গুরুদাসপুরে শত শত বিঘা ফসলী জমির উর্বর মাটি পুড়ছে ইটভাটায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২; সময়: ৩:৩৯ অপরাহ্ণ |
গুরুদাসপুরে শত শত বিঘা ফসলী জমির উর্বর মাটি পুড়ছে ইটভাটায়

এস,এম ইসাহক আলী রাজু, গুরুদাসপুর : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে আবাদি জমি। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদন। মাটির উপরের স্তর( টপ সয়েল) কেটে নেওয়ার ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের প্রলোভন দেখিযে দেদারছে ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এরপরও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুদাসপর উপজেলার মশিন্দা,খুবজীপুর,বিয়াঘাট,নাজিরপুর,ধারাবারিষা ও চাপিলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে ট্রাক দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমির মালিকরা না বুঝেই তা ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমতে শুরু করলেও স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সতর্ক করা হচ্ছে না।

গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দ, খুবজীপুর ও নাজিরপুর ইউপিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় শনিবার (২২ জানুয়ারী) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আলহাজ্ব আব্দুল কাদের প্রামানিকের মেসার্স হাজী কাদের ব্রীকস, আব্দুল হাকিমের মেসার্স হাকিম ব্রীকস, আব্দুল আল মামুনের মামুন ব্রীকস , ফরিদ মোল্লার মেসার্স মোল্লা সুপার ব্রীকস, আব্দুর রহিম মোল্লার মোল্লা ব্রীকস ও নাজিরপুরের চন্দ্রপুর মোঃ রানার রানা ব্রীকস নামে অনেক গুলো ইটভাটায় প্রকাশ্যে মাটি ক্রয় করছেন। এত শুধু ফসলী জমিই নষ্ট হচ্ছে তা নয় রাস্তা ঘাট,পরিবেশসহ ধ্বংস হচ্ছে প্রাণীকুলও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা এলাকার কয়েক জন সচেতন মানুষ জানান, গুরুদাসপুরে ফসলী জমিতে এখন প্রায় ৬ থেকে ৭টি ইটভাটা রয়েছে। আর এসব ভাটার ইট তৈরি করার জন্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় প্রশাসনকে তারা ম্যানেজ করেই ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিচ্ছেন বলে তারা জানান।

এ ব্যাপারে ইটভাটা মালিক আল মামুন ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী ইটভাটা করেছেন, তাদের বন্ধ করতে বলেন তারপরই আমি বন্ধ করব।

উপজেলার মশিন্দা গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন জানান, বেশি টাকা পাওয়ার কারণে তার দুই বিঘা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। জমিতে আগের মতো আর ফসল হবে কি-না তা তিনি জানেন না।

গুরুদাসপুর বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের প্রভাষক কৃষিবিদ জহুরুল হক সরকার বলেন, জমির মূল উর্বরতা শক্তি থাকে মাটির উপরিভাগে। আর এ মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিলে তার উর্বরতা শক্তি সঞ্চয় করতে সময় লাগে ১০-১২ বছর। গুরুদাসপুরের মতো সারাদেশেই যেভাবে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৮-১০ বছর পর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

নাটোর জেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল ফারুক জানান, সরকারি নিয়ম না মেনেই অনেক ইটভাটা তৈরি হয়েছে। যেগুলোকে আমরা নিরুৎসাহিত করি। তাছাড়া এমনিতেই নানা কারনে ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে। জমির শেণি পরিবর্তনেরও কোন সুযোগও নেই। উপজেলা পর্যায়ে যে কর্মকর্তরা নিয়োজিত রয়েছেন তাদের কঠোর ভাবে এসব বিষয়ে নজরদারী করতে বলা হয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে