রাজশাহীতে বেতন পরিশোধে শিক্ষার্থীদের চাপ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২০; সময়: ১:১১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে বেতন পরিশোধে শিক্ষার্থীদের চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৮ মার্চ দেশের প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েক ধাপে বাড়িয়ে আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি আরেক দফা বাড়িয়ে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

কিন্তু সাত মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রাজশাহীতে বেতন পরিষদের চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। স্কুল থেকে অভিভাবকদের ফোন করে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পরিষদ করতে বলা হচ্ছে। বেতন পরিষদ না করা হলে অ্যাসাইনমেন্ট ও নতুন বছরের বই পাবে না বলে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পরীক্ষার বদলে শিক্ষার্থীদের নেয়া হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু এই অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার আগেই শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের চাপ দিচ্ছে রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে সন্তানের বেতনের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকেরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আগে বেতনের টাকা দিতে বলা হচ্ছে। তারপর অ্যাসাইনমেন্ট দিতে বলা হচ্ছে তাদের। প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার সময় টাকা পরিশোধ না থাকলে দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার আগে অবশ্যই বেতন পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। এ জন্য মুঠোফোনে দেয়া হচ্ছে ক্ষুদেবার্তাও। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধের জন্য মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছে। এই বার্তায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে বেতন পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানায়, মোবাইলে এসএমএস পেয়ে তাদের অভিভাবকেরা কষ্ট করে হলেও টাকা জমা দিয়েছেন। যারা প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার দিন টাকা পরিশোধ করতে পারেনি তাদের দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার আগেই টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

রাজশাহীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫৫৫ টাকা। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেতন ৬৫৫ টাকা। আর মানবিক বিভাগের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫৫৫ এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বেতন মাসে ৭৫৫ টাকা।

গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই সময়ের মধ্যেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের বেতন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে। ছুটির আগেও যাদের কয়েকমাস বকেয়া ছিল তাদের মোট বকেয়ার পরিমাণ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। অ্যাসাইনমেন্ট দেবার আগে অভিভাবকদের একসঙ্গে এতগুলো টাকা পরিশোধ চাপ হয়ে যাচ্ছে।

একজন অভিভাবক বলেন, আমরা অল্প বেতনে চাকরি করি। এত টাকা একসঙ্গে দিব কীভাবে? তাছাড়া করোনার সময় তো স্কুল বন্ধ ছিল। বন্ধ সময়ের বেতন কেন দিতে হবে?

তিনি বলেন, সরকার করোনার সংকটকালের সময়ের জন্য বিভিন্নখাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদেরও করোনাকালের বেতন মওকুফ করে দেয়ার দাবি জানান এই অভিভাবক।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। তাই আমাদের টাকা আদায় করতে হচ্ছে। শিক্ষকরা আত্মীকরণ হয়ে গেলে তখন আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত টাকা বেতন আদায়ের প্রয়োজন হবে না। আমরা আশা করছি দ্রুতই আত্মীকরণ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, টাকার জন্য এসএমএস দেয়া হয়েছে সেটা ঠিক। তবে আমরা অনুরোধ করেছি। টাকা না দিলে যে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করা হবে না ব্যাপারটি এ রকম নয়। তাছাড়া অনেক অভিভাবকই এসে তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, করোনায় চাকরি হারিয়েছেন। এ রকম ২০০ আবেদন আমরা পেয়েছি। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বেতন মওকুফ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার প্রতিটি স্কুলই এখন শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। শিক্ষকরা বলছেন, তারাও অসহায়। বেতন আদায় না করলে তাদের নিজেদেরই বেতন হবে না। তারা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তাদেরই কারও কারও তিন মাস বেতন হয়নি। তারাও বেকায়দায় আছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রজাশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. কামাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের করোনাকালের বেতনের কী হবে তা ঠিক করতে আমরা সভা করেছি। প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানিয়েছে। সেটাও জানানো হয়নি। সুতরাং স্কুলে বেতন আদায় করতে কোন বাধা নেই। বেতন আদায় করা হচ্ছে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে যতদূর সম্ভব ছাড় দেয়ার জন্য আমরা বলছি।

  • 29
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে