মান্দায় একঘরে জরিমানা দেওয়া গৃহবধূ শেফালিকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১; সময়: ৬:২২ অপরাহ্ণ |
মান্দায় একঘরে জরিমানা দেওয়া গৃহবধূ শেফালিকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁর মান্দায় একঘরে করে রাখা তিন হিন্দু পরিবারের সঙ্গে কথা বলায় সমাজপতিদের রায়ে জরিমানা দেওয়া সেই গৃহবধূ শেফালি বিবিকে (৪৫) অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আহত ওই গৃহবধূ এখন মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিজ বাড়ির সামনের ট্যাপের পানি ব্যবহারের সময় তাঁকে মুখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তিন যুবক।

মঙ্গলবার রাতে উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ভাতহন্ডা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গৃহবধূ শেফালি বিবি ওই গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী। একঘরে করে রাখা গ্রামের তিন হিন্দু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলায় দু’দফায় এ দম্পতিকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসনের চাপে গত মঙ্গলবার জরিমানার সেই টাকা ফেরত দেন সমাজপতিরা। এরপর থেকে শেফালিকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন সমাজপতিদের ক্যাডার বাহিনী।

গৃহবধূ শেফালি বিবির মা সুরুতজান বেওয়া জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম রেজু, এনামুল হকসহ কয়েকজন যুবক মেয়ে শেফালিকে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। তাঁদের হুমকির কারণে মেয়ে শেফালিকে সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ডেকে নেই। এসব বিষয় নিয়ে মেয়ের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে রাত ১২টার দিকে মেয়ে শেফালি রাগ করে নিজ বাড়ি চলে যান।

ভিকটিম শেফালি বিবি বলেন, মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে রাতে বাড়ি চলে আসি। পরে বাড়ি সংলগ্ন ট্যাপের পানিতে হাত-পা ধোওয়ার সময় হঠাৎ করে পেছন থেকে গ্রামের সায়েদ, রেজুসহ কয়েকজন আমাকে ঝাঁপটে ধরে। তাঁরা আমার মুখ চেপে ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলে তাঁরা পালিয়ে যান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র প্রামানিকের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক আত্মীয়তা ছিল। তাঁদের ৩ মাস ধরে একঘরে করে রেখেছিলেন গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সমাজপতিরা। একঘরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলায় দুইবারে আমার পরিবারকে ৭ হাজার জরিমানা দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে গত রোববার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভাতহন্ডা গ্রামে একঘরে তিন পরিবার ও গ্রামের সমাজপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন স্থানীয় প্রশাসন। বৈঠকে গ্রামের ৯ ব্যক্তির নিকট থেকে নেওয়া জরিমানার টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন ইউএনও আবু বাক্কার সিদ্দিক।

ভুক্তভোগী নারী আরো বলেন, গত মঙ্গলবার ইউএনও আবারো ভাতহন্ডা গ্রাম পরিদর্শনে আসেন। এ সময় আমার নিকট থেকে নেওয়া জরিমানার টাকা ফেরত পেতে ইউএনওর নিকট অভিযোগ করি। তিনি তাৎক্ষনিক টাকা ফেরত দিতে সমাজপতিদের নির্দেশ দেন। এরপর আমার নিকট থেকে নেওয়া জরিমানার টাকা ফেরত দেন সমাজপতিরা। ইউএনও চলে যাওয়ার পর আমাকে হুমকি দিতে শুরু করেন সমাজপতিরদের ক্যাডার বাহিনী।

গৃহবধূর স্বামী খোরশেদ আলম অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতির দায়ে বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার ইন্ধনে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন গ্রামের উড়তি বয়সের যুবকরা। তাঁর নেতৃত্বেই তিন হিন্দু পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ভাতহন্ডা গ্রামের রামকৃষ্ণ প্রামানিক, শ্রীকৃষ্ণ প্রামানিক ও গনেশ চন্দ্র প্রামানিকের পরিবারকে ৩ মাস ধরে একঘরে করে রেখেছেন গ্রামের সমাজপতিরা। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

 

  • 173
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে