শীতের সন্ধ্যায় রাবিতে জমজমাট পিঠার বাজার

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২১; সময়: ৫:৪০ অপরাহ্ণ |
শীতের সন্ধ্যায় রাবিতে জমজমাট পিঠার বাজার

অমর্ত্য রায় : গা শিরশিরে বাতাসের রূক্ষ্মতা আর গাছের পাতাদের মলিনভাব বলে দিচ্ছে, শীত এসে গেছে। হেমন্তের প্রান্তর শূণ্য করে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় জেঁকে বসা শীতের আমেজে প্রকৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে যায় পদ্মাপারের রাজশাহীতেও।

বিকালে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও পদ্মা ঘেঁষা এই শহরে তীব্র শীত জেঁকে বসে। ঠান্ডা বাড়ে, ঘণ হতে থাকে কুয়াশা। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আলমারির তাকে জমিয়ে রাখা পুরোনো কাপড় বের হয়েছে সেই কবে। তবে কি শুধু গরম কাপড়ই কি যথেষ্ট?

শীতের তীব্রতায় মানুষ খোঁজে গরম গরম মুখরোচক খাবার। তাই দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় উঠেছে শীতের সতেজ সবজি, নতুন ধানের চালে উঠছে পিঠা। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি এই পিঠার প্রচলন। বাদ যায় নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়ায় ছাত্রী হল এলাকায় এখন জমজমাট পিঠার বাজার।
রোকেয়া হলের সামনের বটতলায় সারি সারি বসেছে অস্থায়ী দোকান।

সন্ধ্যা হলেই লোকে লোকারণ্য রোকেয়া হলের বটতলা। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠা খেতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও মানুষ আসে। রীতিমত এ যেন পিঠা খাওয়ার উৎসব। খুব যে জাঁকজমকপূর্ণ তা অবশ্য নয়। পিঠা তৈরীর চাল, চুলা আর পাটি নিয়েই চলে ব্যবসা। সার বাধা মাটির চুলোগুলোতে এক মুহূর্তের বিরাম নেই। হরদম একটার পর একটা পিঠা উঠছে। পিঠার রকমেও বৈচিত্র্য। ভাঁপা, চিতুই, পুয়া, পুলি- আরও কত কি!

কথা হয় পিঠা খেতে আসা একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইবনে মার্জান বললেন, রাজশাহীতে গত কয়েকদিন ধরেই শীত জেঁকে বসেছে। এই রকম আবহাওয়ায় গুটিসুটি মেরে বন্ধুদের সাথে পিঠা আড্ডা অনেক বেশি উপভোগ্য।

মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নিলিমা জাহান লোচনের বলেন, নিয়মিত আসা হয় এখানে। হলের পাশেই হওয়াতে মূলত বেশি আসা হয়। তাছাড়া সারাদিন ক্লাস, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, তাই বিকেল বা সন্ধ্যায় একটু মানসিক প্রশান্তি পেতে বন্ধুরা মিলে চলে আসি। পিঠা খেতে খেতে জমজমাট আড্ডা হয়ে যায়।

শুধু যে পিঠাই খাওয়া হয় তা নয়। পিঠা খেতে এসে জমে ওঠে আড্ডা। গিটার, কাহন নিয়ে বসে গানের আসর। আইবিএ’র শিক্ষার্থী সন্দ্বীপ সিংহ বলেন, রোকেয়া হলের সামনের জায়গাটা খুব সুন্দর। চারদিকে আলো, সারিসারি পিঠার দোকান। সবাই এখানে আসে পিঠা খেতে খেতে আড্ডা দিতে। আমরা গানবাজনা করি। পিঠা খেতে আসা দর্শকরা বিনামূল্যে গাছতলার কনসার্টও উপভোগ করে।

রাত যত বাড়তে থাকে আড্ডার মাত্রাও পাল্লা বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে আবার পাতলাও হতে থাকে আড্ডা। একে একে ফিরে যেতে থাকে যে যার গন্তব্যে। রাত গভীরে শূণ্য হয়ে পড়ে থাকে রোকেয়া হলের বটতলা। এটা যেন আবার কারও কারও বুকে বাজায় বিদায়ের সুর। ক্যাম্পাস জীবন শেষ হতে চলা শিক্ষার্থীদের কাছে এগুলোওই স্মৃতির ভাণ্ডার। ক্যাম্পাস শেষ হয়ে গেলে এই স্মৃতিগুলোই সোনালী সুদিন হয়েই থেকে যায়।

আর কিছু দিন বাদে মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে আইইআরের শিক্ষার্থী ফাবাশির হক দেয়ালার। তিনি বলেন, আর মাত্র ক’টা দিন। এই পিঠার দোকানে চিরচেনা আড্ডা, গান আর বেশিদিন দেখতে পাবো না। এগুলো খুব মনে পড়বে। ভীষণ খারাপ লাগছে যে জীবনের সবচেয়ে সোনালী অধ্যায়টা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে