নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আনন্দ প্রকাশ তৃতীয় লিঙ্গের নজরুলের

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১; সময়: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ |
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আনন্দ প্রকাশ তৃতীয় লিঙ্গের নজরুলের

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতু। তৃতীয় লিঙ্গের কেউ এই প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান হলেন। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে এ পর্যন্ত আসার সংগ্রামটা সহজ ছিল না তার। এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় নজরুল ইসলাম ঋতুর সঙ্গে।

রোববার (২৮ নভেম্বর) ৬ নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে নজরুল ইসলাম ঋতু পেয়েছেন ৯ হাজার ৫৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম ছানা পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১৭ ভোট। ইউনিয়নে মোট ভোটার ছিল ১৯ হাজার ৬০০। নৌকার বিপক্ষে তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোট ভোটের অর্ধেক ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ভীষণ আনন্দিত। এলাকার মানুষ আমাকে বড় সম্মান দিয়েছে। এজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের সবার সমর্থন না পেলে এ বিজয় হতো না। আমি দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছি। এটা আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা।

তিনি আরও বলেন, আমি তো জনগণের মধ্যে আছি। জনগণ চেয়েছে নির্বাচন করি। জনগণ চেয়েছে তাই জয়ী হয়েছি। তবে প্রথমে এলেই তো কেউ জায়গা দিয়ে দেয় না। মেহনত করতে হয়েছে। তাদের জন্য কিছু করতে হয়েছে। তারপরই না তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছে।

তিনি বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘নজরুল হিজড়া’ লেখা আছে। আমি নিজেও নির্বাচনী ফরমে হিজড়া পরিচয় লিখেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় এই স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা একটা বড় অর্জন। আমার এ পর্যায়ে আসার ক্ষেত্রে এই স্বীকৃতির একটি বড় ভূমিকা আছে।

তিনি যোগ করে বলেন, জনগণ ভালোবেসেছে বলেই আমি এ জায়গায় এসেছি। আমি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছি। এই এলাকাতেই আমার জন্ম। এখানেই বেড়ে ওঠা। এরপর ঢাকায় চলে গেছি। কিন্তু যখন এলাকায় আসতাম, তখন মানুষের জন্য কিছু না কিছু করার চেষ্টা করতাম। মেয়েদের বিয়ের সময় সহায়তা দিয়েছি, কেউ অসুস্থ হলে পাশে দাঁড়িয়েছি। এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা দিয়েছি। রাস্তাঘাট করে আমি মানুষের পাশে থেকেছি। তখনই মানুষ ভেবেছে, এসব যখন করছে, তখন তো প্রতিনিধি হলে আরও কিছু করতে পারবে।

চেয়ারম্যান বা নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করেছি। হিজড়া না হলে এমন করে হয়তো কেউ বলতে পারত না। কিন্তু এটা তো মৌখিক হেনস্তা। এর পাশাপাশি আমার অনেক মানুষকে রীতিমতো মারপিট করা হয়েছে। আমার আত্মীয়স্বজনকে মারা হয়েছে।

মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সেবা করতে চাই। অত রাজনীতি বুঝি না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিনীতভাবে বলতে চাই, উনি আমাদের স্বীকৃতি দিতে পেরেছেন। তার সুনজর প্রত্যাশা করি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে