ভোজ্যতেলের স্বনির্ভরতায় চমক থাকছে বাজেটে

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২২; সময়: ১২:১৫ অপরাহ্ণ |
ভোজ্যতেলের স্বনির্ভরতায় চমক থাকছে বাজেটে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোজ্যতেল উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সংকটের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ে।

এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাইস ব্রান অয়েল কিংবা সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়াতে পারলে এ নির্ভরতা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বাজেট-সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়াতে থাকছে বিশেষ নজর।

এছাড়া ভালো মানের বীজ সরবরাহ কিংবা মাঠপর্যায়ের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ারও চিন্তাভাবনা থাকছে ।

অন্যদিকে, বিভিন্ন রাইস ব্রান অয়েলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় তিন লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় প্রায় দুই লাখ টন সরিষার তেল। এগুলো পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসে।

এদিকে পুরোপুরি না হলেও আপাতত নির্ভরতা কমিয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ দেশীয় উৎস থেকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা ভাবা হচ্ছে।

এ কারণে আগামী বাজেটে সরিষা চাষ ও রাইস ব্রান ওয়েলের কাঁচামাল ধানের তুষ বা কুঁড়া সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা আসতে পারে বাজেটে।

তারা বলছেন, অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায়ই অস্থিতিশীল হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব। ফলে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে পরিশোধিত ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট উৎপাদনের ক্ষমতা ৫০ লাখ ৭৬ হাজার টন।

যার কাঁচামাল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। আমদানি করা সয়াবিন ও পামের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন। যার প্রায় ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

এছাড়া বিভিন্ন রাইস ব্রান অয়েল কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় তিন লাখ টন। স্থানীয়ভাবে প্রায় দুই লাখ টন সরিষার তেল উৎপাদিত হয়। যা পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরবরাহ হয়।

ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে আড়াই লাখ টন রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন সক্ষমতার ১৫টি কারখানা স্থাপিত হয়। এ পরিমাণ তেল উৎপাদনের জন্য ১৩ লাখ টন রাইস ব্রান (ধানের কুঁড়া) দরকার।

দেশের ভেতরে কুঁড়া উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায়। অথচ কোম্পানিগুলো প্রায় সাড়ে চার লাখ টন কুঁড়ার সরবরাহ পায়। যে কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন থেকে সরে এসেছে।

এনবিআর ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ এর এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ১১ হাজার টন রাইস ব্রান অয়েল রফতানি হয়েছে।

২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ এর এপ্রিল পর্যন্ত এক লাখ ২৪ হাজার টন রাইস ব্রান অয়েল রফতানি হয়েছে। খাত-সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশে যে পরিমাণ কুঁড়া উৎপাদন হয় তার সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারলে উৎপাদন সক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে