নাকে ২১ দিন করোনা ভাইরাস বহন করে শিশুরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২০; সময়: ৬:২৩ অপরাহ্ণ |
নাকে ২১ দিন করোনা ভাইরাস বহন করে শিশুরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নাকের মাধ্যমে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে শিশুরা। এক গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা। এর আগে গবেষণায় বলা হয়েছিল, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুর মধ্যে মৃদু উপসর্গ দেখা যায়। কখনো কখনো উপসর্গ থাকে না। তবে তাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্যগুলো, শিশুরা কীভাবে অন্যের শরীরে করোনা ছড়িয়ে দেয়, সে প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব দিতে পারেনি।

শিশুরা যাতে স্কুলে ফিরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দুরত্ব মেনে চলে গবেষণায় তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রয়েল কলেজ অব প্যাডিয়াট্রিক অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিপার্টেমেন্টের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর রুসেল ভিনার জানান, তারা তিনটি আলাদা প্রশ্ন সামনে রেখে গবেষণা করেছেন। যে প্রশ্নগুলো শিশু এবং করোনা ভাইরাস সম্পর্কীয়।

প্রফেসর ভিনার বলেন, গবেষণায় আমরা নিশ্চতভাবে জেনেছি শিশুরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। অ্যান্টি ব্লাড টেস্টের ফলাফল বলছে, প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের তীব্রতা খুব একটা নেই। বিশেষ করে যে শিশুদের বয়স ১২ বছরের কম।

শুক্রবার প্রকাশিত ব্রিটিশ গবেষণায় বলা হয়, বিজ্ঞানীরা ভালোভাবে নিশ্চিত হয়েছেন যে, শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অসুস্থ হয় কম। অনেক শিশুর উপসর্গও থাকে না। তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সম্প্রতি গবেষণা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।

গবেষণায় বলা হয়, তারা করোনা আক্রান্ত ৯১টি শিশুর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। যাদের মধ্যে কিছু মৃদু উপসর্গ ছিল বা কারো কারো ক্ষেত্রে ছিল না। তবে তাদের নমুনায় তিন সপ্তাহ পর করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যেতে পারে বলে বলা হয়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত শিশুদের নাকে যে পরিমাণ ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে তা চিহ্নিত করার মতো। শিশুদের থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ কারণে দক্ষিণ কোরিয়া গণহারে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। পরীক্ষার পর আক্রান্ত শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনে পাঠানো হয় তাদের। শুধু উপসর্গ যাদের তাদের নয়, যাদের উপসর্গ নেই তাদেরও পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে গবেষক দল আক্রান্ত শনাক্তদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখেন।

যেদিন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। সেদিন থেকে ভাইরাসমুক্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

তারপরই বিজ্ঞানীরা করোনা সংক্রমণ ইস্যুতে নতুন কিছু জানিয়েছেন। বলেছেন, শিশুরা করোনা ভাইরাস বহন করে। অর্থাৎ আক্রান্ত হয় এবং তারা তা ছড়িয়ে দিতে পারে। এ বিষয়ে আরো কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তাদের গবেষণায় শিশুরা করোনা ভাইরাস ছড়ায় কী না- এ বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

শিশুদের নাকে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেলেই যে তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও জানানো হয়।

চিলড্রেনস ন্যাশনাল হসপিটাল ইন ওয়াশিংটন ডিসি’র প্যাডিয়াট্রিক ডিজিসেজ ডিভিশনের প্রধান ডা. রোবের্তো দেবিয়াসি বলেন, শিশুরা করোনা ভাইরাস বহন করে অথচ ছড়ায় এমন সব কথাবার্তা অযৌক্তিক।

কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুলের চাইল্ড হেলথ ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ডা. ক্যালুম সেম্পল বলেন, আক্রান্ত যাদের মধ্যে সর্দি, কাশির মতো উপসর্গ না থাকে, তাদের নমুনায় ছড়ানোর মতো ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে না।

যুক্তি অনুযায়ী আক্রান্ত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক যাদের উপসর্গ নেই বা হালকা উপসর্গ, যারা বাতাসে হাঁচি, কাশির মাধ্যেম বাতাসে ভাইরাস ছড়ায় না, সম্ভবত তারা কম সংক্রামক। গবেষণা অনুযায়ী শিশুদের উপসর্গ থাকে না, বা থাকলেও উপসর্গ খুব মৃদু। তবে উপসর্গহীন আক্রান্তদের থেকেও করোনা ছড়িয়ে পড়ার হার নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রফেসর ভিনার বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নিরপেক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নয়। শিশুদের বিকাশ, শিক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিরূপ প্রভাব রয়েছে। এ মূহূর্তে শিশুরা করোনা ছড়ায় কী না এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পরবর্তী করোনা সংক্রমণরোধে এর উত্তরও জরুরি।

ডা. দেবিয়াসি বিশ্বাস করেন, আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশের যেহেতু মৃদু উপসর্গ রয়েছে, সেহেতু তারা গোষ্ঠী সংক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সূত্র- বিবিসি নিউজ

  • 58
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে