রাজারবাগ পীরের ও মুরিদের কেরামতিতে স্তম্ভিত হাইকোর্ট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১; সময়: ৯:১৬ অপরাহ্ণ |
রাজারবাগ পীরের ও মুরিদের কেরামতিতে স্তম্ভিত হাইকোর্ট

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : জায়গা জমি দখলের জন্য মুরিদ দিয়ে একের পর এক মামলা করার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, বাংলাদেশে পীর সাহেবের কান্ড দেখেন। জায়গা জমি দখলের জন্য পীর সাহেব কী করেছেন, দেখেন। সম্পত্তির জন্য তথাকথিত মুরিদ দিয়ে মামলা করেছেন। এটি কি কথা হলো? মুরিদের ঠিকানা দিয়ে মামলা করেছে। একটি মিথ্যা মামলা দিলেই তো মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়। সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এতোগুলো মামলা!

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজারবাগ পীরের মুরিদদের কাণ্ডকারখানা নিয়ে সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর এভাবে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ধর্ষণ, মারধর, চুরি, মানব পাচার এমন সব অভিযোগে দেশের ১৩টি জেলায় ৪৯টি মামলা করা হয়েছে রাজধানীর শান্তিবাগের বাসিন্দা একরামুল আহসানের বিরুদ্ধে।

এরমাঝে প্রায় দেড় হাজার দিন কারাভোগ করতে হয়েছে তাকে। গত ৭ জুন হাইকোর্টে রিট করেন ৫৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী একরামুল। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৪ জুন হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। হাইকোর্ট ওই সব মামলা করা ও এর পেছনে কারা আছেন, তা খুঁজে বের করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। একরামুলের বিরুদ্ধে মামলাকারী আফজাল হোসেনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ওয়াজি উল্লাহ।

সিআইডির প্রতিবেদনের বলা হয়েছে একরামুল আহসানের তিন ভাই ও এক বোন। ১৯৯৫ সালে তার বাবা আনোয়ারুল্লাহ মারা যান। রাজারবাগ দরবার শরিফের পেছনে ৩ শতাংশ জমির ওপর তিনতলা পৈতৃক বাড়ি তাদের। বাবার মৃত্যুর পর একরামুলের বড় ভাই আক্তর-ই-কামাল, মা কোমরের নেহার ও বোন ফাতেমা আক্তার পীর দিল্লুর রহমানের মুরিদ হন। কিন্তু রিট আবেদনকারী ও তার আরেক ভাই কামরুল আহসানকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেও ওই পীরের মুরিদ করা যায়নি। এর মধ্যে একরামুল আহসানের মা, ভাই ও বোনের কাছ থেকে তাদের পৈতৃক জমির অধিকাংশই পীরের দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করা হয়। আর একরামুল আহসান ও তার ভাইয়ের অংশটুকু পীর ও তার দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করার জন্য পীর দিল্লুর ও তার অনুসারীরা বিভিন্নভাবে চাপ দেন। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর না করায় পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের সঙ্গে একরামুল আহসানের শত্রুতার সৃষ্টি হয়। সে শত্রুতার কারণেই একরামুল আহসানের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় হয়রানিমূলক মামলা করেন পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীরা।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একরামুল আহসানের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় মোট ৪৯টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৩৫টি মামলায় আবেদনকারী আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অধিকাংশ মামলার নথিপত্র সংগ্রহের পর পর্যালোচনায় দেখা যায়, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে একাধিক মানব পাচার, নারী নির্যাতন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যাচেষ্টার মামলাসহ প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন ধর্তব্য ও ধর্তব্য ধারায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় মামলা করা হয়েছে।

প্রায় সবকটি মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীর কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

  • 127
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে