রাজশাহীতে সরকারি ৪০ মণ বই গোপনে বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১; সময়: ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে সরকারি ৪০ মণ বই গোপনে বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মাটিকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক মোসা. ইসমত আরা গোপনে বিক্রি করেছেন ৪০ মণ সরকারি বই। এর আগে গাছের ডাল বিক্রি ও স্কুলের জমি ইজারার লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। নির্দেশ থাকলেও বই বিক্রির বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে কোনো কিছু জানাননি তিনি।

রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, এসব বই সরকারি সম্পত্তি। অবণ্ঠিত বই অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক সরকারি বই বিক্রি করে দিয়ে থাকলে অপরাধ করেছেন। অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

জানা গেছে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাদিকুল ইসলাম গত ১৯ সেপ্টেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাড়াও রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দুলাল আলমের প্রশ্রয়ে মাটিকাটা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অবাধে দুনীর্তি করে চলেছেন। এলাকাবাসী অভিযোগ দিলেও এই কর্মকর্তা সমঝোতার মাধ্যমে সব অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে আসছেন। যদিও মো. দুলাল আলম এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকার করেন। অভিযোগে সাদিকুল ইসলাম বলেন, মাটিকাটা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মী শরিফুল ইসলাম স্কুল পরিষ্কার করার জন্য এলে তিনি দেখতে পান স্কুলের পিয়ন রাসেল ২০ বস্তা বই ভ্যানে তুলছেন। এ সময় তিনি পিয়ন রাসেলের কাছে বই কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান- হেড ম্যাডাম ভ্যান পাঠিয়েছেন বইয়ের বস্তাগুলো তুলে দিচ্ছেন। বইগুলো হেড ম্যাডাম বিক্রি করে দিয়েছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, একই দিন স্কুল সন্ধ্যা ৭টার পর পিয়ন রাসেল আবারও পাঁচটি ভ্যান নিয়ে স্কুলে ঢোকেন। এসব ভ্যানে বইয়ের বস্তা তোলার সময় স্কুলের নৈশপ্রহরী রবিউল ইসলাম ডিউটিতে আসেন। তিনি বই নিয়ে যেতে বাধা দিলে পিয়ন রাসেল তাকেও জানায় হেড ম্যাডাম বই বিক্রি করেছেন। তাকে বইয়ের বস্তাগুলো ভ্যানে তুলে দিতে বলেছেন। পিয়ন রাসেল দ্রুত বস্তাগুলো ভ্যানে তুলে নিয়ে অফিসকক্ষে তালা মেরে দ্রুত স্কুল ভবন ত্যাগ করেন।

এদিকে, এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বছর তিনেক আগে প্রধান শিক্ষিক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে মোসা. ইসমত আরা স্কুলের বিদ্যমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ দেখিয়ে বছর বছর দ্বিগুণ বই উত্তোলন করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে অর্ধেক বই বিতরণ করে বাকি বই গোপনে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করতে চেয়ে বলেন, প্রধান শিক্ষক ঐতিহ্যবাহী মাটিকাটা স্কুলের বিভিন্ন খাতের বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। স্কুলের জিনিসপত্র যখন যা হাতের কাছে পায় সেটিই তিনি বিক্রি করে টাকা নিজের পকেটে নেন।

শিক্ষক-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী তার এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবের ভয় দেখিয়ে থাকেন। অভিযোগকারীর মতে, আনুমানিক ৪০ মণ বই বিক্রি করে প্রায় ২৫ হাজার টাকা হাতিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা।

অবণ্ঠিত এসব বই গোপনে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারি নিয়মে বই বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের পর বই অবশিষ্ট থাকলে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে বইয়ের সংখ্যা জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা যথাযথ মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানাবেন। অবণ্ঠিত বই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।

অধিদপ্তর বিক্রির অনুমতি দিলে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে প্রধান করে নিলাম কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি উন্মুক্ত নিলামে প্রতিযোগিতামূলক দরে বই বিক্রি করতে পারবেন। সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক কোনোভাবেই নিজে বই বিক্রি করতে পারবেন না সেটি গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে। প্রমাণ হলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

গোপনে বই বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিকাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক মোসা. ইসমত আরা জানান, বই বিক্রির বিষয়ে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। মৌখিক অনুমতি নিয়ে বই বিক্রি করেছেন তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে