থানা হাজতে আসামির মৃত্যু: আরও একটি তদন্ত কমিটি, থানা পরিদর্শন

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২০; সময়: ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ |
থানা হাজতে আসামির মৃত্যু: আরও একটি তদন্ত কমিটি, থানা পরিদর্শন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বরগুনার আমতলীতে থানা হাজতে সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম এহসান উল্লাহকে প্রধান করে গত শনিবার আরও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি ওইদিন আমতলী থানা পরিদর্শন করেছে। তিন সদস্যের কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বরিশাল রেঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান ও বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহজাহান হোসেন। এদিকে, আমতলী থানার প্রত্যাহার করা ওসি আবুল বাশার ও সাময়িক বরখাস্ত ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জনের কথায় ঘটনার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম এহসান উল্লাহ বলেন, ডিআইজি স্যারের নির্দেশে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ডিআইজি স্যার কঠোর অবস্থানে আছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা যায়, শানু হাওলাদারকে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আমতলী পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। গত বৃহস্পতিবার সকাল আসামি শানুকে ওয়াশ রুমে নেয়া হয়। পরে এক ফাঁকে শানু হাওলাদার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে রশি প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বলে দাবি ওসি আবুল বাশারের। মনোরঞ্জন মিস্ত্রি মুঠোফোনে বলেন, বুধবার রাত ৩টা পর্যন্ত আমি সহকারী পুলিশ সুপার স্যার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম ও ওসি আবুল বাশার আসামি শানু হাওলাদারকে থানায় বসে জিজ্ঞাসাবাদ করি।

রাতে শানুকে মাছ দিয়ে ভাত খেতে দেই। রাত ৩টার সময় আমরা তিনজন চলে যাই। সকাল ৬টায় সংবাদ পাই শানু হাওলাদার গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি আসার আগে বাশার স্যার থানায় আসেন। আমরা জানালা দিয়ে দেখতে পাই শানু হাওলাদার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। তখন আমরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকি।

তিনি আরও বলেন, ওই রাতে ডিউটিতে ছিল এএসআই আরিফ। কনস্টেবল সাইদুল নিহত শানু হাওলাদারকে সকাল পৌনে ৬টায় থানা হাজত থেকে ওয়াশ রুমে নেয়। তাকে ওয়াশ রুমে রেখে সাইদুল জাতীয় পতাকা উড়াতে যায়। এ ফাঁকে শানু হাওলাদার ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে হয়তো বা আমার কক্ষে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। শানুর হাতে হাতকড়া নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাথরুমে নেয়ার সময় হাতকড়া পরানো হয় না।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার মুঠোফোনে বলেন, এ ঘটনার পরপরই এসপি স্যারকে জানাই। তার আসার আগেই আমরা দরজা ভেঙে ফেলি। শানু আত্মহত্যা করার রশি পেল কোথায় জানতে চাইলে আবুল বাশার বলেন, রশি বাথরুমে ছিল। অথবা আশপাশে ছিল। শানুর হাতে হাতকড়া কেন ছিল না? এমন প্রশ্নে আবুল বাশার বলেন, এক হাতে হাতকড়া ছিল। (মরদেহে হাতকড়া দেখা যায়নি) তদন্ত কর্মকর্তা ও (আমতলী-তালতলী সার্কেল) এএসপি সৈয়দ রবিউল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নিহত শানুর স্ত্রী ঝরনা বেগম বলেন, আমার স্বামীকে যখন গোসল করানো হয়। তখন তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিশের আঘাতে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও বলেন দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমি মামলা করব।

নিহত শানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন বলেন, তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন ওসি আবুল বাশার। ওসির দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার বাবাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে। আমার বাবার শরীরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। আমার বাবার নির্যাতনকারী ওসি আবুল বাশারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে