মান্দায় এখনো একঘরে তিন পরিবার

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১; সময়: ৭:৩০ অপরাহ্ণ |
মান্দায় এখনো একঘরে তিন পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁর মান্দায় একঘরে করে রাখা সনাতন ধর্মাবলম্বী তিন পরিবার এখনো মুক্ত হতে পারেননি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমাজপতিদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হয়নি কোনো আইনি ব্যবস্থা। অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান, তিন পরিবারকে একঘরে রাখার বিষয়টি নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করেন স্থানীয় প্রশাসন। বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিক, মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার, ভুক্তভোগী পরিবার, ভাতহন্ডা গ্রামের সমাজপতিরাসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, সমঝোতা বৈঠকে উভয় পক্ষের জবানবন্দি গ্রহন করা হয়। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের তিন পরিবারকে একঘরে করে রাখা ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলায় ৯ জনের নিকট জরিমানা আদায়ের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে গ্রামবাসির কয়েকজনের নিকট থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে সমাজপতিদের নির্দেশ দেন ইউএনও।

এছাড়া বৈঠকে সমাজপতিরা দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাদেরও ক্ষমা করে দেওয়া হয় । বৈঠকে উভয়পক্ষ আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও বসবাস করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন সমাজপতিরা।

স্থানীয়রা দাবি করেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরেও দোষি সমাজপতিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সত্য একটি ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় প্রশাসন।

ভুক্তভোগী গনেশ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, সমঝোতা বৈঠক থেকে ফিরে গ্রামের সমাজপতিরা মর্ডাণ ক্লাবের ঘরে গোপন বৈঠক করেন। তবে ওই বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি। সোমবার সকালে মেঝভাই রামকৃষ্ণ প্রামানিক বাজারে যাওয়ার জন্য গ্রামের আব্দুস সাত্তারের চার্জারভ্যানে উঠার চেষ্টা করলে তাঁকে নেওয়া হয়নি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে সোমবার সকালে প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ কথা বলেননি। বিষয়গুলো থানার ওসিকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেননি তিনি। শুধু দেখা হচ্ছে বলে শান্তনার বাণী শোনাচ্ছেন।

তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বলেন, বৈঠকে তিন পরিবারকে একঘরে ও গ্রামবাসির নিকট থেকে জরিমানা আদায়ের কথা স্বীকার করেন ভাতহন্ডা গ্রামের সমাজপতিরা। এ নিয়ে দোষ স্বীকার করায় ইউএনও এবং ওসি উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেন। এরপরও ওই তিন পরিবারের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা না হলে সেটা দুঃখজনক।

এ প্রসঙ্গে ইউএনও আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, ভাতহন্ডা গ্রামের বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘন। গ্রামবাসির এ কাজটি করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষনিকভাবে সোমবার সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে মৌখিকভাবে নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে বিষয়টি গুরুতর মনে হয়নি। তাই স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দিয়েছি।

উল্লেখ্য নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ভাতহন্ডা গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী তিন পরিবারকে ৩ মাস ধরে একঘরে করে রেখেছেন গ্রামের সমাজপতিরা। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কথিত সমঝোতা করে দেন স্থানীয় প্রশাসন।

 

  • 302
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে