সঙ্গীন অবস্থায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা, খোঁজ রাখেনি কেউ

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২০; সময়: ১১:২২ অপরাহ্ণ |
সঙ্গীন অবস্থায় কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা, খোঁজ রাখেনি কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোহনপুর : বৈশ্বিক মহামারী লাখ লাখ প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীসহ বাংলাদেশের মানুষের অবস্থান ঘরে ঘরে। করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিস্কার না হওয়ায় এ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ ঘরে থাকা আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ১৮ মার্চ থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর নিজ নিজ গৃহে অবস্থানের জন্য বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের আগে আর খোলা যাবেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যেগে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে লেখাপড়া করছে প্রায় ১ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে প্রায় ছয় লাখের মত। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে এ স্কুলগুলো ।

সংগঠনটি বলছে, সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এসব কিন্ডারগার্টেনের ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় করোনা সংক্রমণ রোধে বাড়ীতে অবরুদ্ধ ও দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে সারা দেশের ন্যায় কর্মহীন হয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর মোহনপুরে গড়ে উঠা প্রায় ৩৯ টি স্কুলের কর্মরত বেসরকারী কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রায় ২৫২ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার । কিন্ডারগার্টেন যেহেতু দেশের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের দায়িত্ব নিয়ে সরকারের ভার লাঘব করছে, তাই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানো সরকারের কর্তব্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ ক’জন শিক্ষক এই প্রতিবেদককে জানান, মোহনপুরসহ সারাদেশে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মাসিক বেতন বড়জোর ৪/৫ হাজার টাকা এই বেতনে তাদের সংসার চলে না, বাড়তি আয় হিসেবে তারা কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান। করোনা ভাইরাসের কারণে অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগও বন্ধ।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের ওপরই এসব কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। শিক্ষকরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সঙ্গীন অবস্থায় থাকলেও সম্মানের খাতিরে তারা ত্রাণের জন্য দাঁড়াতেও পারেন না। কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকরা কখনো সরকারের কাছে বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করেননি। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা মাসিক বেতন দেয়নি। যার দরুণ বেশীরভাগ স্কুলের শিক্ষকরা বেতন পায়নি। এর ফলে অনেকে মানবেতরভাবে জীবন-যাপন করে দিন পার করছেন। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে তাদের সব বন্ধ। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে বেতন না পাওয়ায় শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছেন না।

ধুরইল আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান আফসার আলী জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলি যদি আরো দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে তবে না খেয়ে মরা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকবেনা। এ জন্য ঘরে অবরুদ্ধ কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকরা তাদের জীবন জীবকিার জন্য রাজশাহী জেলা পরিষদে আবেদন করার পর ত্রাণ দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুমতি দিলেও এ পর্যন্ত মেলেনি কোন ত্রাণ সহায়তা। সে জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিনিধিদের তাদের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান শিক্ষকরা ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পূর্ণবাসন বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি, মোহনপুর ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ বলেন, করোনার কারণে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছে বাড়ী ভাড়া ও বিদ্যুত বিল। প্রতিমাসে স্কুল চালানোর জন্য বাড়ী ভাড়া দিতে হয় ১৬ হাজার টাকা ও বিদ্যুত বিল ২ হাজার টাকা। আমার মত একই দশা সকল স্কুলের। সে কারণে তিনি শিক্ষার্থী অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন,আপনাদের সন্তান আমাদের শিক্ষার্থী । তাদের লেখাপড়ার সকল দায়িত্ব আমাদের। আমরা শিক্ষকদের মাসিক বেতন পরিশোধ করতে পারছিনা। তারা অনেক বিপদের মধ্যে রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি আপনাদের বেতন পরিশোধ করতে কষ্ট হবে তবুও মানবিক দিক বিবেচনা করে এই দুঃসময়ে শিক্ষার্থীদের বেতনভাতা পরিশোধ করুন।

তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকার যদি রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসনের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তাদের দেখভাল করতে পারে তাহলে নিজ দেশের নাগরিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াবেন বলেও আমাদের বিশ্বাস। এ ছাড়াও কিন্ডারগার্টেন স্কুল যদি না থাকত, তাহলে সরকারকে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো। সেদিক থেকে আমরা সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে দিয়েছি। বর্তমান পেক্ষাপটে এ প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে আমাদের জন্য প্রণোদনা বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে