তানোর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে লুকোচুরি অভিযোগ

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২০; সময়: ৭:২৯ অপরাহ্ণ |
তানোর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে লুকোচুরি অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : প্রতিষ্ঠার ৩৫বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি তানোর সদরে একমাত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টিতে। ফলে, পুরোনো সেই মাটির ভাঙ্গা ঘরেই শ্রেনী কক্ষ সংকটের মধ্যে দিয়েই চলছে পাঠদান। শিক্ষা গ্রহনে ও শিক্ষার পরিবেশের দিক থেকে বৈশ্যম্যের স্বীকার হয়েছেন নারীরা।

তানোর বালিকা বিদ্যালয়ের দক্ষিন পার্শ্বে ১শ’ গজ দুরে তানোর আব্দুর করিম সরকার ডিগ্রী কলেজটিতে ৪তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানের পাশাপাশি সরকারী করণ করা হয়েছে। অপর দিকে তানোর বালিকা বিদ্যালয়েল উত্তর পার্শ্বে মাত্র ১শ’ গজ দুরেই তানোর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি মডেল করার পাশাপাশি ৪তলা বিশিষ্ট বভন নির্মান করা হলেও তানোর বালিকা বিদ্যালয়ে নির্মান করা হয়নি কোন ভবন।

শিক্ষা গ্রহনেও বৈশম্যের স্বীকার হয়ে অবহেলায় ধুকে ধুকে কোন রকমে টিকে আছে বালিকা বিদ্যালয়টি। দীর্ঘদিনেও বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। সেই সাথে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের পদটি শুন্য রয়েছে ৬বছর ধরে। এরই মধ্যে ৬বার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নিয়োগ দেয়া নিয়ে লকোচুরি চলছে।

এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা বলছেন, তানোর সদরের বালিকা বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়নি। অথচ কলেজ ও পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মান করা হয়েছে। এখানে নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈশ্যম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে।

আবেদনকারীরা বলছেন, প্রধান শিক্ষককের পদটি ৬বছর ধরে শুন্য রয়েছে। ৬বছরে ৬বার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও রহস্যজনক কারনে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার নামে চলছে লুকোচুরি। ফলে তানোর সদরের বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়ার আশায় ৬বছর ধরে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ১৫জন (আবেদনকারী) প্রার্থী।

আবেদনকারী শিক্ষকরা বলছেন, তানোর বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হচ্ছেটা কি ? তাও জানতে পারছিনা। কেনই বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো আর কেনই বা নিয়োগ দেয়া হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীনহ অভিভাবক, এলাকাবাসী ও আবেদনকারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

তানোর সদরের একমাত্র বালিকা বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিনেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। ফলে, শিক্ষার পরিবেশ ও গুনগত মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে ১৯৮৫ সালে তানোর গ্রামের মজির উদ্দিনের পুত্র মনির উদ্দিনের জমির উপর কয়েকটি মাটির ঘর তৈরি করে তানোর উপজেলার মধ্যে সর্ব প্রথম তানোর সদরে বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মনির উদ্দিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাঝ ওমর ফারুক চৌধুরী ডিও দিয়ে মনির উদ্দিনকে দেন এবং তানোর পৌর আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকারকে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি সভাপতির দায়িত্ব দেন।

এ অবস্থায় ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষিকা আবেদা খাতুন অবসর গ্রহন করেন। সেই থেকেই তানোর বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান তানোর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহন করেন। এই ভাবে গত ৬বছর ধরে সাইদুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রদীপ সরকার সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন কিন্তুু রহস্যজনক কারনে প্রদীপ সরকার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য ৪বার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কলেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেননি।

পরে গত ২বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরী ডিও দিয়ে প্রদীপ সরকারকে বাদ দিয়ে তারই চাচাতো ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ওয়াজির হাসান প্রতাব সরকারকে সভাপতির দায়িত্ব দেন।

প্রতাব সরকার সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য ২বার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন কিন্তুু তিনিও রহস্যজনক কারনে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেননি। সর্বশেষ গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর প্রতিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এই ভাবে ৬বছরে ৬বার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে কিন্তুু রহস্যজনক কারনে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রধান শিক্ষক হতে আগ্রহীর মধ্যে ১৪জন আবেদন করেছেন। কিন্তুু আবেদনকারীদের আবেদন জমা নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে আবেদনকারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোস বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আবেদনকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তানোর সদরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমানের কারনে থেমে আছে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ৩৫বছরে তানোর বালিকা বিদ্যালয়ের অবস্থা যা ছিলো তার চেয়েও এখন অবকাঠামো আরো খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

এনিয়ে তানোর বালিকা বিদ্যালয়ের সহকরী প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমাণের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তানোর বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ওয়াজির হাসান প্রতাব সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সভাপতি হওয়ার পর শিক্ষার গুনগত মান উণ্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করে বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পরই করোনার প্রভাবের কারনে নিয়োগ পক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন আবারো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এব্যাপারে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নির্ভর করছে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির উপর। তবে, তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে