ইউরোপ-আমেরিকায় যাচ্ছে পাটের জুতা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০; সময়: ৭:২১ অপরাহ্ণ |
ইউরোপ-আমেরিকায় যাচ্ছে পাটের জুতা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মানুষ যতই সভ্যতার দিকে যাচ্ছে ততই পরিবেশ-প্রকৃতি বির্পয়ের দিকে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস তার সর্বশেষ আঘাত। তাই পরিবেশবান্ধব পৃথিবী গড়ার কারিগররা খুঁজে ফিরছে পরিবেশ-প্রকৃতিকে কিভাবে তার আপন গতিতে ফিরিয়ে দেয়া যায়।

মানবজীবনে অত্যাবশ্যকীয় পাটজাত পণ্য হতে পারে পরিবেশবান্ধব এক উপকরণ। পাটের নানামুখী ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশে চলছে নানা গবেষণা। তবে একের পর এক দেশের পাটকলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং এর সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা রয়েছে সংকটে। তবে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও পাটজাত সামগ্রীকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠান-কারখানার পাটজাত পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় ঠাঁয় করে নিচ্ছে। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। এখানকার পাটের জুতা বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাহিদা অর্জন করেন চলেছে। ২০১৭ সাল থেকে এখানকার উৎপাদিত পাটের জুতা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। কালীগঞ্জের এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেডের পরিবেশবান্ধব এ পাটের জুতা তৈরীতে স্থানীয় ৪ শতাধিক নারী যুক্ত রয়েছেন। এদের বেশীরভাগই গৃহিনী। বাড়ির কাজের পাশাপশি তারা হাতে হাতে এ জুতা তৈরী করে চলেছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে এসব পরিবার। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা আয় করায় সংসারে বেশ ভালভাবেই স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

ওবাইদুল হক রাসেল নামের এক যুবক এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বাড়ি জেলার কালীগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ আড়পাড়ায়। প্রতিষ্ঠানটি অবস্থান ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে।

দেশের সোনালী আঁশ খ্যাত এই পাট যখন নানাভাবে লোকসানের মুখে পড়তে চলছে তখন দেশিয় এ সম্পদ ধরে রাখতে অজপাড়া গাঁ বা মফস্বল অঞ্চলের এই রঘুনাথপুর গ্রামে পাট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পায়ে ব্যবহৃত জুতা। এলাকায় সাড়া ফেলেছে এই জুতার কারখানা। এখানে তৈরি হওয়া পাটের জুতা ফ্রান্স, প্যারিস, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ চীন-জাপানেও রপ্তানি করা হচ্ছে। খুব অল্প সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে হাতে তৈরি এই জুতার ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবাইদুল হক রাসেল জানান, পড়াশোনা শেষ করে তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলেন। ঢাকায় প্রথম গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২০১৬ সালের দিকে এলাকায় ফিরে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। তিনি দেশের পাট শিল্পকে বিশ্বের তুলে ধরার জন্য আগ্রহ দেখান। এরপর নিজ এলাকা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের রঘুনাথপুর বাজারের পাশে ৪৪ শতক জমি কেনেন এবং পাটের জুতা তৈরির কারখানায় নেমে পড়েন। এর জন্যে দেশ এবং বিদেশ থেকে কিছু মেশিন সংগ্রহ করে শুরু করে দেন মূল কাজ। তিনি বিভিন্ন পাটের কারখানা থেকে কাঁচামাল ক্রয় করে আনতে থাকেন, যা পাটের জুতা তৈরির প্রধান উপকরণ। আর পিছু হটতে হয়নি যুবক ওবাইদুল হক রাসেলকে। বর্তমানে তার কারখানায় উৎপাদিত পাটের জুতা ইউরোপ আমেরিকাসহ চীন এবং জাপানে রপ্তানি করা হচ্ছে।

তার কারখানায় ৮০ জন নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছে। এছাড়াও এলাকার ৪ শতাধিক নারী এখান থেকে কাজ নিয়ে গিয়ে বাড়িতে বসে কাজ করে। তাদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দেয়া হয়। প্রতি জোড়া জুতার জন্য নারী শ্রমিকরা বিল পেয়ে থাকেন। একেক জন নারী বাড়ির অন্য কাজের পাশাপাশি হাতে হাতে এই জুতা তৈরি করে মাসে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।

এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিডেটের কর্মকর্তারা জানান, এখানকার তৈরি জুতা ২ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত রেটে বিক্রি করেন। ইতিমধ্যে এই কারখানায় উৎপাদিত পাটের জুতা দিয়ে প্যারিসে কয়েকটি ফ্যাশন শো হয়েছে।

ওবাইদুল হক রাসেল আরো জানান, তিনি নিজেই এই জুতার মার্কেটিং করেন। আগে গার্মেন্টেসে কাজ করার সুবাদে নিজেই বায়ারদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রপ্তানি করেন। পাটের জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উন্নত বিশ্বে যোগ করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।

এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেডের ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, এই কারখানায় ৬টি ধাপে একটি জুতা তৈরি করা হয়। প্রথমে সোল্ড তৈরি হয় রাবার দিয়ে। জুতার বাকি অংশ তৈরি হয় পাট দিয়ে। আর এই কাজগুলো সম্পুর্ণ হাতের মাধ্যমে করা হয়। প্রতি মাসে তাদের কারখানা থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার জুতা রপ্তানি করা হচ্ছে। এই জুতার বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারের পরে ফেলে রাখলে এটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে