মান্দায় সরিষা খেতে চাষ হচ্ছে ‘গলিত সোনা’ মধু

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২১; সময়: ৪:১৯ অপরাহ্ণ |
মান্দায় সরিষা খেতে চাষ হচ্ছে ‘গলিত সোনা’ মধু

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁর মান্দায় প্রতিবছরের মত এবারেও সরিষা খেতের পাশে ভ্রাম্যমান মৌচাষের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন মৌচাষিরা। মৌচাষিরা বলছেন, সরিষার খেতে চাষ হওয়া মধু হচ্ছে ‘গলিত সোনা’। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিশোধানাগার স্থাপন করলে উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। অর্জিত হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতে বেকারদের নতুন কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হবে।

মৌচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরিষার ফুলে নভেম্বর মাস থেকে মধু সংগ্রহ শুরু হয়। এছাড়া বরই, কালাইজিরা, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমেও মধু সংগ্রহ হয়ে থাকে। এভাবে বছরের অন্তত ৮ মাস তাদের কার্যক্রম চালু থাকে। অবশিষ্ট সময় বাড়ির খামারে তৈরি খাবার দিয়ে মৌমাছিকে লালন পালন করতে হয়।

রাজশাহী মোহনপুর উপজেলা থেকে আসা মৌচাষী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘৮ বছর ধরে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করছি। এ মৌসুমে মল্লিকপুর গ্রামের পুকুরপাড়ে ১২০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছি। এরই মধ্যে একবার মধু সংগ্রহ হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় এবারে সংগ্রহের পরিমাণ বাড়বে।’

এ মৌচাষী আরও বলেন, সরিষা ফুল থেকে আহরিত মধু তুলনামুলক কম দামে বিক্রি করতে হয়। সরিষা ফুলের মধু ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা মণ, লিচু ফুলের মধু ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়ে থাকে। সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হয় কালাইজিরা ফুলের মধু।

মৌচাষী রুম্মন আহমেদ বলেন, মধু সংগ্রহ বেশ কষ্টসাধ্য। বেশীরভাগ সময় সঠিক মূল্য পাওয়া যায় না। পানির দরে বিক্রি করতে হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নত প্রযুক্তির পরিশোধানাগার স্থাপন করা হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। তখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে এটি বিদেশে রপ্তানী করা যাবে। চাহিদা বাড়লে বাজারে দামও বাড়বে। অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হবে। এজন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, গত বছর ভারতীয় ডাবর আমলা কোম্পানী এদেশ থেকে মধু নিয়েছে। চলতি বছরেও মধু নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাঁরা। এছাড়া দেশীয় অল-ওয়েল কোম্পানীও মধু সংগ্রহ করছে। কিন্তু বাজারে আমদানির তুলনায় এ কোম্পানীর সংগ্রহ অনেক কম।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, আমন ধান কেটে নেওয়ার পর বোরো রোপণের আগ পর্যন্ত জমিগুলো পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এসব জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে আগাম জাতের সরিষার চাষ করছেন কৃষকেরা। কৃষি অফিসের সঠিক পরামর্শ ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা এ আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ ফসলের চাষ। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে।

শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক সেফাতুল্লাহ প্রামানিক বলেন, আগে গাছে-গাছে লাগানো মৌ-চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হত। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ফসলি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করায় বড় মৌমাছিগুলো আর দেখা যায় না। বর্তমানে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহ করছেন। এজন্য ফুলে কীটনাশক প্রয়োগ না করতে কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

মান্দা উপজেলা কৃষি র্কমর্কতা শায়লা শারমিন বলেন, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন।

কৃষি দপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, মৌমাছি উপকারী পতঙ্গ। সরিষার খেতে মৌমাছির আনাগোনা হলে পরাগায়নের পাশাপাশি ফলনও বাড়বে। উপজেলার ৬ জন বীজ উদ্যোক্তাকে অত্যাধুনিক ৬টি মৌ-বক্স দেওয়া হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে