চারঘাটে বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২০; সময়: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ |
চারঘাটে বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ

নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট : রাজশাহীর চারঘাটে বানিজ্যিক ভাবে হচ্ছে মৌচাষ। উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের ফকিরপাড়া, শলুয়া ইউনিয়নের বালাদিয়ার ও ইউসুফপুর ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষককে এই মৌচাষ করতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাগান ও কৃষি জমির মালিকদের সহায়তায় কয়েকজন মৌচাষী স্ব-উদ্দ্যেগে মৌচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় স্থানীয় তরুনরাও মৌচাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

ভৌগলিক আবওহাওয়ার অনুকুলের জন্য পদ্মা বড়াল বিধৌত উপজেলার মাটি খুবই উর্বর। এই সকল জমিতে বিভিন্ন ফলজ আবাদসহ সকল ধরণের সবজির আবাদের জন্য উপযোগী। মূলত লিচু, ভুট্টা, সরিষা, ধনে ও কালিজিরা ফুল হইতে উৎকৃষ্টমানের মধু তৈরি হয়। ফলে মৌচাষীরা মুলত লিচু, সরিষা, ধনে ও কালিজিরা চাষের সময়টা মৌচাষের উপযুক্ত সময় বিবেচনায় করে। মৌমাছি এই সব গাছপালার মিষ্টি ফুলের রস ও পরাগরেণু সংগ্রহ করে। মৌমাছিদের সংগৃহিত পরাগরেনু দিয়ে বাচ্চা মৌমাছিদের খাওয়ানো হয়। ফুলের রস দিয়ে মৌমাছিরা মধু তৈরি করে মধুঘরে চাকে জমা করে।

স্থানীয় ভুট্রা চাষী কৃষক আশা জানান, লিচু বাগানে ফুল আসার সময় মৌমাছিদের মধু সংগ্রহের কারনে পরাগায়নে সহায়তা করে ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী লিচু ফল উৎপাদন বেশি হয়। মধু চাষীদের পাশাপাশি আমরা ফল বাগান চাষীরাও বেশি ফল আশায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হই।

একই কথা বলেন সরিষাচাষী কৃষক জানান, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া হামেদের আমের বাগানে প্রায় ৩ শত বাক্সে মৌচাষ করছেন স্থানীয় মৌচাষী মমিন, নারায়ন মন্ডল, হৃদয় মন্ডল, রুবেল, আলিম। প্রতিটি বাক্সে ৫ টি করে মৌচাক রয়েছে এবং প্রতিটি বক্স থেকে সপ্তাহে প্রায় ৩ কেজি থেকে ৫ কেজি মধুর উৎপাদন হয় এবং প্রতিমাসে সকল মোট প্রায় ১ হাজার কেজি মধু উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি লিচু মধু ৫ শত টাকা, সরিষা মধু ৩শত ৫০ টাকা ও ধনে/কালিজিরা মধু ৬শত টাকা দরে পাইকারী বিক্রয় হয় বলে জানান স্থানীয় মৌচাষীরা।

মৌচাষী মমিন বলেন, নাটোরের তমালতলার মনিরের কাছ থেকে আমরা রাণী মৌমাছি সংগ্রহন করি। সাধারনত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত উপজেলার নন্দনগাছির ফকিরপাড়া ও বালাদিয়ার এলাকায় এবং অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সরিষা মধুর জন্য পাবনায়, ধনিয়া বা কালিজিরার জন্য মাদারীপুর এলাকায় ও লিচু মধুর জন্য নাটোরের নাজিরপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

উৎপাদিত মধুগুলো ২১ থেকে সাড়ে ২২ গ্রেটের হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এর ব্যপকহারে চাহিদা রয়েছে। এসকল উৎপাদিত মধূগুলো পাবনার রিয়াদ মধূ, ফুল মধু, বানেশ্বর বাজারের মডার্ণ হারবাল পাইকারী ক্রয় করে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করে থাকে।

উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন নাহার বলেন, এবিষয়ে বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করা হয়েছে এবং মৌচাষ কৃষকদের পরার্মশ দেন। মৌচাষের ফলে মৌমাছি কৃষি জমিতে পরাগায়নে সহায়তা করার জন্য কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন বেশি হয়। এতে কৃষি জমিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ফসল উৎপাদনের ফলে যেমন কৃষক লাভবান হবে তেমনি অধিক ও উৎকৃষ্ট মধূ উৎপাদন করে মৌচাষীরা লাভবান হবে। তাছাড়া ক্ষুদ্র মৌচাষীদের সরকারের এনএটিপি’র এআইএফ-৩ প্রকল্পের আওতায় এককালীন সহায়তা করা হয়।

  • 1
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে