টেলিভিশন বাজারে দেশি ব্র্যান্ডের আধিপত্য

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১; সময়: ১২:০২ অপরাহ্ণ |
টেলিভিশন বাজারে দেশি ব্র্যান্ডের আধিপত্য

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশের টেলিভিশন বাজারের শতকরা প্রায় ৬৫ ভাগ বর্তমানে দেশীয় ব্র্যান্ডের দখলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশে’র এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

সংস্থাটি বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাবি মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা ড. মো. নাজমুল হুসেইন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিগত এক দশকে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে এই বাজারের আকার ছিল ৩.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবৃদ্ধির এই হার বজায় থাকলে ২০২৫ সালে নগদ এই বাজারের আকার দাঁড়াতে পারে ৫.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এই প্রবৃদ্ধির পেছনে গ্রামাঞ্চলে দ্রুত বিদ্যুতায়ন, দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ন, মাথাপিছু আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বপরি জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণার বরাতে ড. মো. নাজমুল হুসেইন বলেন, সামগ্রিক ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারের মতোই টেলিভিশনের বাজারও ক্রমবর্ধমান। বর্তমান বাংলাদেশে মোট বিক্রিত ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মধ্যে টেলিভিশনের মার্কেট সাইজ ৩০.০৩ শতাংশ। ২০২০ সালে টেলিভিশনের মার্কেট সাইজ ছিল ৬৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সমগ্র টেলিভিশন শিল্পকে ‘গ্রে-মার্কেট’ বিবর্ণ করছে। স্টিকার ভিত্তিক চীনা পণ্যের সমন্বয়ে গ্রে-মার্কেট গঠিত। অসত্য ডিক্লারেশেনের মাধ্যমে অননুমোদিত চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য আসছে। গ্রে-মার্কেটের কারণে টেলিভিশন শিল্পে সক্রিয় কোম্পনিগুলো বেশ অস্বস্তি এবং শঙ্কায় থাকে। বিশেষজ্ঞ মত ও এমডব্লিওবি’র পর্যবেক্ষণ হলো- এটা ২০ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। ২০১৭-১৮ তে এটা ছিল ৩০-৩৫ শতাংশ। গ্রে-মার্কেট হ্রাস পাচ্ছে উল্লেখ করে এর পেছনের কারণ হিসেবে বলা হয়, সুবিধাজনক মূল্যে দেশীয় পণের সহজলভ্যতা।

গবেষণায় টেলিভিশন ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ক্রেতা সন্তুষ্টি-অসন্তষ্টির মাত্রা যাচাই করেছে সংস্থাটি। এতে সর্বনিম্ন ৭০, আর সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহারকারী তাদের ব্যবহৃত টেলিভিশনগুলোতে সার্বিকভাবে কোনো সমস্যা না থাকার কথা জানিয়েছেন।

গবেষকরা বাজারে বিদ্যমান টেলিভিশনগুলোর ব্যবহারকারীদের কিছু অভিযোগ পাওয়ার কথা জানান। এগুলো মধ্যে স্ক্রিন/পিকচার/কালার প্রবলেম থাকা, সাউন্ড প্রবলেম, পুরাতন একঘেয়ে মডেল/ডিজাইন উল্লেখযোগ্য।

সংস্থাটি তাদের গবেষণায় দেশীয় টেলিভিশন ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। সুপারিশগুলো হলো- দেশীয় টেলিভশনগুলোর এমনভাবে প্রমোশনাল ডিজাইন করতে হবে যাতে টেলিভিশন ক্রয়ে যারা ভূমিকা রাখেন তাদের সবাইকে স্পর্শ করে। শুধুমাত্র অধিক পরিমাণ বিক্রির প্রতি নজর না দিয়ে কোয়ালিটি বৃদ্ধি করা। অন্যান্য সুপারিশগুলো হলো- উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে মাল্টিব্র্যান্ডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা, লেটেস্ট ফিচার যোগ করা, ওয়ারেন্টি অনুযায়ী কাস্টমার সেবা প্রদান করা, অনলাইন মার্কেটিং, ফ্রি ইনসটলেশন ও ডেলিভারি, ইএমআই সুবিধা প্রদান করা, ক্রেতাদের অভিযোগ শোনার জন্য ২৪/৭ কলসেন্টার এবং চ্যাটবটের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা, গবেষণা ও উন্নয়নে অধিক বিনিয়োগ করা।

গবেষণা সংস্থাটি দেশীয় টেলিভিশন শিল্পের বিকাশে সরকারের করণীয় কিছু বিষয় জানিয়েছে। সেগুলো হলো- নকল টিভির আমদানি সংযোজন ও বিক্রি বন্ধ করা, গ্রে-মার্কেটকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিদেশি টিভির ওপর বর্ধিত করোরোপ এবং কর আদায় নিশ্চিত করা, দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে টিভি তৈরির সরঞ্জাম ও কাঁচামাল আমদানিতে কর কমানো, রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং রপ্তানীকারকদের আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে