‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হতেই বাতিল পোশাক খাতের ৬ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২০; সময়: ৫:৪০ অপরাহ্ণ |
‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হতেই বাতিল পোশাক খাতের ৬ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ইউরোপে ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। এর ফলে তৈরি পোশাকের চাহিদাও কমে যাওয়ায় প্রায় ৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল করেছে আন্তর্জাতিক তিনটি প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো সুইডেনের এইচএন্ডএম, ফরাসী খেলাধূলার সামগ্রী ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিক্যাথলন এবং আয়ারল্যান্ডের প্রাইমার্ক।

সংস্থাটির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘এই নিয়ে মোট ৭টি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত অর্ডার বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। মোট ১ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার সরাসরি বাতিল হয়েছে আর স্থগিত করা হয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার।’

করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হওয়ায় কি পরিমাণ অর্ডার বাতিল হয়েছে তার হিসাব রাখতে একটি ওয়েব পোর্টালও চালু করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

তবে বাংলাদেশ থেকে অর্ডার বাতিলের বিষয়টি অস্বীকার করেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ায় এইচএন্ডএম এর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান। তিনি জানান যদি কোন ধরনের অর্ডার বাতিল করে তাহলে ক্ষতিপূরণ দেবে প্রতিষ্ঠানটি।

জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ইউরোপের কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে লকডাউন শুরু হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে কিছু কিছু পণ্যের শিপমেন্ট আমরা স্থগিত করেছি ২ সপ্তাহের জন্য। অন্য কোন দেশে পণ্যগুলো পাঠানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।’

বরং কোভিড পরিস্থিতি শুরু হবার পরও বাংলাদেশে অর্ডার বাড়িয়ে দিয়েছে এইচএন্ডএম, বলে জানান তিনি।

তবে বর্তমানে বিশ্বের বায়ার বা ক্রেতারাই এখন অনেক ভেবেচিন্তে অর্ডার দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

তবে করোনার প্রথম প্রবাহের সময়ও এমনটাই করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সেসময় প্রায় ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করে এইচএন্ডএম, যা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ।

সেসময় বিদেশি বায়ার বা ক্রেতারা তাদের অর্ডার বাতিল করে দেওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদন কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

উইন্ডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন খান বলেন, ‘লকডাউনের কারণে অন্যতম ইউরোপিয়ান বায়ার তাদের অর্ডার ১৮ অক্টোবর থেকে বন্ধ করে রেখেছিল। এখন তারা আবার অর্ডার দেওয়া শুরু করলেও পরিমাণে তা খুবই কম।’

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আরও একটি দেশ অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে লকডাউনের কারণে। তবে আগামী ২০ ডিসেম্বর নাগাদ লকডাউন উঠে গেলে আবারও অর্ডার শুরু হবে বলে আশা করেন মেসবাহ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই কাজের সংকটে আছে ব্যবসায়ীরা। আসছে দিনগুলোতে শ্রমিকদের বেতন আর অন্যান্য খরচ কিভাবে মেটাব, আমরা জানি না’।

কয়েকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানও অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বায়ারদের ধরন অনুযায়ী অর্ডারের রকমফের হয়। কয়েকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান অর্ডার স্থগিত করেছে, তবে কোন অর্ডার এখনও বাতিল করেনি তারা।’

মেসবাহ উদ্দিন ও মোস্তাফিজ উদ্দিনের মতো একই কথা বললেন অনন্ত অ্যাপারেলস এর ব্যবস্থাপক শরিফ জহির। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেই লকডাউন চলছে, আর একারণেই অর্ডার বাতিল আর স্থগিত করে দিচ্ছেন বায়াররা। অনেক ব্র্যান্ডই তাদের দোকান ও শোরুম বন্ধ করে দিয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলে তবে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা চরম পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন বলেও জানান শরিফ জহির।

বিজিএমইএ এর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম বলেন, ‘কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকে নেমে এসেছে অর্ডার। এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে অর্ডার ঘাটতির কারণে চরম ক্ষতির মুখোমুখি হবেন ব্যবসায়ীরা।’

  • 14
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে