রাজশাহীতে হেসেখেলে ভোট দিলেন ভোটাররা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১; সময়: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে হেসেখেলে ভোট দিলেন ভোটাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক : অধিকাংশ কেন্দ্রের বাইরে বসেছে মিষ্টির দোকান। হেসেখেলে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। সবখানেই ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কেন্দ্র ঘুরে ভোটের একই চিত্র দেখা গেছে।

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বৃহস্পতিবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নয়টি ও তানোর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার আদালতের নির্দেশে তানোরের একটি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

কদমশহর কেন্দ্রে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী রূপালী রানীর (২৫) বলেন, ‘যত কই লাগারে ইংঞাক ভোট ইং এম আকাদা। ঝামেলা বাং হুইয়াকানা। নিত সারাদিন ভোট এমকইংঞালা।’ অর্থাৎ সবার আগে ভোট দিয়েছি। কোনো ঝামেলা হয়নি। এখন সারাদিন দেখব।

৫০ বছর বয়সী শিউলী রানী আঙুলের কালি দেখিয়ে বলেন, মানুষ লাইনে দাঁড়ানোর আগেই ভোট দিয়ে ফেলেছেন। আর চিন্তা নেই। হেসে হেসে একই কথা বললেন সেলিনা বেগম (৪৫)।

এ ইউনিয়নের রাজাবাড়িহাট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে লম্বা লাইনে ভোটারেরা। যত মানুষ কেন্দ্রের ভেতরে, তত মানুষ বাইরে। এই অবস্থা দেখে নৌকার প্রার্থী বেলাল উদ্দিন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামানের কাছে গিয়ে নিজের আশঙ্কার কথা জানালেন, ভোট গ্রহণে দেরি হচ্ছে।

তার মনে হচ্ছে, মানুষ বিরক্ত হয়ে ভোট না দিয়ে ফিরে যাবে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁকে বোঝালেন, একজন ভোটারকে তিনটি প্রতীকে সিল দিতে হচ্ছে। এ জন্য দেরি হচ্ছে। তারপরও এক ঘণ্টায় তার কেন্দ্রের ২ হাজার ২৮৬ ভোটারের মধ্যে ৩৫১ জন ভোট দিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে।

গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়নের চব্বিশনগর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে এসেও একই দৃশ্য দেখা যায়। মাঠভরে দাঁড়িয়েছেন ভোটারেরা। ভোট দিয়ে বের হলেন একজন বয়স্ক নারী শরিফা বেগম। বললেন, তাড়াতাড়িই ভোট দিতে পেরেছেন।

গৃহবধূ রাজিয়ার সুলতানা (২৭) বললেন, ‘এক মিনিটে ভোট দিয়েছি।’কেন্দ্রের বাইরে আশরাফুল ইসলাম জিলাপি ভাজা শুরু করেছেন। সেখানেও ভিড় জমতে শুরু করেছে।

এই ইউনিয়নের আলোকছত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে দেখা গেল ভোটকেন্দ্রের ভেতরের চেয়ে বাইরে মানুষের বেশি ভিড়। কেন্দ্রের ভেতরে শুধু নারীদের লম্বা সারি হয়েছে। পুরুষদের সারি ছোট।

ভোট দিলেন ছানোয়ারা বেগম (৪৫)। তিনি বললেন, তিনটি প্রতীকে সিল দেওয়ার কারণে ভোট দিতে একটু দেরি হচ্ছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের পাঠিয়ে দিয়ে পুরুষেরা হয়তো পরে ভোট দেবে। এ জন্য পুরুষদের সারিতে ভোটার কম।

এই কেন্দ্রের বাইরে মানুষের বেশি। গুনে দেখা গেলে কেন্দ্রের বাইরে ভোট উপলক্ষে ২২টি দোকান বসেছে। তার অর্ধেকই মিষ্টির দোকান। শিতেন্দ্রনাথ দাসের দোকানে রয়েছে ২০ পদের মিষ্টি। তার দোকানে ভোটারদের ভিড় বেশি।

দোকানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা বাবুলাল মুর্মুর সঙ্গে। বললেন, এটা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। মানুষ হেসেখেলে ভোট দেয়। ভোটের দিন কেউ কোনো কাজ করে না। কেন্দ্রের বাইরে এসে আড্ডা দেয়। দোকানে নিজে মিষ্টি খান, অন্যদের খাওয়ান।

দোকানে দাঁড়িয়ে জিলাপি ভাজছিলেন অমিত সাহা ও তার মা রিনা সাহা। রিনা সাহা বললেন, এখানে মিষ্টি বিক্রি হওয়ার নজির আছে। আগেও তাঁরা এসেছেন। ভালো বেচাকেনা হয়েছে। সে জন্য দোকান নিয়ে এসেছেন।

গোগ্রাম ইউনিয়নের আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯টা ৪ মিনিটে ২ হাজার ৯৯৭টি ভোটের মধ্যে ৩২০টি ভোট পড়েছে। সেখানেও সকাল সকাল ভোটারেরা ভোটকেন্দ্রে এসে হাজির হয়েছেন।

তানোরের চান্দুড়িয়া গাগরন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সোয়া নয়টায় ১ হাজার ১০০ ভোটের মধ্যে ৩২০টি ভোট পড়েছে। সেখানে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে উপচেপড়া ভিড়। সবখানেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে