প্রণায়ন করতে পারিনা। আন্তর্জাতিকভাবে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই বাজেট দ্বিগুন করা উচিত। করোনায় এবার ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। তা বাড়ানো দরকার।

করোনায় জন প্রতি প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা বিনা পয়সায় সেবা দেয়া হয়েছে। দেশে এই মহামারিতে মোট ছয় হাজার ১০ জন রোগি মারা গেছে। যা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেককাংশে কম। প্রতিদিন দুই হাজার ৬০ জন মানুষ বিভিন্নভাবে মারা যাচ্ছে। আর বছরে এক লাখ ৬২ হাজার মানুষ তামাক খাওয়ার কারণে মারা যায়।

বক্তারা জানান, দেশে নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সার্বিকভাবে নারীদের পিছনে খরচ কম হচ্ছে। নারীদের জন্য স্বাস্থ্যখাতে আলাদাভাবে বাজেট বাড়াতে হবে। সেই লক্ষে সরকার কাজও করছে। দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নারীদের বিশাল অংশ কাজ করছেন। আর চার হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৬ হাজার মানুষ সেবা নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে সম্বনয়য়ের অভাবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁচ্ছানো সম্ভব হচ্ছে না।

বক্তরা জানান, আমাদের দেশের মাথাপিছু আয়ের অন্যতম বড় আয়ের অংশ গামের্ন্টস খাত। আমাদের প্রবৃদ্ধির ৫.৬০ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। তাই আমাদের খাতের সাথে জড়িতদের সুস্থাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বক্তারা জানান, প্রত্যেকদিন বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশি দেশ ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে যায় আট হাজার মানুষ। কোলকাতায় প্রায় ৮০ শতাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেগুলো আমাদের রোগিদের নিয়ে কাজ করছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো উন্নতি করলে বাইরের দেশের চেয়ে সেবা ভালো দিতে পারলে আমরা বিশাল পরিমাণ অর্থ দেশেই রাখতে পারবো।

  • 26
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে