জয়পুরহাটে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাপাচা দিতে সালিশ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১; সময়: ৫:০৮ অপরাহ্ণ |
জয়পুরহাটে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাপাচা দিতে সালিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের কালাইয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া ১১ বছরের এক শিশুকে নিজ বাড়ীতে বাবা-মার অনুপস্থিতিতে সিএনজি চালক জহুরুল ইসলাম (৩৮) নামে এক যুবক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের মাস্তর চান্দারপাড়া এ ঘটনা গ্রামে ঘটেছে। অভিযুক্ত যুবক একই গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে।

মিমাংসা করে দেওয়ার নামে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে শুক্রবার রাতে শালিশের আয়োজন করেন গ্রাম্য মাতবররা। রাতের গ্রাম্য শালিশে ওই শিশুর পরিবারের লোকজন উপস্থিত হলেও অনুপস্থিত ছিল ধর্ষক। অবশেষে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুরুত্বর আহত শিশুকে প্রথমে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান পরিবারের লোকজন। রাতেই চিকিৎসকরা ওই শিশুকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রাতেই ধর্ষিত শিশুর বাবা বাদী হয়ে জহুরুল ইসলামকে আসামী করে কালাই থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

শিশুর বাবা, প্রতিবেশী ও মামলার বিবরণ সুত্রে জানা যায়, ধর্ষিত শিশুর বাবা একজন টিনের ঘর ছাউনির মিস্ত্রি। শুক্রবার সকাল থেকে নিজ গ্রামে অন্যর বাড়ীতে টিনের ঘর ছাউনির কাজ করছিলেন তিনি। দুপুরের দিকে মা তার শিশুকে বাড়ীতে রেখে স্বামীর কাছে যায়। বাবা-মা বাড়ীতে নেই এমন সুযোগ বুঝে সিএনজি চালক জহুরুল ইসলাম বাড়ীতে প্রবেশ করে ওই শিশুর মুখে কাপড় বেধেঁ জোরপূর্বক ধর্ষণ করে চলে যায়। এর কিছুক্ষন পর বাবা ও মা বাড়ীতে এসে দেখতে পায় তাদের মেয়ে ঘরের ভিতর মেঝেতে পড়ে আছে। পরে ওই শিশুর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনে বাবা-মা গ্রামের লোকজনদের জানান।

ওই গ্রামের মাতবর ছফির উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, ছুমির ফকির , আলতাব হোসেন সরদার, আমিরুল খান ও ছাত্তার খান মিলে ওই শিশুর বাবা ও মাকে ওই ঘটনা জানাজানি করতে নিষেধ করেন। তারা সবাই মিলে রাতে শালিশ করে এ ঘটনা মিমাংসা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর শিশুর বাবা স্থানীয় একটি ফার্মেসী থেকে কিছু ঔষুধ এনে ওই শিশুকে খেয়ে দেন। দিন শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই গ্রামে শালিশে বসেন তারা। ওই শালিশে শিশুর পরিবারের লোকজন উপস্থিত হলেও অনুপস্থিত ছিল ধর্ষক। ওই ঘটনার পর থেকে ধর্ষক পলাতক রয়েছে। শালিশ না হওয়ায় ওই রাতেই পরিবারের লোকজন গুরুত্বর আহত শিশুকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে চিকিৎসকরা ওই শিশুকে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ নুর আলম বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই শিশুকে রাতেই জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

মামলার বাদী ও ধর্ষিত শিশুর বাবা বলেন, কাজ শেষে দুপুরে বাড়ীতে এসে দেখি আমার মেয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। মেয়ে কাছ থেকে শুনে আমি গ্রামের লোকজনদের এ ঘটনা জানাই। মাতবররা সহ গ্রামের অনেকেই বলে, এ ঘটনা বেশী জানাজানি করা যাবেনা। রাতে বসে দুই পক্ষকে নিয়ে মিমাংসা করে দেওয়া হবে। থানা ও হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। শালিশ না হওয়াই বাধ্য হয়ে রাতেই হাসপাতালে আমার মেয়েকে নিয়ে আসলাম। জহুরুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি।

প্রতিবেশী আলমগীর হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে মাতবররা সহ গ্রামের আরও বেশকিছু লোকজন মিলে শালিশে বসেছিল কিন্তু জহুরুল না আসায় শালিশ হয়নি। পরে আমিসহ ওই শিশুর বাবা-মা ও গ্রামের অন্য লোকজন মিলে হাসপাতালে গিয়ে ওই শিশুকে ভর্তি করেছি। ঘটনার পরই শিশুর বাবা ও মা থানায় যেত কিন্তু মাতবরদের নিষেধের কারনে তখন যায়নি। অথচ রাতে ঠিকই আসতে হলো। যে কোন কাজে মাতবররা নাক গলায়।

ওই গ্রামের মাতবর হেলাল উদ্দিন বলেন, ওই ঘটনা মিমাংসার জন্য রাতে আমরা সবাই মিলে শালিশে বসেছিলাম। ধর্ষক জহুরুল শালিশে না আসায় শালিশ হয়নি। পরে আমরা সবাই মিলে ওই শিশুর পরিবারের লোকজনকে থানার আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি। তাই ওরা রাতেই থানাতে গিয়ে মামলা করেছে। ধর্ষক জহুরুল এই ঘটনার আগেও ৪/৫ বার একই কাজ করেছে। ওর শাস্তি হওয়া দরকার।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে একজনকে আসামী করে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে। আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার রাতে গ্রামের মাতবররা ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিমাংসার জন্য শালিশে বসেছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি শালিশে বসে থাকে তাহলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে