কোভিডে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দর বৃদ্ধি অব্যাহত, মজুদ বাড়াচ্ছে সরকারগুলো

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২০; সময়: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ |
কোভিডে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দর বৃদ্ধি অব্যাহত, মজুদ বাড়াচ্ছে সরকারগুলো

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মহামারিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ চক্র জুড়ে দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা। কায়রো থেকে ইসলামাবাদ; সর্বত্রই নানা দেশের সরকার একারণে জাতীয় চাহিদা পূরণে কৃষিজ পণ্য ক্রয়ের মাত্রা বাড়িয়েছে।

ইতোমধ্যেই, গমের রেকর্ড মজুদ করেছে জর্ডান। অন্যদিকে, দানাদার শস্যটির শীর্ষ ক্রেতা মিশর সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তা আরও বেশি মাত্রায় আমদানির পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটিতে ফসল সংগ্রহের মৌসুম চলাকালে এ পদক্ষেপ ব্যতিক্রমও বটে। এপ্রিল থেকে মিশরের ক্রয় ৫০% বেড়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাইওয়ান তাদের কৌশলগত খাদ্য মজুদের পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। আর চীন নিজ দেশের শুকরপালের খাদ্যের জন্যেও শস্য আমদানির মাত্রা বাড়ায়।

করোনাভাইরাসের কারণে বন্দর পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটবে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের প্রচলিত ব্যবস্থায় ধ্বস নামবে- আগেভাগে ক্রয়ের এ প্রক্রিয়া সরকারি পর্যায়ে সেই আশঙ্কার বিষয়টি তুলে ধরছে।

তাছাড়া, মহামারির কারণে কৃষি খামার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা যথেষ্ট নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে পড়ে। উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বাজার চাহিদা অনুসারে সরবরাহ করার প্রক্রিয়া বাড়তি এ চাপে পড়ার কারণ, বিশ্বব্যাপী ক্রেতারাও তাদের ক্রয়াভ্যাস বদলেছেন। ফলে তারা অর্থনৈতিক সঙ্কটের মাঝে ভবিষ্যতের চিন্তায় খাদ্য পণ্য কেনায় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে এ প্রবণতার সাক্ষী দিচ্ছে সুপারমার্কেটগুলোর খালি পণ্যের তাক।

বৈশ্বিক পণ্যবাজার বিশ্লেষক ফ্রান্সিসকো ব্লাঙ্ক- এর গবেষণার ভিত্তিতে ব্যাংক অব আমেরিকা কর্প সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে জানায়, ”কোভিড-১৯ এর কারণে ক্রেতারা শুধু বর্তমানের জন্যই খাদ্য কিনছেন না। বরং তারা ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা করেও বাড়তি মজুদ করছেন।”

“একারণেই কিছু দেশের স্থানীয় উৎপাদন ভোক্তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ ভবিষ্যতে সরবরাহ চক্রে অস্থিরতার চিন্তায় ভোক্তারা এখন প্রয়োজনের চাইতে বেশি মজুদে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।”

ভুট্টা, গম এবং সয়াবিনের মতো প্রধান প্রধান শস্যের দর ইতোমধ্যেই বাড়তির দিকে। বেশকিছু ঘটনা এজন্য দায়ী। চীনে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যা স্থানীয় ফসল নষ্ট করে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রথম দফা বাণিজ্য চুক্তির শর্তের অধীনেও শস্যক্রয় বাড়ায় দেশটি।

তবে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে, বেইজিং মহামারি থেকে শিক্ষা নিতেই বেশি আগ্রহী। একারণেই, নিজ মজুদ পর্যাপ্ত মাত্রায় রাখতে চায়। এতে করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সরবরাহ চক্রে ব্যাঘাত দেখা দিলেও স্থানীয় মজুদের মাধ্যমে ভোক্তাদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।

পরিস্থিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জড়িত কর্মকর্তারা গত মাসেই এ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আব্দুলরেজা আব্বাসিয়ান জানান, নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চক্র নিয়ে উদ্বেগ থেকেই কিছু দেশ বাড়তি খাদ্য আমদানির পথে হাঁটছে।

পাকিস্তান এবং মিশরের মতো হাতেগোণা কিছু দেশ শস্যের কৌশলগত মজুদ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিলেও, এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করে তাদের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ নিয়ে শঙ্কা, স্থানীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় কোভিডের সরাসরি প্রভাব এবং ভোক্তা পর্যায়ে দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা।

আবার তুরস্ক এবং মরক্কোর মতো কিছু দেশও আশানুরূপ ফসল উৎপাদন না হওয়ায় আমদানির পথ বেঁছে নেয়।

রোম থেকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে আব্বাসিন বলেন, ”এখন যারা বাড়তি আমদানি করছে, তারা আগামী বছর এমনটা নাও করতে পারে। কারণ, তখন আর বাড়তি আমদানি করার প্রয়োজন থাকবে না।”

অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি এ ব্যাখ্যা দিয়ে আরও জানান, ”আসন্ন শীতকালে গমের মতো প্রধান শস্যের ফলন ভালো না হওয়ার অনুমান করা হচ্ছে। আর এমনটা হলে আমদানির পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে এর দামও অনেকটা বাড়বে।”

বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতি চীনের চাহিদা এবং কৃষ্ণ সাগর এলাকায় দেখা দেওয়া খরার কারণেও কৃষি পণ্যের ক্রয় বাড়িয়েছে অনেক দেশ। বাজারমূল্যে যেকারণে আরও উঠতির দিকে।

এপ্রভাব যুক্ত হয়ে ব্লুমবার্গের কৃষিপণ্য বাজার সূচক এগ্রিকালচারাল সাব-ইনডেক্স জুনের পর থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।

১৪০ কোটি বেশি ভোক্তার দেশ চীন তার প্রায় নিঃশেষিত চিনির মজুদও নতুন ক্রয়ের মাধ্যমে পূরণ করা শুরু করেছে, বলে জানান ব্রাজিলের শীর্ষ চিনি এবং ইথানল উৎপাদক কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জিওভানে কনসাল।

চীনের এ বাড়তি চাহিদা আগামী বছর বাজার দরে আরেকদফা উত্তাপ ছড়াতে পারে। কারণ দেশটি লৌহ আকরিক থেকে শুরু করে সয়াবিন প্রায় সকল পণ্যেরই শীর্ষ আমদানিকারক। ইতোমধ্যেই পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বিপুল আকারের রাষ্ট্রীয় মজুদ সক্ষমতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বেইজিং।

কমার্জব্যাংক এজি বিশ্লেষক ড্যানিয়েল ব্রাইজম্যান সম্প্রতি এক গবেষণা নোটে জানান, ‘চীন যদি এধরনের বড় ক্রয়ের পথে সত্যিই হাটে, তাহলে তা বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের দর বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হবে।’

সূত্র: ব্লুমবার্গ

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে