রাজশাহীতে আটজনকে বহিস্কারে মাদ্রাসা ছাড়ল আরও ৩০ ছাত্র

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২; সময়: ৪:৪০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে আটজনকে বহিস্কারে মাদ্রাসা ছাড়ল আরও ৩০ ছাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর পবায় এক মাদ্রাসার আটজন ছাত্রকে বহিস্কারের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার শাহমখদুম থানাধীন ডাঙ্গীপাড়ায় আল-জামি’আহ আস-সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

ছাত্র বহিস্কারের ঘটনার জেরে স্বেচ্ছায় আরো ৩০ জন শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ত্যাগ করেছে। এ নিয়ে মাদ্রাসায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাশাপাশি অভিভাবকদের মাঝেও হতাশা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারী ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণীসহ ও অন্যান্য ছাত্ররা মসজিদে জহুরের সালাত আদায়ে যায়। কিন্তু ওযুখানা পানি না থাকায় অত্র প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সোহাগ আলীকে দশম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুর রাকিব জেনারেটর চালু করতে বলে। ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সোহাগ অপারগতা প্রকাশ করলে আব্দুর রাকিব জেনারেটর চালু করে। এতে প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির আইসি বক্স পুড়ে যায় বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করে।

পরে এ নিয়ে ছাত্র এবং সোহাগ আলীর মধ্যে রাগারাগি মনোমালিন্য হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরবর্তীতে অত্র প্রতিষ্ঠান শিক্ষকবৃন্দ ঘটনাটি আমলে নিয়ে মীমাংসা করে দেয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ অভিযুক্ত আটজন শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারী) সকাল ৯টার দিকে দশম শ্রেণীর ছাত্র ৬(ছয়) জন ও নবম শ্রেণীর একজন এবং সানাবিয়া একাদশ শ্রেণি প্রথম বর্ষের ছাত্র একজন ছাত্রকে বহিস্কার করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। ছাত্রদের বহিষ্কার ও মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের আরও ৩০ (এিশ) জন ছাত্র অত্র স্বেচ্ছায় চলে যায়।

বহিস্কৃত ছাত্ররা হলো-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার বেনিচক গ্রামের আনছার আলীর ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র আকরাম হোসেন। রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার খোলাকান্ত গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র হুজাইফা, নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার বাংলা পড়া গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র আরিফুল ইসলাম।

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আইনুল ইসলামের ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র তানভীরুল ইসলাম। জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার কান্ত মারা গ্রামের সুজন মিয়া ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র ইউসুফ আলী। রাজশাহী জেলার পুঠিয়া থানার ছান্দা বাড়ি গ্রামের আব্দুল জলিল (হাসিব)’র ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র রাজিবুল ইসলাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার বাগানপাড়া গ্রামের আবদুর রাশেদ গ্রাম ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র উসমান গণি ও গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর থানার বোয়ালীদহ গ্রামের আজহার আলীর ছেলে নবম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুর রহিম।

এ ঘটনায় সচেতনমহল হতবাক হয়েছেন। তারা বলছেন ছাত্র বহিস্কার ও প্রতিষ্ঠান ত্যাগের ঘটনা অভিভাবকদের জানানো হয়নি। ওই ছাত্ররা নিজ নিজ বাড়িতে পৌছালো কিনা প্রতিষ্ঠান যা নিশ্চিত করতে পারেনি।

পথে বা কোন কারণে কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়িত্ব কে নিবে? সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠান দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে। প্রতিষ্ঠানের এই হঠকারি সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এছাড়াও ওই ছাত্রদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।

এ ব্যাপারে আল-জামি’আহ আস-সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহিদুল আলম বলেন, ছেলে শিক্ষার্থী রয়েছে দুই হাজার ও মেয়ে শিক্ষার্থী আটশো’। যার মধ্যে প্রায় ছয়শো’ শিক্ষার্থী এতিম ও দুঃস্থ।

তিনি বলেন, ওযুর জন্য জেনারেটর চালু করলে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা পুড়ে যায়। এরপরেও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মীমাংসা করা হয়। কিন্তু ছেলেরা মীমাংসা না মেনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে থাকে।

এমনকি শিক্ষকের সাথে মারমুখি আচরণ করে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে অভিযুক্ত আটজন শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কার করা হয়। এদের সাথে দশম শ্রেণির আরো ৩০ জন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় মাদ্রাসা ত্যাগ করে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে