জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের দায়িত্বে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২১; সময়: ৮:৩০ অপরাহ্ণ |
জয়পুরহাট পুলিশ সুপারের দায়িত্বে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী

এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট : জয়পুরহাট জেলাকে ইভটিজিং, ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন মুক্ত করতে চায় এক ঘণ্টার জন্য দায়িত্ব পাওয়া প্রতীকী পুলিশ সুপার (এসপি) জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও এনসিটিএফ এর শিশু সাংবাদিক নুসরাত মাহিরা।

এক ঘণ্টার প্রতীকী পুলিশ সুপারের (এসপি) দায়িত্ব পালনকালে জয়পুরহাট জেলা শহরে যৌন হয়রানি, কিশোর গ্যাং ও বখাটেদের ঘোরাফেরার ৭ স্থানের নাম বলেছেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত মাহিরা। স্থানগুলো হলো, শহরের হাজী মাদরাসা রোড, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ও পেছনের অলিগলি, জয়পুরহাট সদর থানা স্কুলের দুটি গলি, নতুনহাট, রেল স্টেশনের সামনে, বদরউদ্দিন রোড, বকুল ছাত্রীনিবাসের সামনে।

এ সময় সে বিদ্যালয় খোলার পর শিশুদের অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানিয়ে দেয়। সে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে এসব বন্ধে সুপারিশও তুলে ধরেন। মাহিরার এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের ঘোষণাও দিয়েছে জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা ।

ন্যাশনাল চিল্ড্রেন্স টাস্ক ফোর্সে (এনসিটিএফ) এর আয়োজন গার্লস টেক ওভার অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ পর্যন্ত জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রতীকী পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন নুসরাত মাহিরা। নুসরাত মাহিরা জয়পুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাডেমি নগর এলাকার বাসিন্দা ও জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পাশাপাশি সে এনসিটিএঢের শিশু সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছে।

মাহিরার বাবা হেলাল উদ্দীন মৃধা অগ্রণী ব্যাংক জয়পুরহাট প্রধান শাখার সিনিয়র অফিসার এবং মা রওশন আখতার গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাহিরা সবার ছোট।

প্রতীকী দায়িত্ব নিয়েই জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলাকে নারীবান্ধব করতে ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানান নুসরাত মাহিরা। প্রতীকী দায়িত্ব নিয়ে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন নুসরাত। +

তিনি বলেন, জয়পুরহাট জেলায় নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়ে চলছে। নারী ও কিশোরী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে আমি একজন মেয়ে হিসেবে এদেশের লাখ লাখ কিশোরীর মত স্বপ্ন দেখি একটি সুস্থ, নিরাপদ পরিবেশ এবং সুন্দর সমাজের। একটি ধর্ষণমুক্ত, ইভটিজিংমুক্ত নারী ও শিশুবান্ধব জয়পুরহাট জেলা গড়ে তুলতে সকলকে এগিয়ে আশার আহ্বান জানান।

নুসরাত মাহিরা বলেন, এক বছরে অসচেতনতা বা দরিদ্রতা দেখিয়ে জয়পুরহাটে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এনসিটিএফের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিদ্যালয় খোলার পর শিশুদের অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনসহ বিভিন্ন এনজিও কয়েক বছর তৎপর ছিলো তবুও রোধ করা সম্ভব হয়নি। বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ এবং ইভটিজিংমুক্ত নারী ও শিশুবান্ধব জয়পুরহাট জেলা গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় সে।

নুসরাত মাহিরা আরও বলেন, দেশব্যাপী যৌন হয়রানি নারী-শিশুদের ভোগান্তির একটি অন্যতম কারণ। জয়পুরহাটের প্রতিটি অলিগলি, রাস্তাঘাটে, বিদ্যালয়ের পথগুলোতে যৌন হয়রানির প্রভাব রয়েই গেছে। যৌন হয়রানিতে দেখা গেছে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে থেকে এলাকার কিশোর গ্যাং জড়িত। বখাটে ছেলেরাও ঘুরাফেরা করে।

জয়পুরহাট জেলাকে নারী ও শিশুবান্ধব জেলায় রূপান্তরিত করে ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ সব ধরনের অপরাধমুক্ত করতে আমি প্রস্তাবনা দিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে জয়পুরহাট জেলা অপরাধমুক্ত ও শান্তিপ্রিয় জেলা হিসেবে রোল মডেলে পরিণত হবে।

পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, নারীদের বাদ দিয়ে কোন সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীদের নিয়েই আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, অসীম ক্ষমতার অধিকারী নারী। আল্লাহতালা শুধু নারীকে দিয়েছেন। যে সব রাষ্ট্র যারা নারীর ক্ষমতায়ন দিয়েছে তারাই এগিয়ে গেছে। তাই নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন না দিলে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবেনা।

এসময় তিনি আরো বলেন, সমাজ ব্যবস্থাকে ভালো রাখতে হলে পরিবারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা রাখতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জন করতে পারলেই আমরা টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে হবে বলে তিনি জানান।

পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা এনসিটিএফ’র সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খিস্ট্রান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে বসবাস করছি। এখানে আমরা কেউ মনে করি না যে আমার পাশের বাড়ির লোকটা হিন্দু না মুসলমান। আমরা মনে করি তিনি আমার প্রতিবেশী। এ রকম পরিবেশে আমরা বেড়ে উঠেছি। এইটাকে তোমাদের জাগ্রত করতে হবে।

তিনি বলেন, নারীদের বাদ দিয়ে কোনো সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীদের নিয়েই আমাদের সমাজ এগিয়ে নিতে হবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অসীম ক্ষমতার অধিকারী নারী। যেসব রাষ্ট্র নারীর ক্ষমতায়ন দিয়েছে তারাই এগিয়ে গেছে।

এনসিটিএফ এর জেলা উপদেষ্টা তিতাস মোস্তফা সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম (অপরাধ ও প্রশাসন), জেলা ভলান্টিয়ার তৃষা রানী, সালেহুর রহমান সজীব, জেলা কমিটির সভাপতি কেএম সাজিন, সম্পাদক লেফতাকুল মদিনা, শিশু গবেষক ফারহানা আফরিন সাথী প্রমুখ।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এর ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসূচির আওতায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্সের (এনসিটিএফ) সহযোগিতায় নারী নেতৃত্ব উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীর আওতায় এই দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে একজন কিশোরী, কন্যা শিশু অথবা যুব নারীকে নেতৃত্ব প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করা হয় যাতে করে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং নিজের স্বপ্ন পূরণে সে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। ন্যাশনাল চিলড্রেন স্টাস্ক ফোর্স জাতীয় পর্যায়ে একটি শিশু সংগঠন। শিশুদের দ্বারাই এ সংগঠন পঠিত ও পরিচালিত।

এক ঘন্টার পুলিশ সুপার নুসরাত মাহিরা দায়িত্ব শেষে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা। এর আগে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ ভূঞ্চা নুসরাত মাহিরার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে