যেসব আলোচিত মামলার রায় এ বছর হতে পারে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২১; সময়: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ |
যেসব আলোচিত মামলার রায় এ বছর হতে পারে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনার কারণে ২০২০ সালে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে অন‌্য বছরের তুলনায় কম। তবে এ বছরে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর অনেক মামলা নিষ্পতি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ জনের মামলা, আবরার হত্যা মামলা, ব্লগার অভিজিৎ ও ওয়াশিকুর রহমান হত্যা মামলা, প্রকাশক দীপন হত্যা, রমনায় মা-ছেলে হত্যা মামলা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, মামলাগুলোর বিচার যেভাবে চলছিল, তাতে গত বছরই বিচার শেষ হয়ে যেত। করোনার কারণে তা হয়নি। আশা করছি, এ বছর এসব মামলার বিচার শেষ হয়ে যাবে।

আবরার হত্যা: গত বছর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি ছিল আলোচিত। ওই ঘটনায় আবরারের বাবার দায়ের করা মামলায় ২৫ আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জ গঠন করেন আদালত। মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। মামলায় এখন পর্যন্ত ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৯, ২০ ও ২১ জানুয়ারি মামলাটি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে।

এস কে সিনহাসহ ১১ জনের মামলা: ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ জনের মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটিতে গত ১৩ আগস্ট আদালত ১১ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। ইতিমধ্যে মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে মামলাটি ১৩ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।

আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগারে, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে আছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা তদন্ত করে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ। এরপর গত ৫ জানুয়ারি দুদকের দেওয়া চার্জশিট আমলে নিয়ে এস কে সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

প্রকাশক দীপন হত্যা মামলা: ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দুপুরের পর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতী প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

ওই দিনই তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত ২৬ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। আগামী ১৭ জানুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য তারিখ ধার্য রয়েছে।

অভিজিৎ হত্যা: বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যা মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের প্রায় শেষের দিকে। মামলাটিতে প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত গোলদার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ৩৪ সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আর দু’একজনের সাক্ষ্য নিয়ে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম শেষ হবে। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করবেন।

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন।

অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে বই প্রকাশ ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সস্ত্রীক দেশে আসেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়। ওই দিন রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিএসসির সামনে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অভিজিৎ। গুরুতর আহত হন বন্যা। ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যা: গত বছরের ২৭ অক্টোবর মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য ধার্য ছিল। ওই দিন রায় থেকে মামলাটি উত্তোলন করে পুনরায় চার্জ গঠনের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রবিউল আলম মামলাটিতে পুনরায় চার্জ গঠনের আদেশ দেন। মামলাটিতে আসামিদের পক্ষে পুনরায় সাক্ষীদের জেরা চলছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি পরবর্তী জেরার তারিখ ধার্য রয়েছে।

আসামিরা হলেন, জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান এবং সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর। মাওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে তাহের ও সাইফুল ইসলাম ওরফে আকরাম পলাতক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীর দিপীকা মোড়ে ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পালানোর সময় দুই হামলাকারীকে আটক করে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় ওয়াশিকুর রহমানের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন।

কাকরাইলে মা-ছেলে হত্যা মামলা: এ বছর আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম রায় আসতে পারে এ মামলাটির।

২০১৭ সালের ১ নভেম্বর কাকরাইলের পাইওনিয়ার গলির ৭৯/১ নম্বর বাসার গৃহকর্তা আব্দুল করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার করিম (৪৬) ও তার ছেলে শাওনকে (১৯) হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনার পরদিন রাতে শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আব্দুল করিম, করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তা ও মুক্তার ভাই জনিসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ওই তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আলী হোসেন। গত ৩১ জানুয়ারি তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

গত ১ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ২২ সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। ১২ নভেম্বর তিন আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম আগামী ১৭ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করবেন। মামলার তিন আসামি কারাগারে আছেন।

তাবেলা সিজার হত্যা মামলা: ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। ওই দিন তার সহকর্মী আইসিসিওর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২২ জুন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমসহ (কাইয়ুম কমিশনার) সাত জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত চার্জশিটভুক্ত ৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, আদালতে সাক্ষী না আসায় এবং গত বছর করোনার কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে থাকায় বিচার কার্যক্রম কিছু দিন বন্ধ ছিল। আশা করছি, এ বছর মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যাবে।

মিজান-বাছিরের ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলা: পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলাটির বিচার শেষ হতে পারে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের মামলাটি বিচারাধীন। আগামী ২৬ জানুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত মোট ১৭ সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।

৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। গত ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন শেখ মো. ফানাফিল্লাহ। গত ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

ডা. সাবরিনাসহ ৮ জনের মামলা: গত বছর ডা. সাবরিনা চৌধুরীর গ্রেপ্তার ছিল বেশ আলোচিত। করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা করার মামলায় ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আট জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান বলেন, ‘মহামারি এ করোনার মধ্যেও আসামিদের এ ধরনের অপরাধ করেছে। তাদের সাজা হওয়া উচিত। মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আশা করি, এ বছরই মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যাবে।’

গত ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন একই আদালত। তার আগে ৫ আগস্ট এ মামলায় ঢাকা সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে