করোনামুক্ত হলেও নানা উপসর্গ পিছু ছাড়ছে না!
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে করোনাভাইরাসমুক্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনামুক্তির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষুধামন্দ, মাথাব্যথ্যা, প্রেসার, শারীরিক দুর্বলতা, হাঁপানি, ওজন কমে যাওয়া, চুল উঠে যাওয়াসহ নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে করে করোনামুক্ত হওয়ার পর রোগীদের পরবর্তী ছয়মাস বাসায় বিশ্রাম নিতে হবে ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে ঘটছে এর ব্যতিক্রম।
রাজেশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থমনি ভট্টাচার্য জানান, করোনা সেরে যাওয়ার পর একটি দলকে পাওয়া যাচ্ছে যারা শারীরিক দুর্বলতা ও স্ট্রোকের মতো লক্ষণ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। এদের কেউ কেউ স্নায়বিক সমস্যা নিয়ে আসছেন। কেউ বা আসছেন পেশির সমস্যা নিয়ে। আরেকটি দল আসছেন মানসিক সমস্যা নিয়ে। এই রোগীরা প্রচণ্ড ক্লান্তিতে ভুগছেন। তাদের শরীরে ম্যাজমেজে ভাব থাকছে। কারো আবার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাদের খাওয়া ও ঘুমের আগ্রহ কমে যাচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে এই রোগীরা বিষণ্নতায় ভুগছেন।
লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহা. হারুন আর রশীদ জানান, করোনা পরবর্তী কিছু রোগীকে অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভুগতে দেখছি। একে বলা হয় ‘পোস্ট ভাইরাল এস্তেনিয়া’। এর ফলে অনেক রোগী করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, রুচিহীনতা, নিদ্রাহীনতা, ছটফট করার মতো সমস্যায় ভুগছেন। কারও কারও ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে শরীরে সুগারের মাত্রা বেশি দেখা যাচ্ছে। কারও ক্ষেত্রে অনিয়মিত অ্যালার্জিও দেখা যাচ্ছে। তাদের ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ভেজালমুক্ত ও পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি টাটকা ফলমূল, শাক-সবজি খেতে হবে। পাশাপাশি হাঁটাচলা ও শারীরিক কসরত করতে হবে। রোগীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে।
ডা. হারুন জানান, আমি নিজেও একজন করোনা পজেটিভ ছিলাম। এর কিছু কিছু উপসর্গ নিজেও উপলব্ধি করছি।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আরো কয়েকজন চিকিৎকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনামুক্ত হওয়ার পরও যাদের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া আগে থেকেই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন-লিভার, কিডনি, হার্ট, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি। আবার যাদের আগে এক ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিল করোনামুক্ত হওয়ার পর তাদের নতুন করে অন্যসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আগে যাদের হার্টের সমস্যা ছিল না তাদের নতুন করে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
তিন মাস আগে করোনা পজেটিভ হয়েছে নগরীর শিরোইল এলাকার সামসুর রহমান রুমি। তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়েছি তিন মাস আগে। এখনো শরীর ভীষণ দুর্বল। কিছু কাজ করলে হাঁপিয়ে যাচ্ছি। হাঁটতে গেলে ক্লান্তি লাগছে। শ্বাস নিতেও তার কষ্ট হচ্ছে। দম বন্ধ লাগে। প্রচণ্ড কাঁশি হচ্ছে কিন্তু কফ উঠছে না। কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
আড়াই মাস আগে রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন ফরিদা বেগম (৫৫)। বহির্বিভাগের মেডিসিন চিকিৎসককে দেখাতে এসেছেন। তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগেও বিভিন্ন ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলাম। করোনামুক্ত হওয়ার পর নতুন করে আরও বেশ কিছু সমস্যায় তাকে ভুগতে। তার শরীরের রক্তের হিমোগ্লোবিন হঠাৎ করে কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া মধ্যরাত থেকে সকালের দিকে প্রেসার হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে। চিকিৎসক তাকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে বলেছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, করোনা রোগীরা একদম ভালো হয়ে যাওয়ার পরও তাদের ছয় মাস চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। বিশেষ করে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জটিল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এই কথা বেশি প্রযোজ্য। ‘পোস্ট ভাইরাল’ রোগীদের জন্য হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসকদের ভাগ করে দেওয়া আছে। করোনা পরবর্তী রোগীদের আমরা এই চিকিৎসকদের দিয়ে সেবা দিচ্ছি।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে একটি নতুন বিষয় হচ্ছে- যাদের করোনা পজেটিভ ছিলো এর মাঝে অনেক রোগী করোনা নেগেটিভ হলেও তাদের মাঝে কিছু রোগী হঠাৎ করেই মারা যাচ্ছেন। এদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিলো। এমন রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে আমরা চিকিৎসকদের সাথে প্রতিনিয়ত আলোচনা করছি।