করোনায় স্টীলের তৈরি ফার্নিচার ব্যবসায় ধস

প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২০; সময়: ১:৪৯ অপরাহ্ণ |
করোনায় স্টীলের তৈরি ফার্নিচার ব্যবসায় ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার ধাক্কা স্টীলের তৈরি ফার্নিচার ব্যবসায়। লকডাউনের তুলে নেওয়ার পর বেচাবিক্রি কিছুটা শুরু হলেও লকডাউনের পূর্বের মতো স্বাভাবিক বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। অনেক দোকানদার ব্যাংকের ঋণের জালে জর্জরিত।তবে ঋণ নিয়েই রাজশাহীতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন স্টীলের তৈরি ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, বেচাবিক্রি কম হলেও প্রতিদিন কিছু না কিছু বিক্রি হচ্ছে। যা দিয়ে দোকানভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাসের সময়ের পূর্বে যা বেচাকেনা হতো তার অর্ধেকে নেমে এসেছে বেচাকেনা। তার ওপর অল্প লাভেই ছেড়ে দিচ্ছে হচ্ছে পণ্য। লকডাউনের সময় দোকানপাট বন্ধ থাকায় যা সম্ভব ছিলো না।

রাজশাহীর কাদিরগঞ্জ গ্রেটাররোড এলাকায় ১৪০টি স্টীলের ফার্নিচারের দোকান রয়েছেন।দোকানের পাশেই খোলা কারখানা। ঢাকা থেকে স্টীলের তৈরি পাইপ কিনে এনে তারা সেখানেই খাট, আলমারী, শো-কেস, আলনা, চেয়ার, সোফা এসব আসবাবপত্র তৈরি করে বিক্রি করছেন।কাদিরগঞ্জ গ্রেটার রোড ছাড়াও মহানগরীর ভদ্রা, নওদাপাড়া, তালাইমারী, কাটাখালী এলাকায় স্টিলের ফার্নিচার তৈরির দোকানপাট রয়েছে।

রাজশাহীর মহানগরীর কাদিরগঞ্জ গ্রেটার রোডে নিউ সৌখিন স্টীল থেকে স্টীলের খাট, আলনা, খাটিয়া ও সোফা নিজস্ব কারখানায় তৈরি করে বিক্রি করা হয়।লকডাউনের পর কোনো মাসে ৪০টির মতো খাট, আলমারী ও সোফা বিক্রি হচ্ছে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেক। খাটের দাম ৪ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।

নিউ সৌখিন স্টীলের বিক্রয়কর্মী আসান জানান, ঢাকা থেকে স্টিলের পাইপ কিনে নিয়ে এসে শো-রুমের সাথে লাগোয়া ছোট কারখানায় মিস্ত্রি দিয়ে এসব খাট তৈরি করা হয়। দুইজন মিস্ত্রি সবসময় কাজ করছেন। প্রধানত স্টীলের তৈরি খাটই তৈরি করা হয়।তবে আলনা, খাটিয়া ও সোফা অর্ডার পেলে তৈরি করা হয়।লকাউনের সময় পুরো দোকানপাট বন্ধ ছিলো।

রিফাত স্টীলে শুধু আলমারী তৈরি করা হয়। বাসাবাড়ির আলমারীর দাম ২২ হাজার টাকা আর অফিসের আলমারীর দাম ১১ হাজার টাকা। মিস্ত্রি শামসুল জানান, ছোট কারখানা। আমরা দুইজন মাত্র মিস্ত্রি কাজ করছি। সপ্তাহে একটা আলমারী তৈরি করা হয়। তবে কাজ না থাকলে আমরা অর্ডার নিয়ে অন্য কাজ করে দিই। করোনা ভাইরাসের আগে বেচাবিক্রি ভালো ছিলো। এখন বিক্রি কম হচ্ছে।যা বিক্রি হচ্ছে তা অল্প লাভেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

তুষার মেটালে খাটিয়া বেশি তৈরি করা হয়। সেখানকার বিক্রয়কর্মী আব্দুল সোলাইমান জানান, লকডাউনের পূর্বে ব্যবসা ভালো ছিলো, এখন ব্যবসা কমে গেছে।তবে যাদের বিনিয়োগ বেশি তাদের ব্যবসাও ভালো।ছোট বেশিরভাগ দোকানই লোন নিয়ে চলছে।অনেকে দোকানে যেখানে ছয়জন কর্মী ছিলো এখন সেখানে তিনজন কর্মী নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।

স্টীলের স্থান দখল করেছে মেলামাইন ও এমডিএফ বোর্ডের তৈরি আসবাবপত্র : তবে স্টীলের তৈরি শো-রুমে গেলে প্রথমেই একটা ধাক্কা লাগতে পারে। সব শো-রুমের নাম স্টীলের নামে হলেও শো-রুমের ভেতরে রয়েছে মেলামাইন বোর্ড ও এমডিএফ বোর্ডের তৈরি ফার্নিচার।তবে আলাদাভাবে স্টীলের ফার্নিচারের শো-রুমও রয়েছে।

রাজশাহীর কাদিরগঞ্জ গ্রেটার রোডে অবস্থিত সেঞ্চুরী স্টিল ফার্নিচারের সত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান। তার সাইনবোর্ডে বড় বড় হরফে লেখা সেঞ্চরী স্টিল ফার্নিচার থাকলেও শো-রুমের ভেতরে স্টিলের কোনো আসবাবপত্র দেখা গেল না।শো-রুম ভর্তি দেশীয় এমডিএফ ও মেলামাইন বোর্ডের তৈরি ফার্নিচার।খাট, আলমারী, ড্রেসিংটেবিল, ওয়ার্ডরোব, শো-কেস, ডাইনিং টেবিলসহ সব ধরনের আসবাবপত্রই রয়েছে।বেচাবিক্রিও ভালোই চলছে।

শো-রুমটির সত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান জানান, আমি সতের বছর ধরে স্টীলের তৈরি আসবাবপত্রের ব্যবসা করছি। আগে সব ফার্নিচারই স্টিলের তৈরি ফার্নিচার ছিলো।বেচাবিক্রিও ভালো হতো। কিন্তু এখন স্টীলের তৈরি আসবাবপত্রের পরিবর্তে দেশীয় এমডিএফ বোর্ড ও মেলামাইন বোর্ডের তৈরি আসবাবপত্র বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। লোকজন সেসব পণ্যই বেশি কিনছেন। তাই স্টীলের পরিবর্তে এমডিএফ ও মেলামাইন বোর্ডের তৈরি ফার্নিচার বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে আমার স্টীলের তৈরি আসবাবপত্রও বিক্রি করি। সেখানে স্টিলের খাট, রকিং চেয়ার, রিভলভিং চেয়ার, সিঙ্গেল চেয়ার, খাট, আলমারী,ওভেন র্যাক, ট্রি টলিসহ সবই বিক্রি হয়।লোকজন এখন এসব ফার্নিচার বেশি কিনছেন।তবে শুধুমাত্র দোকান সচল রাখার জন্য কম দামে পণ্য বিক্রি করছি।

সাফল্য স্টীলের বিক্রয়কর্মী মো. নূহ জানান, স্টীলের ফার্নিচারের জায়গায় এখন মেলামাইন বোর্ড, মালয়েশিয়ান ওডের ফার্নিচার বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।লোকজন সেসব ফার্নিচার বেশি কিনছেন।


কোয়ালিটি ফার্নিচারের সত্ত্বাধিকারী ও রাজশাহী ফার্নিচার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হোসেন বলেন, স্টীলের ব্যবসা আগে ভালো ছিলো। এখন বেচাবিক্রি কম। যা বিক্রি হচ্ছে কর্মচারীদের ধরে রাখার জন্য অল্প লাভেই পণ্য ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আগে যেখানে একটি পণ্য বিক্রি করে দুই হাজার টাকা লাভ হতো এখন সেখানে ৫০০ টাকা লাভ হলেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
স্টীলের ফার্নিচারের পরিবর্তে মানুষজন এখন দেশীয় এমডিএফ ও মেলামােইন ফার্নিচার বেশি ব্যবহার করছেন বলে জানান তিনি।

বিসিক রাজশাহীর উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) জাফর বায়েজীদ জানান, রাজশাহী জেলায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারি প্রণোদনা হিসেবে ৯২ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। ক্রম্বান্বয়ে এটা আরো বাড়বে।

 

  • 31
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে