তবু পদোন্নতির সুপারিশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২; সময়: ১:৫৭ অপরাহ্ণ |
তবু পদোন্নতির সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংগীত বিভাগের সভাপতি দীনবন্ধু পালের পিএইচডি থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠার পরও তা আমলে না নিয়ে তাঁর পদোন্নতির সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

একই বিভাগের শিক্ষক অসিত রায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য লিখিত আবেদন করেছিলেন; অথচ অভিযোগ আমলে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১০তম সিন্ডিকেট সভায় দীনবন্ধু পালকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক অসিত রায় বলেন, ‘ওই শিক্ষকের গবেষণাকর্মটি নিয়ে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটিও আপত্তি জানিয়েছে। কোন কোন জায়গায় তিনি চৌর্যবৃত্তি করেছেন, সেটি উল্লেখ করেই আমি অভিযোগ করেছিলাম। আমার অভিযোগ সঠিক কি না, তা তদন্ত করে দেখার সুযোগ ছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটি আমলেই নেওয়া হয়নি।’

অসিত রায় তাঁর অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘উচ্চাঙ্গসংগীতে তবলা বাদনের নান্দনিকতা’ শিরোনামে বিভাগের শিক্ষক কৃষ্ণপদ মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে দীনবন্ধু পাল এই পিএইচডি অভিসন্দর্ভ রচনা করেছেন। কৃষ্ণপদ নিজে তাঁর পিএইচডি থিসিস থেকে চৌর্যবৃত্তি করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে “বাংলার রাগসংগীত-দ্বিতীয় খণ্ড” গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এ ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর পদোন্নতি স্থগিতসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে ইউজিসিও তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।

এ ছাড়া কৃষ্ণপদ মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে প্রদীপ কুমার নন্দী ও তপন কুমার সরকার যে অভিসন্দর্ভ প্রদান করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাতেও অভিসন্দর্ভের বহু জায়গায় চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে নন্দীর থিসিসটি গ্রন্থাকারে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল।

কিন্তু তাতে ৫০-এর বেশি পৃষ্ঠায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সেই গ্রন্থও ইউজিসি থেকে বাতিল করা হয়। অর্থাৎ কৃষ্ণপদ মণ্ডল নিজে এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে যাঁরা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছেন।

এ রকম অন্তত ছয়টি জায়গায় দীনবন্ধু পালের গবেষণাকর্মের চৌর্যবৃত্তির কথা উল্লেখ করে অসিত রায় বলেন, দীনবন্ধু পাল তাঁর পিএইচডি থিসিসে নানা অসদুপায় অবলম্বন করেছেন। এই ধরনের কাজ শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মানকে ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করছে এমন নয়; বরং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অবনমিত করছে।’

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ দীনবন্ধু পালের পিএইচডি থিসিস সুষ্ঠুভাবে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে অভিযোগটি আমলে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১০তম সিন্ডিকেট সভায় দীনবন্ধু পালকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক অসিত রায় বলেন, পুরো গবেষণাটি ভালোভাবে দেখলে অন্তত ৫০ শতাংশ চৌর্যবৃত্তি পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, একটি অভিযোগ এসেছিল। তবে এটি আমলে নেওয়া হয়নি। দীনবন্ধু পালের ফাইল প্রসেস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সিন্ডিকেটে। অভিযোগ কেন আমলে নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে দীনবন্ধু পাল বলেন, ‘পিএইচডি হয় একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এর জন্য সেমিনার করতে হয়। এ ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলে অন্তত তিন শ অধ্যাপকের উপস্থিতিতে এটি পাস হয়। আমি ১১ বছর আগে এই পিএইচডি করেছি। অন্য পাঁচজন শিক্ষক যেভাবে পিএইচডি করে, আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সেভাবে পিএইচডি করেছি। এই পিএইচডির মাধ্যমে আমি সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক হয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সিন্ডিকেটে অভিযোগের বিষয়টি আসেনি। এখানে শুধু পদোন্নতিসংক্রান্ত ফাইল এসেছিল। সেটি প্রক্রিয়া করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে অভিযোগটি আলাদাভাবে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র- আজকের পত্রিকা

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে