দুশ্চিন্তায় ১১ হাজার বিওধারী

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২১; সময়: ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ |
দুশ্চিন্তায় ১১ হাজার বিওধারী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আবারও অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার বিনিয়োগকারী। এঁরা সবাই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত বানকো সিকিউরিটিজের নামের ব্রোকারেজ হাউসের বিনিয়োগকারী। মঙ্গলবার থেকে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এ কারণে হাউসটির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউসটির বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত হিসাবে প্রাথমিকভাবে ৬৬ কোটি টাকার ঘাটতি পাওয়া গেছে। তাই ডিএসই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি গত সোমবার রাতে ডিএসইর পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তিরা যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউসটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) মালিকানার সঙ্গে যুক্ত মোট ছয় পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য গতকালই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউসটির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লেনদেন করতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও শেয়ারবাজারের পরিচিত মুখ অধ্যাপক আবু আহমেদ। ব্রোকারেজ হাউসটিতে আবু আহমেদের নিজের ও আত্মীয়স্বজনের মিলে একাধিক বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ছিল। প্রায় দেড় বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয় তাঁকে। তাই আবু আহমেদ ও তাঁর নিকটজনের নামে থাকা একাধিক বিও হিসাবের থাকা নগদ টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠিত এ শিক্ষক। এ অবস্থায় গতকালই তিনি নগদ টাকা ফেরত পেতে ডিএসইর কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। আবু আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন, অনেক দিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। ডিএসইও বিষয়টি আগে থেকে জানত। তাহলে শুরুতে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এত দিন দেরি করা হলো কেন?

আবু আহমেদের মতো এ প্রশ্নের উত্তর প্রতিষ্ঠানটির অনেক বিনিয়োগকারীর। যাঁদের প্রতিষ্ঠানটির বিও হিসাবে হয় শেয়ার কেনা আছে, নয়তো শেয়ার বিক্রির নগদ টাকা পড়ে আছে। জানা গেছে, বানকো সিকিউরিটিজের বিও হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১১ হাজার ৪৭৯ জন। গতকাল লেনদেন বন্ধের খবরে বেশ কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ভিড় করেন। লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হলেও ব্রোকারেজ হাউসটির কার্যালয় খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে ডিএসই।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বানকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন আবদুল মুহিত ও পরিচালক (ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্বে) হিসেবে আছেন শফিউল আজম। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সম্পর্কে এ দুজন মামা–ভাগনে। এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসটির পরিচালক হিসেবে আছেন আরও চারজন। এঁদের মধ্যে আবদুল মুহিত যুক্তরাজ্যপ্রবাসী, তবে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে দেশে ব্রোকারেজ হাউসটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শফিউল আজম। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও এমডির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের মুঠোফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ডিএসইর পক্ষ থেকে দুজনের সঙ্গেই আলাদাভাবে যোগাযোগ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যখনই ডিএসইর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত হিসাবের অর্থ ঘাটতির বিষয়ে তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তখন এ জন্য একে অপরকে দুষছেন। কেউ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না।

এদিকে ব্রোকারেজ হাউসটিতে থাকা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার যাতে স্থানান্তর করা না যায়, সে জন্য বানকো সিকিউরিটিজের ডিপি (ডিপজিটরি পার্টিসিপেন্ট) কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লেনদেন ও ডিপি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউসটির কোনো বিনিয়োগকারী মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নিতে পারেননি। জানতে চাইলে ডিএসইর সভাপতি ইউনুসুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউসটির লেনদেন স্থগিতের পাশাপাশি অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যাতে প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আমরা আমাদের দিক থেকে করণীয় সব ব্যবস্থায় গ্রহণ করেছি।’

সাধারণত শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা ব্রোকারেজ হাউসের (বর্তমানে ট্রেডিং রাইটস এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বা ট্রেক হিসেবে পরিচিত) মাধ্যমে লেনদেনে অংশ নেন। শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীরা তাঁদের পছন্দের বিও হিসাবের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসে টাকা জমা দেন। একটি ব্রোকারেজ হাউসে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব থাকে। এসব বিও হিসাবে জমা হওয়া টাকা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস তাদের ব্যাংক হিসাবে বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত অর্থ হিসেবে জমা করে। যেহেতু ওই ব্যাংক হিসাব ব্রোকারেজ হাউসের নামে থাকে, তাই সেখানে রাখা বিনিয়োগকারীদের অর্থ তছরুপের সুযোগ থাকে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারের।

এর আগে গত বছরের জুনে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ। প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন এখনো স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ওই ব্রোকারেজ হাউসের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখনো তাঁদের অর্থ ফেরত পাননি। আবু আহমেদ বলছেন, প্রায় এক বছর আগে তাঁর বিও হিসাব থেকে শেয়ার বিক্রির টাকা তুলতে গেলে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়। সে সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসইর সহায়তায় তিনি ধাপে ধাপে কিছু টাকা ফেরত পেয়েছিলেন। তাই আরও আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন বানকোর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এ পুঁজিবাজার বিশ্লেষক।

  • 2
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে