এবার অস্থির রসুনের বাজার

প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২২; সময়: ৪:৩৪ অপরাহ্ণ |
এবার অস্থির রসুনের বাজার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের আকাশচুম্বী দামের পর এবার ‘ঝাঁজ’ বাড়ছে আমদানীকৃত রসুনেরও। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কয়েক দিনের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ২০ টাকা।

কয়েক দিন আগেও পাইকারি এই মোকামে চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। কিন্তু এখন প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১২৮ টাকায়।

সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) বন্ধ করায় পণ্যটির দাম বেড়েছে। তবে রসুন আমদানিতে আইপি বন্ধ না করার পরও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে দাম। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরবরাহ সংকট ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াকে দুষছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্নিষ্টরা। তবে সঠিক চিত্র উদ্ঘাটন করতে মনিটরিং জোরদারের দাবি ক্যাবসহ ভুক্তভোগীদের। ট্যারিফ কমিশন ও টিসিবির তথ্যমতে, দেশে রসুন আমদানির ৯৬ শতাংশই চীন থেকে আসে।

স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জের প্রায় প্রতিটি আড়তের সামনে ও ভেতরে পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা রসুন বিক্রির জন্য সারি সারি বস্তায় রাখা হয়। তবে সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় অনেক আড়তে নেই পর্যাপ্ত আমদানি করা রসুন। কিছু আড়তে আগের কেনা কিছু রসুন থাকলেও তাও শেষের দিকে। জানতে চাইলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশের রসুনের বাজার পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভরশীল।

সেখানে পণ্যটির দাম কিছুটা বাড়লে বা কোনো কারণে সরবরাহ কিছুটা কমে গেলে এখানকার বাজারে তার প্রভাব বেশি পড়ে। এখন চীন থেকেপর্যাপ্ত রসুন আমদানি হচ্ছে না। এ কারণে রসুনের দাম বেড়ে গেছে।

কাঁচা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জের কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, রমজান মাসে চীনের রসুনের দাম ছিল পড়তির দিকে। দাম কমতির দিকে থাকায় অনেকে আমদানি বন্ধ করে দেয়। তার মধ্যে গত মাসে রসুন আমদানির এলসিও কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন বাজারে যেসব রসুন আছে, তা আগের এলসি করা। এসব কারণে বাজারে রসুনের সরবরাহ কমেছে। চীনে পণ্যটির দামও এখন কিছুটা বাড়তির দিকে। যার প্রভাব পড়েছে এখানকার বাজারে।

খাতুনগঞ্জে রসুনের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এরই মধ্যে খুচরা পর্যায়ে পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। অথচ কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ট্যারিফ কমিশন ও টিসিবির তথ্যমতে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ছয় লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সর্বশেষ ছয় মাসে ৫২ হাজার ৪৬১ টন রসুন আমদানি হয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে চীন থেকে ২৯ হাজার ৩৫৯ টন রসুন আমদানি করা হয়। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৫৬ হাজার ৪৭১ টন, যার মধ্যে প্রায় ৯৬ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশে বর্তমান উৎস বিবেচনায় রসুনের ক্ষেত্রে চীনের বিকল্প কোনো দেশ নেই বললেই চলে।

বাজার মনিটরিং জোরদারের তাগিদ : ব্যবসায়ীরা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে উল্লেখ করে ক্যাবের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে রসুনের দামও অনেক বেড়ে গেছে। সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি আপাতত বন্ধ করায় সংকটের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কিন্তু রসুন আমদানির ক্ষেত্রে তো সরকার আইপি বন্ধ করেনি; তার পরও দাম কেন বাড়ছে? ভোক্তাদের এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুনের দামও অনেক বাড়ার অভিযোগ পেয়েছি। শিগগির সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে