প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে নয়ছয়, চাকরি হারাতে পারেন অনেকেই

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২১; সময়: ১:০৯ অপরাহ্ণ |

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের ২২ জেলার ৩৬ উপজেলায় এমন অভিযোগের দায়ে উপসচিব ও ইউএনও পর্যায়ের ৫ কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও প্রকল্পের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের দাবি, কোনো ছাড় নয়; যে কোনো মূল্যে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। গৃহহীনে গৃহদানের অনন্য নজির দেশে স্থাপিত হয়েছে চলতি বছরের শুরু থেকে। মুজিবশতবর্ষে উপহার হিসেবে সমাজের ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য এক চিলতে জমিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণের এ উদ্যোগ বিশ্বে এটিই প্রথম।

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন মডেল হিসেবে নির্মিত এসব বাড়ি পেয়ে যারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন বছর ঘুরতে না ঘুরতে কিছু কিছু জায়গায় সেই স্বপ্ন আজ ফিকে হয়ে আসছে। ভূমিহীনদের সমাজের মূল স্রোতোধারায় নিয়ে আসতে যেসব নতুন গ্রাম তৈরি করা হলো। সেসব স্থাপনা এখন কোথাও পানির নিচে, আবার কোথাওবা ঘরের নিচ থেকে সরে যাচ্ছে মাটি। বগুড়ার সদর উপজেলার চাঁদমুহার এ ঘরের বাসিন্দারা ঠিক যতটা খুশি হয়েছিলেন নতুন বাড়ি পেয়ে। এখন ততটাই আক্ষেপ এখন নির্মাতাদের প্রতি।

এসব বাড়িতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়েও গণমাধ্যমকর্মীদের হেনস্তার শিকার হওয়ার ঘটনা খুব বেশি পুরনো নয়। ছিন্নমূল মানুষকে শান্তি দেওয়ার এই প্রকল্পে সারাদেশে ২২ জেলার ৩৬ উপজেলায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে যেসব কর্মকর্তা ছিলেন, বদলি হলেও তারাও আসছেন তদন্তের আওতায়।

প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এ প্রকল্পে দুর্নীতি ও গাফিলতির অভিযোগে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এবার ওএসডি করেছে সরকার। তারা হলেন: বরগুনার ইউএনও আসাদুজ্জামান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শফিকুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ সদরের এসিল্যান্ড শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবায়েত হায়াত শিপলু এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিয়াকত আলী শেখ আছেন এ তালিকায়।

খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত এ প্রকল্প নিয়ে কেন গাফিলতি হচ্ছে? কারা দেখাচ্ছে এ দুঃসাহস! এমন প্রশ্নের জবাবে নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হচ্ছে।
মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, দুভোর্গজনক হলেও বেশকিছু জায়গাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে গেছে। উপজেলা পর্যায়ে বেশকিছু কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যেটা থাকা দরকার সেটাকে পরীক্ষা না করে করেছে। তারা শৈথিল্য সেখানে দেখিয়েছে, আমরা কিন্তু সেটা দেখাব না।

তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ এটা আমাদের কাছে লজ্জার ব্যাপার যে প্রধানমন্ত্রী যেটাকে একেবারে ইবাদত হিসেবে নিয়েছেন সেই কাজটা করতে ব্যর্থ হই সেটা আমাদের ব্যর্থতা। আর আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। সে জন্য আমরা বলেছি এ ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স দেখাব। ছিন্নমূলদের আবাসন নিয়ে নয়ছয় করা কর্মকর্তারা শেষ পর্যন্ত চাকরি হারাতে পারেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্বস্ত করছে, ছাড় দেওয়া হবে না কাউকেই।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের-২-এর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রতিটি বিষয় আমরা তদন্ত করেছি। আর তদন্তের আলোকে যারা দায়ী হবেন সরকারি বিধি অনুসারে তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। দেশব্যাপী নির্মিত এসব ঘর নিয়ে কারও অভিযোগ থাকলে তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় কিংবা জেলা প্রশাসকের দপ্তর এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন এ প্রকল্পের পরিচালক।

পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, যে কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অভিযোগ গুরুতর হবে তার শাস্তি সেভাবেই হবে। তার প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হবে এরপরও যদি অভিযোগ আরও গুরুতর হয় তাহলে চাকরি থেকে বিদায় হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ৭০ হাজার এবং গত জুনে অর্ধলাখের বেশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পেয়েছেন প্রান্তিক জনপদের মানুষ।

  • 323
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে