করোনার প্রথম সারির তিন ভ্যাকসিন সম্পর্কে যা জানা দরকার

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২০; সময়: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ |
করোনার প্রথম সারির তিন ভ্যাকসিন সম্পর্কে যা জানা দরকার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনাভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশেই টিকা তৈরির চেষ্টা চলছে। যে কয়েকটি দেশ এখন পর্যন্ত এগিয়ে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাম তালিকার উপরের দিকেই আছে। দেশটিতে দ্রুতগতিতে ভ্যাকসিনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে তিনটি কোম্পানি—মডার্না, ফাইজার এবং নোভাভ্যাক্স।

মার্কিন সরকারের ‘অপারেশন র‌্যাপ স্পিড’ এই তিন কোম্পানির পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢালছে। অবশ্য সরকারের সহায়তা পাওয়া এমন আরো পাঁচটি কোম্পানি রয়েছে। একটি কারণেই সরকার অর্থ দিচ্ছে; তা হলো- ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে নিরাপদ ও কার্যকর একটি ভ্যাকসিনের ৩০০ মিলিয়ন ডোজ নিশ্চিত করা।

একটি ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে তিনধাপে উত্তীর্ণ হতে হয়। প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন কার্যকর ও নিরাপদ কি-না দেখার জন্য কিছু সংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানো হয় একদল মানুষের ওপর, এতে সম্ভাব্য বিভিন্ন ডোজের প্রয়োগ হয়।

চূড়ান্ত ধাপ বা তৃতীয় পর্যায়টি ভ্যাকসিনের সুরক্ষা, কার্যকারিতা এবং অনুকূল ডোজ বোঝার জন্য অনুমোদন লাভের আগে সম্পন্ন করতে হয়। ওই তিন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিনের বিশাল পরিসরে তৃতীয় ট্রায়াল পর্ব চলছে। যদি ভ্যাকসিন প্রার্থীদের পরখের মধ্য দিয়ে সব ঠিকঠাক মতো সম্পন্ন হয়, তাহলে অনুমোদনের জন্য মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের কাছে যাবে।

এই তিনটি ভ্যাকসিন কোন অবস্থায় আছে ও কতটা নিরাপদ তা জেনে নেয়া যাক—

মডার্না

মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্নার mRNA-1273 ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল হয় মে মাসে। প্রতিষ্ঠানটি শেষ ধাপের ট্রায়াল শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে গত সপ্তাহে। কোম্পানিটি ৩০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষসহ দেশটির ৮৯টি ক্লিনিক্যাল গবেষণা সাইটকে সংযুক্ত করেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী অপারেশন র‌্যাপ স্পিডের অধীনে শুরু হওয়া এটাই প্রথম তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল।

মর্ডানার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ট্রায়ালের ফলাফল এখনো আসেনি। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা গেছে, ভ্যাকসিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাড়া দিচ্ছে। গবেষকরা এটাই দেখতে চেয়েছিলেন। ডোজ যত বেশি হবে, প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়াও তত বেশি হবে।

মর্ডানার ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণকারীর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, শীত, মাথাব্যথা, পেশির ব্যথা আর ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা অনুভূত হওয়া। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এগুলোকে সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবেই দেখা হয়। ডোজ যত বেশি হবে, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তত বেশি হবে। তৃতীয় ট্রায়ালে মাঝারি ডোজ ব্যবহার করা হবে।

ফাইজার

জার্মানির বায়োএনটেকের সঙ্গে মিলে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে ফাইজার। গত সপ্তাহ থেকেই তারা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল একসঙ্গে চালাচ্ছে। বিশ্বের ১২০ জায়গায় BNT162b2 ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং জার্মানি।

প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে ১২০ জন ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে। ওই ফলাফলে দেখা গেছে, ভ্যাকসিন প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় সাড়া দিচ্ছে এবং এন্টিবডি তৈরি করছে। কোম্পানি মনে করছে ‘ডাবল আর্ম’ পদ্ধতি ভ্যাকসিনটিকে আরো কার্যকর এবং দীর্ঘতর সুরক্ষা দেবে। তবে ভ্যাকসিনটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, অধিকাংশই হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, অবসন্নতা, এবং ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এটা তেমন গুরুতর না, এক থেকে দুই দিন স্থায়ী হয় বড়জোর।

যদি যৌথ ট্রায়াল সফল হয় তাহলে অক্টোবরের মধ্যেই রেগুলেটরি অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে। যদি জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন পেয়ে যায় তাহলে চলতি বছরের শেষ দিকে ১০০ মিলিয়ন ডোজ তৈরি করবে তারা। আর ২০২১ সালের শেষে আরো ১.৩ বিলিয়ন ডোজ উৎপাদ করবে।

নোভাভ্যাক্স

মেরিল্যান্ড-ভিত্তিক বায়োটেক নোভাভ্যাক্স আশা করছে আগামী মাসে তারা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করতে পারবে। তাদের প্রথম পর্যায়ের ১৩১ জন অংশ নেয়। ভ্যাকসিনের দুই ডোজ প্রয়োগে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অ্যান্টিবডির স্তর যে পর্যায়ে পাওয়া যায়, তা কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা লোকদের তুলনায় চারগুণ বেশি।

১০৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়। পেশী ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং জোড়ায় ব্যথা। এর মধ্যে একজনের হালকা জ্বরও ছিল। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো গড়ে দুইদিন বা তারচেয়ে কম সময় ছিল।

  • 9
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে