কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা, কমেনি মসলার দাম

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২০; সময়: ৪:০৪ অপরাহ্ণ |
কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা, কমেনি মসলার দাম

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করে গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমানোর কথা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা তাদের সেই কথা রাখেননি। ফলে বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে সব ধরনের মসলা কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

করোনাভাইরাসের কারণে নানা সমস্যা দেখিয়ে এপ্রিল মাস থেকে দফায় দফায় বিভিন্ন মসলার দাম বাড়াতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ১৩ মে গরম মসলার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর কথা দেয়।

এরপর একে একে ১১ দিন কেটে গেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাদের সেই কথা রাখেননি। ফলে রোজার আগেই দাম বেড় যাওয়া মসলা ঈদের আগের দিনও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এমনকি রোজার মাসে জিরা, এলাচ, শুকনা মরিচসহ বিভিন্ন মসলার দাম আরও বেড়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা মসলার দাম কমানোর ঘোষণা দেয়ার পর বাজারে কোনো পক্ষই নজরদারি করেনি। ফলে ব্যবসায়ীদের মসলার দাম কমানো ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাস্তবে তার সুফল পাওয়া যায়নি।

কেউ কেউ বলছেন, অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে কয়েক বছর ধরেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বেশি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সম্প্রতি অধিদফতরটির বেশি কয়েকজন কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সে কারণেই হয়তো কিছুদিন ধরে অধিদফতরটির অভিযান বন্ধ রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা তারই সুযোগ নিচ্ছে। ফলে অধিদফতরের অভিযানে যেসব পণ্যের দাম কমেছিল এখন আবার সেসব পণ্যের দাম বড়ে গেছে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সব ধরনের মসলাই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। একমাস আগে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ১০০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লবঙ্গের দাম বেড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা হয়েছে। এলাচের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ থেকে ৪২০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৩৬০০ থেকে ৩৮০০ টাকা।

এক মাস আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি রসুনের দাম বেড়ে হয়েছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। দেশি শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ২০০ টাকার মধ্যে। আমদানি করা হলুদের কেজি বেড়ে হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। আর ধনিয়ার কেজি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা।

এদিকে আদার দাম মাসের ব্যবধানে কমেছে। তবে বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে। মূলত ভোক্তা অধিদফতরের অভিযানের কারণে অস্বাভাবিক বাড়ার পর রোজায় আদার দাম কমেছিল। ৩৫০ টাকা কেজিতে উঠে যাওয়া আদা ভোক্তা অধিদফতরের অভিযানের পর দেড়শ টাকার নিচে নেমে আসে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে দাম বেড়ে আদার কেজি আবার দুইশ টাকা ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন বাজারে আদার কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মসলার দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া দারুচিনির ২ দশমিক ২৭ শতাংশ, এলাচ ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ধনে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, হলুদ ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, শুকনা মরিচ ২২ দশমিক ২২ শতাংশ, রসুন ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, পেঁয়াজের ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং আদার ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী জহির বলেন, ভোক্তা অধিফতরের অভিযানের পর সাড়ে তিনশ টাকার আদা ১৩০ টাকায় নেমে ছিল। ৬০ টাকার পেঁয়াজ ৪০ টাকায় নেমেছিল। আদার দাম আবার বাড়তে বাড়তে ২২০ টাকা কেজি হয়েছে। পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা হয়েছে। কিন্তু এখন ভোক্তা অধিদফতরের কোনো অভিযানের কথা শুনছি না। সংবাদ দেখেছি ভোক্তা অধিদফরের অনেকে করোনায় আক্রান্ত। এ কারণেই হয়তো তারা অভিযানে নেই। যার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা আবার সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পাইকারি মসলা ব্যবসায়ীরা ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মসলার দাম কমানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত পাইকারি বাজারে আমরা তার প্রতিফলন দেখিনি। উল্টো তাদের ঘোষণার পর জিরার দাম আরও বেড়েছে।

রামপুরা থেকে ঈদ উপলক্ষে মসলা কিনতে আসা মামুন বলেন, দাম কমার তথ্য খালি গণমাধ্যমেই শুনি। বাজারে তো কোনোকিছুর দাম কমতে দেখি না। ঈদের সময় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে এখন তার সবগুলোর দাম বেশি। আগে ভোক্তা অধিদফরের অভিযানের কথা শুনতাম, গত ১০ দিন ধরে তো কারও কোনো অভিযানের কথা শুনি না। অথচ এ সময় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সব থেকে বেশি অভিযান হওয়ার কথা ছিল।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে