ভিক্ষার টাহা মুই থুচো বাপু, ওরা মোক ১০০ ডা টাহা দিলো না

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২১; সময়: ২:৪৭ অপরাহ্ণ |
ভিক্ষার টাহা মুই থুচো বাপু, ওরা মোক ১০০ ডা টাহা দিলো না

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ভিক্ষার জমানো টাহা মুই এনজুত থু চুনো বাপো মোর অসুখ হচিলো ১০০ ডা টাহা চাচুনো ওরা মোক দায়নি’ বলতে বলতে আবেগে কেঁদে ফেলেন ভিখারী আলেজান বিবি। ভিক্ষা করে আলেজান বিবি ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় এ্যাসোপ নামে এজিও কোলা শাখায় জমা রেখেছিল।

নওগাঁর বদলগাছীতে দিনের পর দিন অফিসে ঘুরেও সদস্যরা তাদের জমানো সঞ্চয়ের টাকা ফেতর না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে এনজিও (এ্যাসোপ) এর খামার আক্কেলপুর শাখার বিরুদ্ধে। উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের রনাহার গ্রামে প্রধান কার্যালয় দেখিয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথারিটি থেকে সনদ নিয়ে শুরু হয় এনজিওটির পথচলা।

সনদ নং (০১৭১৭-০০৫২৯-০০১৭৪) এ্যাসোপ এনজিও’র পরিধি বাড়াতে কোলা ইউনিয়নের খামার আক্কেলপুর শাখা অফিস চালু হয়। এই শাখা চালুর হওয়ার পর থেকে এলাকার প্রায় ২০০ জন গ্রাহক তাদের টাকা ঐ এনজিওতে সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখেন।

ক্ষুদ্র ঋণ ও সঞ্চয় আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটি কোলা খামার আক্কেলপুর শাখার প্রায় ২০০ জন অসহায় ও দরিদ্র গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় হিসেবে টাকা জমা নেয়। গ্রাহকদের সঞ্চয়ের জমানো টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করার চেষ্টায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করে আসছে গত কয়েক বছর ধরে।

অসহায় ও দরিদ্র গ্রাহকদের টাকা আজ দেব, কাল দেব বলে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করছেন কোলা শাখার কর্মী শাহিনুর ইসলাম। কোলা ইউনিয়নের খামার আক্কেলপুর শাখা অফিসে গত ৪ অক্টোবর গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিলেন দ্বায়ীত্বরত কর্মী শাহিনুর ইসলাম। কিন্তু ওই দিন গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না দিয়ে অফিসের জরুরী কাগজপত্র সুকৌশলে নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় উত্তেজিত গ্রাহকরা অফিসের দ্বায়ীত্বরত কর্মী শাহিনুর ইসলামসহ এনজিওটির বিভিন্ন শাখার পাঁচজনকে নজরবন্দি করে রাখেন।

পরে এ্যাসোপ এর পরিচালক এসে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে চলতি মাসের ২৪ তারিখে গ্রাহকের পাওনা সঞ্চয়ের টাকা ফেতর দেওয়ার অঙ্গীকার করে নজরবন্দি থাকা কর্মীদের নিয়ে যান। ভুক্তভোগী গ্রাহক ভিক্ষুক আলেজান বিবি বলেন, ‘দুনিয়ায় আমার ছেলে পুত কেও নাই, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চায়ে চুন্তে খাবার খাই। আর মাসে মাসে বিধবা ভাতার টাকা তুলে ২০ হাজার টাকা জড়ো করে এই এনজিওতে থুচুনো । কিন্তু মোর অসুখ হচিল বাপো, ঔষধ খাওয়ার জন্য ১০০ টাকা চাচনু ওরা মোক কোন টাকা দিলো না। এখন অফিসের ঘর বন্ধ থাকে, কেও আসে না।

ভান্ডারপুর গ্রামের মাধবী রাণী বলেন, ‘ছয়বছর পূর্বে মাসে ২০০ টাকা করে ডিপিএস করেছিলাম মাষ্টার ডিপিএসের টাকা বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসতো । ৪ হাজার টাকা সঞ্চয় রেখে ছিলাম। আমার সঞ্চয়ের টাকা ছয় বছর পরে ফেরত দিতে চেয়ে হিসাব বহিঃ নিয়ে আসেন এ্যাসোপের কর্মী। এরপরে আমাকে অঅর পাশ বহিঃ বা জমাকৃত টাকা কোন টায় ফেরত দেননি। দিনের পর দিন অফিসে ঘুরেও ডিপিএসের টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

উজ্জল পাহান ও সুবাস পাহান বলেন, ৬ বছর থেকে আমাদের বিভিন্নভাবে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা মুখে বলে কিন্তু আমাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তাদের অফিস বন্ধ থাকে এবং কিস্তি টাকা আদায়কারী মাস্টার পর্যন্ত নেই।
তাঁরা বিভিন্ন তাল বাহানা দিয়ে সঞ্চয় এর পাশ বহিঃ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় অনেক সদস্যের কাছে পাশ বহিও নাই। যেসব গ্রাহকরা টাকার নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে তাদের টাকা না দেওয়ার ভীতিও দেখান অফিসের কর্মী।

এ্যাসোপ এনজিও কোলা শাখার মাঠ কর্মী শাহিনুর ইসলাম, অন্য শাখার আব্দুর রশিদ, জাহাঙ্গীর এবং নয়ন বলেন, করোনাকালে আমরাই ঠিকমত বেতন পাই না, তাই অফিসে আসা হয় না। আর প্রধান অফিস থেকে সঞ্চয় বা ডিপিএস এর টাকা গ্রাহককে ফেরত না দিলে আমরা কোথা থেকে ফেরত দিবো।

খামার আক্কেলপুরের ইউপি সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, এনজিও (এ্যাসোপ) এর পরিচালকের সাথে তার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করলে তারা বিভিন্নভাবে সময় নিয়েছে। পরে তাদের সাথে সময় অনুসারে কথা বললে বারবার শুধু সময় নিয়েছে। তবে কোনো সুরাহা করেন না এ্যাসোপ এনজিওর পরিচালক।

এনজিও পরিচালক আগামী ২৪ অক্টোবর সকল গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে। এ্যাসোপ এনজিওর পরিচালক তানভীর হোসেন বলেন, আমাদের কোনো রেকর্ড নেই, গ্রাহকের টাকা অত্মসাৎ করার। প্রতিটি গ্রাহকের টাকা ফেরত দিবো কিন্তু একটু সমস্যা হয়েছে। মহামারী করোনা ভাইরাস এর করণে এই সমস্যা হয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে সবার টাকা ফেরত দেওয়া হবে ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে