‘মদপানের পর অসুস্থ হয় বান্ধবী, বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন মর্তুজা’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২; সময়: ৪:২৪ অপরাহ্ণ |
‘মদপানের পর অসুস্থ হয় বান্ধবী, বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন মর্তুজা’

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মোবাইল চার্জার ক্রয়ের জন্য আসামি মর্তুজা তার ভুক্তভোগী বান্ধবীকে নিয়ে বের হন। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী রেস্টুরেন্টে নিয়ে তাকে অতিরিক্ত মদপান করান।

অসুস্থ হলে মর্তুজা তার বান্ধবী তাফসীরের বাসায় নিয়ে যান ভুক্তভোগী বান্ধবীকে। যেখানে তারা একসঙ্গে রাত্রিযাপন করেন এবং মর্তুজা তার ভুক্তভোগী বান্ধবীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন।

রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় করা মামলার অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাজেদুল হক।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ২৭ জনকে সাক্ষী করে ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। তবে একজন মারা যাওয়ায় তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামিরা হলেন- মর্তুজা রায়হান চৌধুরী, মোসা. নুহাত আলম তাফসীর, ফারজানা জামান নেহা, শাফায়েত জামিল, রিয়াজ উদ্দিন ও নুরুল আমিন। এছাড়া মারা যাওয়ায় আসামি আরাফাত হোসাইনকে মামলার দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ আসামিরা প্রায় একসঙ্গে চলাফেরা করতেন-

আসামি মর্তুজা, তাফসীর এবং মামলার ভুক্তভোগী মোহাম্মদপুর ইউল্যাব ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতেন। এর আগে, আসামি আরাফাত ও ভুক্তভোগী তরুণী ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করতেন।

আসামি আরাফাত ও সাফায়েত ক্যানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখার সুবাধে দুজনের বন্ধুত্ব হয়। আসামি নেহা ও সাফায়েত তেজগাঁও মনিপুরী পাড়ায় একই ফ্ল্যাটে বসবাসের মাধ্যমে পরিচয় হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও মামলার আসামিরা একে অপরের পরিচিত এবং তারা প্রায় সময় একসাথে চলাফেরা করতেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় পার্টির আয়োজন-

২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি মোবাইল চার্জার ক্রয়ের জন্য আসামি মর্তুজা ভুক্তভোগী তরুণীকে মিরপুর মডেল থানাধীন বারেক মোল্লা মোড় থেকে স্কুটারে করে মোতালেব প্লাজায় নিয়ে যান।

সেখান থেকে তারা দুজন মিলে আসামি আরাফাতের বাসায় চলে যান। বাসায় নিচে স্কুটার রেখে উত্তরা বাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য উবারে উঠেন আরাফাতসহ তিনজন।

এ সময় আরাফাত মদের বিষয়ে আসামি রিয়াজের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।পরিকল্পনা মতে রেস্টুরেন্টে আসামি মর্তুজা, আরাফাত, নেহা ও সাফায়েত পার্টির আয়োজন করেন।সেখানে আসামি নুরুল আমিন মদ পৌঁছে দেন।

এরপর ভুক্তভোগী তরুণী, মর্তুজা ও আরাফাত রেস্টুরেন্টে বসে বিভিন্ন খাবার অর্ডার করেন। খাবারের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের সংগ্রহ করা দুই বোতল মদ ভুক্তভোগী তরুণীসহ অন্যরা পান করেন।

অতিরিক্ত মদপানের পর বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যান মর্তুজা-

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে আসামিদের দেওয়া অতিরিক্ত মদপান করার পর অস্বস্তি বোধ করলে সবাই মদপান বন্ধ করে দেয়। আসামি নেহা ও সাফায়েত রেস্টুরেন্টে থেকে চলে যায়।

এরপর ভুক্তভোগী তরুণী, মর্তুজা ও আরাফাত উবারে করে মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। গুলশানে আরাফাত নেমে যায়। এরপর মর্তুজা ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে তার বান্ধবী তাফসীরের বাসায় ওঠেন।

ঐ বাসায় মর্তুজা ও ভুক্তভোগী তরুণী একসঙ্গে রাত্রিযাপন করেন। এ সময় আসামি মর্তুজা ভুক্তভোগী তরুণীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। এরপর ভুক্তভোগী তরুণী একাধিকবার বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে তার বন্ধু আসিফকে ফোন দিয়ে অসুস্থতার কথা জানান। সকালে আসিফ তাকে দেখতে যায়। ঐদিন রাতে আবারো বেশি অসুস্থতার কথা আসিফকে জানান। এ সময় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভুক্তভোগী তরুণী মারা যান। ঐদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় নিহত তরুণীর বাবা বাদী হয়ে চার জনসহ অজ্ঞাত আরো একজনের নামে মামলা করেন।

যে ধারায় যে অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে-

আসামি মর্তুজা রায়হান চৌধুরী- ভুক্তভোগী তরুণীকে পার্টি সেন্টারে নিয়ে গিয়ে তার সংগৃহীত মদ অতিরিক্ত মাত্রায় পান করানো এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) তৎসহ পেনাল কোড আইনের ৩০৪ ধারায় অপরাধ সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

আসামি নুহাত আলম তাফসীর- বাসায় আসামি মর্তুজা ও ভুক্তভোগী তরুণীকে থাকার ব্যবস্থা এবং ধর্ষণের সুযোগ করে দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১)/৩০ ধারায় অপরাধ সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

আসামি আরাফাত, ফারজানা ও সাফায়েত-

আরাফাত (মৃত), নেহা এবং আসামি সাফায়েত পার্টির আযোজন করে তাদের দেওয়া মদ অতিরিক্ত মাত্রায় পান করানোর ফলে ভুক্তভোগী তরুণী মৃত্যু বরণ করায় পেনাল কোড আইনের ৩০৪ ধারায় অপরাধ সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

আসামি রিয়াজ ও নুরুল আমিন-

রিয়াজ ও নুরুল আমিন ক্ষতিকর মদ সরবরাহ ও বহন করে। এ সংগৃহীত মদপান করে ভুক্তভোগী মৃত্যুবরণ করায় পেনাল কোড আইনের ৩০৪ ধারায় অপরাধ সত্য বলে প্রমাণিত হয়।

আসামি আরাফাত- আরাফাত মৃত্যুবরণ করায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়নি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, মেয়ে মারা যাওয়ার পর এখনো স্বাভাবিক হতে পারিনি। আমার একটায় চাওয়া এখন, সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চায়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে