তানোরে যৌতুকের দাবিতে শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতন ও সন্তান নষ্টের মামলা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২০; সময়: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ |
তানোরে যৌতুকের দাবিতে শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নির্যাতন ও সন্তান নষ্টের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : তানোরে যৌতুকের দাবিতে এক মাদ্রাসার শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে গৃহবধুকে নির্যাতন করে গর্ভের সন্তার নষ্ট করার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রাজশাহী পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজশাহীর জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে (৪ই অক্টোবর) ওই গৃহবধু বাদি হয়ে স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ী, দেবর, ননদসহ ৫জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার বিবরণ, এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত ১৪ই অক্টোবর/২০১৮ইং তারিখে তানোর উপজেলার মোহর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে চাদপুর জেলার কোচুয়া উপজেলার চাংগীনি দাখিল মাদ্রাসার (কৃষি বিষয়ের) সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমানের সাথে তানোর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের আক্তার হোসেনের মেয়ে সুলতানা খাতুন তানিয়া (১৯)’র নগদ দেড় লাখ টাকা ও ৫ আনা অজনের সোনার আংটি যাহার মুল্য ২৫ হাজার টাকা যৌতুকের বিনীময়ে ২ লাখ টাকা দেন মোহরানায় পারিবারিক ভাবে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিয়ে হয়। তবে, ওইদিন বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়নি।

বিয়ের পর থেকেই আরো ২ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে ওই গৃহবধুকে তার স্বামী মিজানুর রহমান ও শ্বশুর শ্বাশুড়ীসহ পরিবারের লোকজন প্রায়দিনই শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এঅবস্থায় তাদের ১টি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তারপরও থেমে থাকেনি যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুর উপর তাদের শারীরিক নির্যাতন। গত ৬ই জুলাই/২০২০ তারিখে ওই গৃহবধুকে তার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা শারীরিক ভাবে নির্যাতন ও মারপিট করেন। এঘটনায় ওই গৃহবধু বাদি হয়ে স্বামীসহ ৫ জনকে আসামী করে তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এঘটনায় তানোর থানা পুলিশ গত ২৬ জুলাই/ ২০২০ইং তারিখে উভয় পক্ষের লোকজনকে থানায় ডেকে নিয়ে শালিস বৈঠকে উভয়ের সম্মতিতে ওই গৃহবধুর স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন আর নির্যাতন না করার শর্তে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করে গৃহবধুকে নিয়ে যান। পরে শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৮ জুলাই/২০২০ইং তারিখে কাজীর মাধ্যমে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। পরে আবারো ২১ শে আগষ্ট/২০২০ইং তারিখে যৌতুকের দাবিতে ওই গৃহবধুকে তার ম্বামী মিজানুর রহমান (৩২), শ্বশুর আব্দুষ সালাম (৫৫) শ্বাশুড়ী মমতাজ বেগম (৫০) ননদ সাবিনা খাতুন (১৯) ও দেবর রাসেল ইসলাম (২৫) একত্রিত হয়ে শারীরিক ভাবে মারপিট ও নির্যাতনের এক পর্যায়ে ৪মাসের অন্তস্বত্তা গৃহবধুর তলপেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়। খবর পেয়ে ওই গৃহবধুর পিতা আক্তার হোসেন তার মেয়েকে মুমুর্শ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়ার পর কতব্যরত চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ট করেন। পরে তাকে ওই গৃহবধুকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থা আশংখ্যা জনক হওয়ায় কয়েক ব্যাগ রক্ত ওই গৃহবধুর শরীরে দিয়ে সুস্থ্য করা হয়।

এঘটনার বিষয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর/২০২০ইং তারিখে তানোর থানায় মামলা করতে থানায় আসলে পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে ৪ই অক্টোবর ওই গৃহবধু বাদি হয়ে স্বামীসহ ৫জনকে আসামী করে রাজশাহীর জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল -১ আদালতে ২০০০সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের (সংশোধনী/০৩) এর ১১(গ)/৩০ দন্ডবিধি আইনের ৩২৩/৩১৩/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এবিষয়ে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান বলেন, থানায় যে কেউই যেকোন বিষয়েই মামলা করতে আসতে পারেন। কাউকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা সত্যনয়। তিনি বলেন, এঘরনের কোন ঘটনার বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

  • 9
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে