বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১; সময়: ৪:৫৩ অপরাহ্ণ |
বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দীগ্রাম : কালের আবর্তনে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখি ও তার বাসা। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন বিলীন হতে চলেছে।

অথচ আজ থেকে এক যুগ আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা। চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি বিশ্বজোড়া। এক সময় বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে গ্রাম বাংলার মানুষের সকালবেলা ঘুম ভাঙতো। বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে এখন আর তা হয় না।

শিল্পী এ পাখিকে নিয়ে কবি রজনী কান্ত সেন তার স্বাধীনতার সুখ কবিতায় লিখেছেন, বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক তবু ভাই, পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।

কবির এই চিরচেনা বাবুই পাখির অস্তিত আজ হুমকির মুখে। বসবাস উপযোগী পরিবেশ না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে শৈল্পিক বাসার কারিগর বাবুই পাখি।

উপজেলার কৈডালা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী বলেন, এখন আর গ্রাম-গঞ্জেও আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। আষাঢ় মাস আসতে না আসতে কিচিরমিচির শব্দে মাঠে প্রান্তরে উড়ে উড়ে খড়কুটো সংগ্রহ করে তালগাছে বাসা বাঁধে বাবুই পাখি। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত।

কথিত আছে বাবুই পাখি নিজের বাসা উজ্বল রাখতে রাতে জোনাকি পোকা ধরে এনে বাসায় রাখে। এরা প্রতিটি তালগাছে প্রায় ৫০ থেকে ১০০টি বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরি করতে এদের সময় লাগে ১০-১২ দিন। তালপাতা, খড়, কুটা, ঝাউ, কাশবন ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। প্রবল ঝড় ও বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাবুই পাখির শক্তবুননের এ বাসা টেনেও ছেড়া কঠিন।

পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে পিঠে তামাটে কালো দাগ হয়। আউশ ও আমন ক্ষেতের ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম।

প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। প্রেমিক বাবুই যত প্রেমই দেখাক না কেন, প্রেমিকা ডিম দেওয়ার সাথে সাথেই প্রেমিক বাবুই আবার খুঁজতে থাকে নতুন সঙ্গী। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই ক্ষেত থেকে দুধ ধান সংগ্রহ করে।

বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, বিভিন্ন প্রজাতির পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু ও রেনু খেয়ে জীবনধারণ করে।

নন্দীগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি পাখি প্রেমিক নাজমুল হুদা সরকার জানায়, অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বাবুই পাখি বিচরণ ধরে রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অরুনাংশু মন্ডল বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরূপ প্রভাবেই এরা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো হঠাৎ করেই চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা।

  • 2
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে